হিল ভয়েস, ১৮ জানুয়ারী ২০২২, চট্টগ্রাম: আজ ১৮ই জানুয়ারী ২০২২ ইং রোজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্বিক সহযোগিতায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন ছোট কুমিরার ত্রিপুরা আদিবাসী অধ্যুষিত ‘ত্রিপুরা পাড়া’ গ্রামে স্থানীয় স্কুল,কলেজে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদক নরেশ চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দীনবন্ধু ত্রিপুরা ও ত্রিপুরা পাড়ার স্থানীয় সমাজ সংগঠক সন্তোষ ত্রিপুরা এবং সেমিনার পরিচালনা করেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য অন্বেষ চাকমা।
এছাড়া উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী হ্লামিউ মারমা, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী পহেলা চাকমা, সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুভাষ চাকমা প্রমুখ।
গ্রামের কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্থানীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় ও ভাববিনিময়ের পরবর্তীতে মূল আলোচনা ও দিকনির্দেশনামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভার প্রধান আলোচক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা তার বক্তব্যে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ও আমাদের জীবনযাপনকে পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন।
বিশেষ আলোচক নরেশ চাকমা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরেন। তিনি বলেন,” সংস্কৃতির অন্যতম বাহক নারীরা। তাই স্ব স্ব সংস্কৃতি বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে আমাদের। আর এজন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা”।
চবির ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পহেলা চাকমা বলেন,”আমাদের শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে এর পরবর্তী উচ্চশিক্ষার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের সমাজকে নিয়ে সচেতন হতে পারবো, অধিকার বিষয়ে সচেতন হতে পারবো। তিনি তার আলোচনায় নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জোর দেন। তিনি আরো বলেন,”আমরা এমনিতেই পিছিয়ে পড়া জাতি তার চাইতে আরো বেশি পিছিয়ে আছি আমরা নারীরা। দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে নারীর ভূমিকা অনেক বেশি। তাই আমাদের আদিবাসী নারীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে”।
আলোচনা সভায় দীনবন্ধু ত্রিপুরা ককবরক ভাষায় বলেন,”তোমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর একটু জোর দিতে হবে। আর্থিক সমস্যা আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আশা হারানো যাবেনা। আমাদের আদিবাসীদের অনেক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ দিয়ে থাকে”।
এরপরে গ্রামের সমাজ সংগঠক ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বাবু সন্তোষ ত্রিপুরা বলেন,”আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়ায় শিক্ষাগ্রহণের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়েদের প্রতি এই বিষয়টি আরো প্রকট। আমাদের এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে”।
এছাড়াও উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক পরামর্শ দেন চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুভাষ চাকমা। তিনি পিছিয়ে থাকা সমাজকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার অপরিহার্যতা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, “আপনাদের সচেতনতার মাধ্যমে পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আরো অনেকেই উৎসাহী হবে”।
শুভেচ্ছামূলক বক্তব্যে চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হ্লামিউ মারমা বলেন,”আমরা আজকে যারা এখানে এসেছি তারা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। আমাদের আদিবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। তাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সামর্থ্য আমাদের খুবই কম জনের থাকে। সেজন্য আমাদের উচিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। একটি শিক্ষিত সমাজই জাতিকে টিকিয়ে রাখতে পারে। আমাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে”।
আনুষ্ঠানিক আলোচনা সভা শেষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর, ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া, ভর্তি পরীক্ষা, মান বন্টন ও অনুষদ ভিত্তিক বিভিন্ন ধারণা বিষয়ে তুলে ধরেন উপস্থিত আলোচকবৃন্দ এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়।