হিল ভয়েস, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবানের রুমা উপজেলায় বথি ত্রিপুরা পাড়ায় সেনাবাহিনী ও কথিত সশস্ত্র গ্রুপের সাথে গোলাগুলির ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক রুমা থানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য সহ ২২ জনের একটি সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাইখ্যিয়াং লেক সেনা ক্যাম্পের ল্যান্স কর্পোরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক উক্ত মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, রুমা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বথি ত্রিপুরা পাড়ায় একটি সশস্ত্র গ্রুপ অবস্থান করছে বলে সেনা-মদদপুষ্ট মগপার্টির সূত্রে খবর পেয়ে মগপার্টির সশস্ত্র সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রুমা জোনের নিয়ন্ত্রণাধীন রাইংখিয়াং লেক সেনা ক্যাম্প হতে একদল সেনা উক্ত এলাকায় অভিযান গেলে গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ দিবাগত রাত ১০:৩০ ঘটিকায় কথিত সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। উক্ত ঘটনায় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিব ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং একজন সৈনিক গুরুতর আহত হন। অন্যদিকে কথিত সশস্ত্র গ্রুপের তিনজন সদস্যও ঘটনাস্থলে নিহত হন।
উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রুমা থানায় ২৮ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ডি কোম্পানীর রাইখ্যিয়াং লেক সেনা ক্যাম্পের ল্যান্স কর্পোরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ২২ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলাটি (নং ০৩ তারিখ ১০/০২/২০২২ পেনাল কোডের ১৮৬/ ৩৩২/ ৩৩৩/ ৩৫৩/ ৩০৭/ ৩০২/ ১০৯/ ৩৪ ধারার অধীনে দায়ের করা হয়। উক্ত মামলায় জিআর নম্বর হচ্ছে ৪৬/২০২২।
যাদের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করা হয়, তাদের হলেন-
১. হিতৈশি চাকমা (৫৯), পিতা: অজ্ঞাত, খানসামাপাড়া, রোয়াংছড়ি;
২. গর্জন তনচংগ্যা (৪২), পিতা: কিনাধন তনচংগ্যা, ঘিলাপাড়া, রাজস্থলী, রাঙ্গামাটি;
৩. অমর জ্যোতি চাকমা ওরফে অপু চাকমা (৩৭), পিতা: লম্বা চাকমা, জুরাছড়ি, রাঙ্গামাটি, বর্তমানে তারাছা, রোয়াংছড়ি;
৪. ক্যাবামং মারমা (৫১), (সাবেক চেয়ারম্যান, রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদ), সাধারণ সম্পাদক, বান্দরবান জেলা জেএসএস, পিতা: উথোয়াই প্রু মারমা, রোয়াংছড়ি;
৫. কে এস মং (৫৮) পিতা: মৃত-ক্য হ্লাউ, মধ্যম পাড়া, বান্দরবান;
৬. শম্ভু কুমার তনচংগ্যা (৪৬), (সাবেক চেয়ারম্যান, নোয়াপতং পাড়া ইউনিয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক বান্দরবান জেলা জেএসএস), আন্তাহা পাড়া, রোয়াংছড়ি, বর্তমানে উজানী পাড়া, বান্দরবান;
৭. অংথোয়াইচিং মারমা (৪৭), (সাবেক চেয়ারম্যান, রুমা উপজেলা পরিষদ) সহ সভাপতি বান্দরবান জেলা জেএসএস, পিতা: মৃত ফুচিংউ মারমা ওরফে পূচন্ড মারমা, হাতিমাথা পাড়া, ২নং ওয়ার্ড, রুমা সরই ইউনিয়ন, রুমা, বান্দরবান;
