হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২২, ঢাকা: ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ ২ ডিসেম্বর ২০২২, সকাল ১০:০০ টায় ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই পাহাড় সামরিক কায়দায় শাসিত হচ্ছে। পাহাড়ের শাসনকর্তা হল সামরিক কর্তৃত্ব। দীর্ঘ ৫২টি বছর ধরে সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে চলছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, সম্পদ হানি থেকে শুরু করে লুঠতরাজ চলছে। পাহাড়ি মানুষ নিরাপত্তাহীন।” তিনি বলেন, “আমি সন্তু লারমা যেখানে যায় সেখানে গোয়েন্দা বাহিনী থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্ত মানুষের পেছনে এই বাস্তবতা।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। আলোচনা সভায় অংশ নেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য খুশী কবির, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।
উক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা,একই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) আরও বলেন, “আমরা পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পার হয়ে এসেছি। এই সময়টা আমার জীবনের বৃথায় পার করে এলাম। যে সময়টাতে এই দেশের মানুষের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকল্পে আরো কিছু অবদান রাখতে পারতাম। আমি গুনে গুনে এসব উপলব্ধি করতাম। কিন্তু ফলাফল হীন ছিল এই ২৫টি বছর। এটা ছিল অবর্ণনীয় অনুভূতির ব্যাপার। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তো হলই না, বরং এই চুক্তি যেন মানুষ ভুলে যায় তার ব্যবস্থাই করেছে সরকার।” যতদিন গণমুখি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না ততদিন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সন্তু লারমা আরো বলেন, “সরকার আমাদেরকে কথা বলতে দেয় নাই। আমাদেরকে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে এবং সমতলের আদিবাসীদের নানা সমস্যা নিয়ে দেশে বিদেশে নানা জায়গায় কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সেটাতে বাধা প্রদান করে এসেছে। বাংলাদেশের উপনিবেশ হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশকে শাসন-শোষণ করে এসেছে তার চেয়েও অধিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে শাসন-শোষণ করা হচ্ছে।”
পাহাড়ে যেসব সশস্ত্র গ্রুপ আছে তাদের কারা সৃষ্টি করেছে তাদের নিয়ে কেউ জানতে চায় না দাবি করে তিনি আরো বলেন, “জনসংহতি সমিতিকে চিরতরে দমন করার জন্যই এসব গ্রুপগুলোকে সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই গ্রুপগুলোর মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে, অন্যের প্রাণ হরণ করা হচ্ছে। তার খবর এদেশের শিক্ষিত মানুষ জানে না।”
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আন্দোলন জিইয়ে থাকবে দাবি করে তিনি আরো বলেন, এই চুক্তির পেছনে অনেক মানুষের রক্ত আছে। অনেক জুম্ম মা-বোনের নিপীড়ন ও সম্ভ্রম আছে। কাজেই এই চুক্তি পাহাড়ের মানুষ ভুলতে পারে না। এই চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা ভাবা হচ্ছে। এই আন্দোলন কোন দিকে মোড় নিবে তা আমি জানি না। এই বৃহত্তর আন্দোলন দেশের সকল শিক্ষিত সমাজ ও গণমানুষকে সামিল হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের লড়াই কেবল পাহাড়িদের নয়, এটা সম্মিলিত একটি লড়াই। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রশ্নে প্রথম যে ধারাটি ছিল সেটা হল, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হবে এবং তার বৈশিষ্ট সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু তা আজও হয়নি। আশির দশকে নদীভাঙা ও চরভাঙা মানুষকে যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসিত করা হল তাই ছিল পাহাড়ের জনমিতি পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।” এখন পাহাড়ের যে জনমিতি তার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং এইসব অভিবাসিত বাঙালিদেরকে পাহাড়ের বাইরে পুনর্বাসিত করার জেন্টলমেন্ট এগ্রিমেন্ট থাকলেও তা করা হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছিল তা আজ পর্যন্ত কোনো ভূমি বিরোধই নিষ্পত্তি করতে পারেনি। এটা পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন। আসলে এই পার্বত্য সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে না দেখে এটা সামরিক উপায়ে সমাধানের চেষ্টা ছিল প্রথম দিক থেকেই। পার্বত্য অঞ্চলকে নিরাপত্তার চশমা দিয়ে দেখার যে চল জিয়াউর রহমান নিয়ে