হিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২২, কক্সবাজার: গতকাল ২ ডিসেম্বর ২০২২ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিকাল ৩.০০ টায় কক্সবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরামের কক্সবাজার শাখার সহ সভাপতি কিচন জং চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন উখিয়া উপজেলার আদিবাসী নেতা নিপাই তঞ্চঙ্গ্যা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লার, কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশ (সিপিবি)’র কক্সবাজার সদর উপজেলা সম্পাদক অভিজিত পাল, জনসংহতি সমিতির আলিকদম শাখার সাধারণ সম্পাদক পুর্ণসেন তঞ্চঙ্গ্যা, আদিবাসী যুব নেতা কিরণ তঞ্চগ্যা, আদিবাসী ফোরাম, কক্সবাজার জেলা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক মংথেনহ্লা রাখাইন।
আদিবাসী ফোরামের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে জুম্ম জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। ঠিক একইভাবে চুক্তির ২৫ বছর পরেও জুম্ম জনগণের শাসনতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি আরো বলেন, চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল রাখার কথা থাকলেও আজ সেখানে সেটেলার বাঙালিদের আধিক্য দেখা যায় যা চুক্তির পরিপন্থী।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট কুকি-চিন সন্ত্রাসীসহ চুক্তি বিরোধী নানা গোষ্ঠীর মাধ্যমে এই চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে। এছাড়াও উন্নয়নের নামে ভূমি-উচ্ছেদ করা হচ্ছে যার ফলে বিশাল সংখ্যক জুম্ম আদিবাসী নিজ বাস্তুভিটা ছেড়ে দেশান্তরি হতে বাধ্য হচ্ছে। জুম্ম জনগণের লড়াই সংগ্রামকে ভূলন্ঠিত করার জন্য সেখানে প্রতিনিয়ত শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি যুব ও ছাত্রসমাজকে এই আন্দোলন সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
বাপা’র সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লার তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের যথাযথ কোনো পদক্ষেপ আমরা আজও দেখতে পাই না। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ নারীদের নিরাপত্তা নেই, ভূমির অধিকার নেই। সরকার তার মদদপুষ্ট সংগঠন সৃষ্টি করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকটি জায়গায় নামে বেনামে আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যখন তাদের কথা বলার জন্য মুখের ভাষা লুটে নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সংকটকে সরকারের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করতে হবে। এজন্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন জরুরী।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কক্সবাজার জেলা শাখার সহ সভাপতি তার বক্তব্য বলেন, শুধু পাহাড়ে নয়, কক্সবাজার জেলা আদিবাসীদের ভূমিগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও আদিবাসীদের জন্য ব্যবহার হয় না। সহ সভাপতি বলেন, আগামী দিনে আমাদের লড়াইয়ের জন্য ঐক্য থাকতে হবে।