৮. ফ্রান্সিস ত্রিপুরা (৪০), (সাংগঠনিক সম্পাদক, রুমা উপজেলা পিসিজেএসএস), পিতা: নাকতাহা ত্রিপুরা, নামেপাড়া, রুমা পাড়া;
৯. কাজল চাকমা (৪০), জেএসএস (মূল) কর্মী, পিতা: অজ্ঞাত, পোপা হেডম্যানপাড়া, রুপসীপাড়া, লামা;
১০. ভূষণ তনচংগ্যা (৪২), (বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যার ভাতিজা), বিজয়পাড়া, রোয়াংছড়ি;
১১. এস মং (বাবুল চাকমা) (৬০), আসামবস্তী, রাঙ্গামাটি, বর্তমানে গুংকুরমুখ, রোয়াংছড়ি;
১২. সুহৃদয় তনচংগ্যা (২২), (কালেক্টর, জেএসএস, আলিকদম), পিতা প্রু তনচংগ্যা, রয়াম্বু ব্ল কারবারী পাড়া, আলিকদম, বান্দরবান;
১৩. প্রু তংচংগ্যা (৪৫), (সক্রিয় সদস্য, জেএসএস, আলিকদম), পিতা: মৃত-সূর্যমনি কারবারী, রয়াম্বু ব্ল কারবারী পাড়া, আলিকদম, বান্দরবান;
১৪. ছালামং মারমা (৫০), (সেক্রেটারী, জেএসএস, আলিকদম) পিতা: উছামং মারমা, বাজার পাড়া, আলিকদম;
১৫. পিলিফ ত্রিপুরা (৫২), (শিক্ষা সাংস্কৃতিক সম্পাদক, জেএসএস, আলিকদম), পিতা: মৃত- গমপ্রু ত্রিপুরা, কলারঝিরি পাড়া, আলিকদম;
১৬. পারাও ম্রো (৪৫), (কালেক্টর, জেএসএস, আলিকদম), পিতা: কহিলা ম্রো, মেরিনচর, আলিকদম;
১৭. তরুন চাকমা (২৭), (সক্রিয় সদস্য, জেএসএস, আলিকদম), পিতা: বসুদেব চাকমা, রোয়াম্বু বয়ামঝিরি, আলিকদম;
১৮. সাগর বাসা চাকমা (৪৩), (সক্রিয় সদস্য, জেএসএস, আলিকদম), পিতা: বৈদ্য চন্দ্র চাকমা, জ্ঞানকার্বারী পাড়া, আলিকদম;
১৯. কাইনথপ ম্রো (৫৪), (সেক্রেটারী, জেএসএস, আলিকদম), পিতা: রু ইয়াং ম্রো, মেরিনচর, আলিকদম;
২০. অংগ্য মারমা (৫৫), (সভাপতি, জেএসএস, লামা), পিতা: মংচা মারমা/ক্লাইচ প্রু মারমা, জংলাপাড়া, রূপসী ইউনিয়ন, লামা;
২১. লক্ষীপদ প্রসাদ চাকমা (৪২), অন্যান্য তথ্য অজ্ঞাত;
২২. অর্জুন (৩৫), অন্যান্য তথ্য অজ্ঞাত সহ আরও আনুমানিক ২০/২৫ জন।
উল্লেখিত অভিযুক্তদের মধ্যে অনেককেই সেনা নির্যাতন, ভূমি বেদখল, সর্বোপরি চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে সোচ্চার থাকার কারণে তাদের কন্ঠস্বর রোধ করার হীনউদ্দেশ্যে মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ যেমন, প্রো তংচংগ্যার ছেলে সুহৃদয় তংচংগ্যাকে আসামী করার কারণ হচ্ছে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। সেনা সোর্স রহুল আমিন ও সাংবাদিক মমতাজের ছোট ভাই পাথর ব্যবসায়ী নজরুলের পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার বিষয়ে নিউজ করতে গিয়ে সুহৃদয় তংচংগ্যা সেনাবাহিনীর আক্রোশের শিকার হয়।
উল্লেখ্য যে, “উক্ত ঘটনার সাথে জনসংহতি সমিতি বা সমিতির কোন সদস্য জড়িত নয়” মর্মে জনসংহতি সমিতিও এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা এবং জনসংহতি সমিতির উপর দমন-পীড়নের হীনলক্ষ্যে উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে উক্ত ঘটনার সাথে জনসংহতি সমিতিকে জড়িত করা হয়েছে বলে জনসংহতি সমিতি উক্ত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে।