হিল ভয়েস, ১৩ মার্চ ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নে সেনাবাহিনী কর্তৃক ৪ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে অমানুষিক মারধর এবং মারধরের পর একজনকে অস্ত্র, গুলি, দা ইত্যাদি গুঁজে দিয়ে রাঙ্গামাটি কতোয়ালি থানায় সোপর্দ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে আবার সেনাবাহিনী ও সেনামদদপুষ্ট বিভিন্ন অনলাইন প্রচার মাধ্যম কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তি জনসংহতি সমিতির মূল দলের সন্ত্রাসী বলে অপপ্রচার করার অভিযোগ পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আজ রবিবার (১৩ মার্চ ২০২২) সকালে রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়নের অধীনস্থ ৭ আর ই ব্যাটালিয়নের অন্তর্গত গবঘোনা সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার মোঃ গিয়াস এর নেতৃত্বে গবঘোনা সেনা ক্যাম্প ও জীবতলী সেনা ক্যাম্প এর ৩০/৩৫ জনের একটি সেনাদল মগবান ইউনিয়নের গুরগুজ্যাছড়ি এলাকায় টহল অভিযান চালায়।
এসময় সেনা সদস্যরা প্রথমে ঐ এলাকার আপন চাকমা (৩৩), পিতা-শম্ভু লাল চাকমার দোকান ঘেরাও করে। এর পরপরই সেনা সদস্যরা শম্ভু লাল চাকমা (৫০), পিতা-সূর্য্যসন চাকমা, কৃপাধন চাকমা (৪৩), পিতা-চন্দ্র সেন চাকমা ও নয়ন চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত এর বাড়ি ঘেরাও করে বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশী চালায়। এরপর সেনা সদস্যরা উক্ত চার নিরীহ গ্রামবাসীকে একসঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং এদের মধ্যে শম্ভু লাল চাকমাকে বেদম মারধর করে।
পরে সকাল ৮:০০ টার দিকে সেনা সদস্যরা উক্ত ৪ গ্রামবাসীকে বাঁধা অবস্থায় জীবতলী সেনা ক্যাম্পে আটক করে নিয়ে যায়। বিকাল ৩:০০ টার দিকে সেনা সদস্যরা আপন চাকমা, কৃপাধন চাকমা ও নয়ন চাকমাকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয় বলে জানা যায়।
অপরদিকে, এরপর সেনা সদস্যরা অপর আটককৃত ও নির্যাতনের শিকার গ্রামবাসী শম্ভু লাল চাকমাকে মিথ্যাভাবে সাজিয়ে একটি দেশীয় বন্দুক, ১ রাউন্ড গুলি, ৮টি দেশীয় দাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করে বলে জানা যায়।
এদিকে ঘটনার পর বিকেলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এবং সেনামদদপুষ্ট বিভিন্ন অনলাইন প্রচারমাধ্যমে আটককৃত শম্ভু লাল চাকমা জনসংহতি সমিতির সন্ত্রাসী বলে দাবি করা হয়।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জনসংহতি সমিতির স্থানীয় এক নেতা জানান, গ্রেফতারকৃত শম্ভু লাল চাকমা নিরীহ এক গ্রামবাসী। এলাকার জুম্মদের মধ্যে ভীতির রাজত্ব কায়েম করা এবং নিজেদের জুম্মবিদ্বেষী মানসিকতা চরিতার্থ করার জন্যই সেনাবাহিনী জুম্মদের গ্রামে এমন তথাকথিত অভিযান চালায় এবং নিরীহ মানুষদের অত্যাচার, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় যে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বর্তমানে পার্শ্ববর্তী বালুখালী ইউনিয়নের মরিচ্যা বিল সেনা ক্যাম্প হতে ২০/২২ জনের একটি সেনাদল গুরগুজ্যাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। অপরদিকে কুকিপাড়া সেনা ক্যাম্প হতে ২০/২৩ জনের একটি সেনাদল বর্তমানে দুত্তাং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। এছাড়া জীবতলী সেনা ক্যাম্প ও গবঘোনা সেনা ক্যাম্প হতে জীবতলী ইউনিয়নের আঘোইয়াছড়ি, পৃজুছড়া, রেংখ্যং বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় সেনা অভিযান চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।