এসেছিলেন তা এখনো চলমান। আর তার জন্যই এই চুক্তি বাস্তবায়ন হয় না।” যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার জায়গাটাতে পরিবর্তন না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত এই চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না বলেও মনে করেন তিনি। পাহাড়ে আদিবাসীদেরকে বিভেদ করে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে তা আজ সরকারের কাছে বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি। যে দুরদৃষ্টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন সেই দুরদৃষ্টি নিয়ে যেন চুক্তি বাস্তবায়ন করেন তা আশা প্রকাশ করেন এই সাংসদ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “২৫ বছর দীর্ঘ সময়। বিশেষ করে যারা অপেক্ষায় থাকে। পত্রিকায় অনেক কথা বলা হয়েছে। ১০০ টি ব্রিজ উদ্ধোধন করা হয়েছে, ঢাকায় কমপ্লেক্স হয়েছে, অনেক কালভার্ট হচ্ছে। একটি মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন জেলা পরিষদ হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পাহাড়ি মানুষের মনে শান্তি নেই। ২৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন জেলা পরিষদ পরিচালনার জন্য কোনো বিধি হয়নি। আমাদের দেশে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন হয় না। কিন্তু বিগত ২৫ বছরেও কোনো বিধি বা আইন হল না। একটি সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ যেন করা হয়। এই কর্মপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যেন আগামী প্রজন্মের জন্য নতুন কিছু করা হয়।”
রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, “পার্বত্য চুক্তির অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা প্রতিদিনের খবরে দেখি পাহাড়ে কী হচ্ছে। সেখানে সরকারি বেসরকারি স্থাপনার নামে আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সেখানে আজও নারীরা নিরাপদ নয়। পার্বত্য চুক্তি যেমন বাস্তবায়ন করছে না তেমনি এই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন করছে না। বাগদা ফার্মে আদিবাসীদের বাড়িতে আগুন দিল, আলফ্রেড সরেনকে হত্যা করা হল, এরকম অসংখ্য ঘটনা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার নেই। সরকার আমাদের কোনো কথাই রাখেনি। তাই এই সরকারের উপর আমাদের কোনো বিশ্বাস নেই। তবে সামনে নির্বাচন আসছে। আওয়ামীলীগ এর লোকজন আরো সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। কিন্তু আদৌতে কিছুই হবে না। এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে।”
এডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, আজকের দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী, সমতলের আদিবাসী তথা বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দের হতে পারতো। কিন্তু চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজকে আন্দোলনের আহ্বান জানানোর প্রয়োজন পড়ছে। কেবল পাহাড়ে নয়, ১৯৭১ সালে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তার অর্জনও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সাম্প্রদায়িকতা সবখানে রাজত্ব করছে এবং ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছিল তারও কোনো প্রতিফলন নেই। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা থেকে শুরু করে, লুটপাত, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচার যেন সমগ্র জায়গায়। এর জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দেয় নাই, দু’লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারা হয়নাই। যে দলটি ১৯৯৭ সালে চুক্তি করেছিল সে দলটিই আজ পর্যন্ত ক্ষমতায়। কেন চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা আজ সবাই জানে।” আরেকবার ভোট পেলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করব- এমন আর গালভরা প্রতিশ্রুতি না দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বানও জানান তিনি।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমি গত বছর চিম্বুক পাহাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে পাঁচতারা হোটেল হচ্ছে। যারা করছে তারা খুব খুশি। কিন্তু পাহাড়ের নিচে যে আদিবাসী বন্ধুরা আছে তাদের কান্নার জল। আর আজ থেকে ২৫ বছর আগে যে চুক্তি করলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন করলেন না। এই দায়িত্ব তো সরকারের। আর পাহাড়ি মানুষরা চুক্তি করেছে শান্তিপূর্ণভাবে সববাসের জন্য। এই শান্তি যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্বও সরকারের। এই চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কেবল পাহাড়ি ভাই-বোনদের নয়। এই দাবিতে সরব হওয়ার দায়িত্বও আমাদের।”
