হিল ভয়েস, ২৭ মে ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধানাবলীর ভিত্তিতে আর্মস পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন)-সহ সকল আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর ভূমিকা নির্ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়।
গত বুধবার (২৬ মে) রাঙ্গামাটিতে এপিবিএন আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধনকালে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারের কাছে এই আহ্বান জানান।
রাজা দেবাশীষ রায় তাঁর বক্তব্যের শুরুতে এপিবিএন আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের ও স্থানীয় জনগণের কল্যানে যাতে ভূমিকা রাখতে পারে তার সফলতা কামনা করেন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধানাবলীকে ভিত্তি হিসেবে রেখে এপিবিএনসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর ভূমিকা রাখা হয় তার জন্য প্রধান অতিথির মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন রাখেন রাজা দেবাশীষ রায়।
এ সময় তিনি তিনটি বিষয়ে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ও সংশ্লিষ্ট সদয় দৃষ্টির কামনা করেন। সেগুলো হলো- প্রথমত, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যাতে প্রথাগত আইনসহ স্থানীয় মানুষের অধিকারকে রক্ষা করে, সম্মান করে সেই কার্যক্রম গৃহীত হয় তার আহ্বান জানান।
দ্বিতীয়ত, এপিবিএনসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর যাতে প্রথাগত নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ জনগণকে সাথে ও পাশে রেখে তাদের সম্মানজনকভাবে সম্পর্ক ভিত্তি স্থাপন করে তাদের ভূমিকা রাখেন তার প্রতিও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, “এ অঞ্চলে ৫০০-এর অধিক নারী কার্বারীসহ হাজার চারেক কার্বারী রয়েছে, ৩৮০ জনের মত মৌজা হেডম্যান রয়েছে, এবং তিনটা সার্কেল চীফ রয়েছে। আমি অবশ্যই আমাদের প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে যথাযথ সহযোগিতার পূর্ণাঙ্গ আশ্বাস দিচ্ছি এবং আমি আবেদন জানাবো যাতে তাদের সাথে যথাযথ সম্পর্ক রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই ভূমিকা রাখবেন।”
তৃতীয়ত, বিভিন্ন জাতিসত্তাদের সদস্যসহ পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক সাব-ইন্সপেক্টর থেকে কনষ্টেবলসহ পুলিশ নিয়োগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের যথাযথ ভূমিকা ও কার্যাবলী অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য তিনি সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তথাকথিত রাজনৈতিক দলের অকাম্য ভূমিকার অবসান করার ক্ষেত্রে মাননীয় শেখ হাসিনা যথাযথ ডাক দিলে এবং নাগরিকদের ও জাতিসত্তাদের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখলে অত্রাঞ্চলে যথাযথ শান্তি পুন:প্রতিষ্ঠা না হয়ে থাকতে পারে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে (১৯৯৭ সালের) ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির স্বাক্ষরের পূর্বে বছরের পর বছর ধরে জঙ্গলে থাকা তৎকালীন জনসংহতি সমিতির সদস্যরা এগিয়ে এসেছেন তাঁর প্রতি আস্থা রেখে। তখন যদি সম্ভব হতে পারে এখন না হওয়ার আমি কোন কারণ দেখি না।”
তিনি আরো বলেন, কেবল সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাকালে পার্বত্য সমস্যার সমাধান হবে না। এ সমস্যার সমাধান না হলে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়, সারা দেশের জন্য স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য ভাল হতে পারে না।
পরিশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, “প্রধানমন্ত্রীর ডাক দেবেন, আমরা সকলে সামিল হবো, যাতে এই অঞ্চলে আবারো আমরা শান্তি-শৃঙ্খলা পুন:প্রতিষ্ঠা করতে পারি, বাংলাদেশের পতাকাতলে এখানকার অঞ্চলের মানুষদের যাতে যথাযথ উন্নতি করতে পারি।”