তিনি আরও বলেন, “২৫ বছর পরও কেন পাহাড়ে বিভেদ ঘটছে, তা আমরা জানি। ঐ অঞ্চলে যে সামরিক ও বেসামরিক আমলা আছে তারাই এইসব উস্কানিতে যুক্ত। কিছুদিন আগে দেখলাম, পার্বত্য ভূমি কমিশনের সভা হওয়ার আগে কারা যেন হরতাল ডাকলো আর স্থগিত করা হল সেই সভা। কেন ভূমি কমিশন কাজ করতে পারছে না, তার দায়ও সরকারকে নিতে হবে। আমরা ২৫ বছরে রোডম্যাপ শুনতে চাই। এই চুক্তির কোন অংশ কবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা যেন সরকার পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে।” তিনি আদিবাসীদের সাংবিধানিক ও নাগরিক স্বীকৃতিও দাবি করেন।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, “পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর প্রমাণ করেছিল আদিবাসী অধিকার স্বীকৃতিযোগ্য। এ চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি মিলেছিল। কিন্তু ২৫ বছরে আমরা এক দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা একসাথে ছিলেন। কিন্তু আজ কেন একসাথে নেই, কেন এই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে না বলেও প্রশ্ন রাখের তিনি। এটার সাথে রাষ্ট্রীয় ভাবনা জড়িত। আমাদের রাষ্ট্র কী কেবল মাত্র এক ধর্মের এক জাতির জন্য হবে? সংবিধান রচনার সময় রাষ্ট্রীয় দর্শনের মধ্যে আমাদের যে ভুল ছিল তার সংশোধন হয়েছিল এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। সাংবিধানিক অস্বীকৃতির মাধ্যমে যে পথচলা হয়েছিল তার সংশোধনী সূচিত হয় এই চুক্তিতে।”
তিনি আরো বলেন, “পাহাড়ের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। কিন্তু সামরিক ও উন্নয়নের সমস্যা হিসেবে যেভাবে দেখা হয় তা ভুল। পাহাড়ে শান্তি কী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রশ্ন রয়ে যায়। এই রাষ্ট্র পরিচালকরা কি শান্তি চান নাকি জিয়াউর রহমান ও এরশাদের মত রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দিয়ে শাসন করবেন।” এভাবে কেবল কর্তৃত্ব করা যায়, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, “রাজনীতিতে যদি অস্ত্র চলে আসে, তবে সেটাকে ঠেকিয়ে রাখা যায় না। এই অস্ত্রের যেন প্রয়োজন না পড়ে তার জন্য মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়। আর এই কাজটি করতে হয় রাষ্ট্র পরিচালকদের।”
সোহরাব হাসান বলেন, “এই দিনে আমাদের গ্লানি হওয়া উচিত। আমাদের মূল সমস্যা গণতন্ত্রহীনতা। চুক্তির এই দিনে আমরা জনসংহতি সমিতির এক ধরনের বক্তব্য এবং সরকারের বক্তব্য আরেক ধরনের। পাহাড়ি মানুষ অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল কিন্তু আজ তাদের মনে হতাশা। পার্বত্য চুক্তির প্রথম যে শর্ত, এই অঞ্চল আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হবে। কিন্তু আজ সেখানে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কাজেই প্রথম কাজ হোক, এই দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা। সংসদে এই চুক্তি নিয়ে খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু আদিবাসীদের ভূমি দখলের অভিযোগ আছে।” তাঁর কাছে পাহাড়ের আদিবাসীদের অধিকার কীভাবে সুরক্ষিত থাকে বলেও প্রশ্ন তুলেন তিনি। পাহাড়ে সমস্ত পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদের অধিকাংশ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব এখন বাঙালিদের হাতে। এভাবে পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না বলেও মনে করেন তিনি।
খুশী কবির বলেন, “আমরা দেখছি এই চুক্তি বাস্তবায়নের পথে না গিয়ে দিন কে দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন নিজস্ব সত্তা নিয়ে দাঁড়াতে না পারে তার জন্য কিছু মানুষের স্বার্থ আছে। সেখানে যেন তারা ভূমি গ্রাস করতে পারে। জোর করে, প্রলোভন দেখিয়ে যেসব বাঙালি মুসলিম সেটলারদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারাও সেখানে ভালো নেই। সকল আদিবাসী নারীরা নিজ ভূমিতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আছে। এটা কোনো সভ্য দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না। পাহাড়ের ভূমি ব্যবস্থাটা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে রাখা হয়েছে এবং ভূমি কমিশনের বিধিমালা এখনো করা হয়নি। যার জন্য কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না।” সেনাবাহিনীও ব্রিটিশদের কাছে ডিভাইড ও রুলস পলিসি শিখে গেছে বলে মনে করেন এই নারী নেত্রী।