হিল ভয়েস, ৩ ডিসেম্বর ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধানাবলী এখনো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন পার্বত্য চুক্তির ২৫তম বর্ষপূতিকে সামনে রেখে আগরতলায় আয়োজিত সেমিনারের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে ‘ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশন’-এর উদ্যেগে ২ ডিসেম্বর ২০২২, সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা প্রেস ক্লাবে “বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতিঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রেক্ষিত” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশনের আহ্বায়ক নিরঞ্জন চাকমা।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারী ও ত্রিপুরা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মণ, আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও স্যন্দন পত্রিকার মুখ্য সম্পাদক সুবল কুমার দে, ত্রিপুরা রেজ্য চাকমা সামাজিক পরিষদের রেজ্য কার্বারী দেবজান চাকমা, বিশিষ্ট লেখক সুব্রত রায়, বিশিষ্ট লেখক ক্রাইরি মগ চৌধুরী, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিন্দু রঞ্জন চাকমা ও সহকারি অধ্যাপিকা ড. পরমা চাকমা, আগরতলা চাগালা কার্বারী বিমান জ্যোতি খীসা প্রমুখ বিশিষ্টজনরা।
ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশনের সদস্য-সচিব শান্তি বিকাশ চাকমা সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং চাকমা সমাজের অধিকার কর্মী অনুরুদ্ধ চাকমা সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
খ্যাতনামা আইনজীবী পুরুষোত্তম রায় বর্মন বলেন, বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আশা করা হয়েছিল, সেখানকার জুম্ম জনগণ তাদের স্বাধিকার, ভূমির অধিকার, নিরাপত্তা ও বিকাশের অধিকার ফিরে পাবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামর সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে। কিন্তু আমরা আজ দেখতে পাই, ২৫ বছর পরও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশের মধ্যে যারা সংবেদনশীল মানুষ আছেন, যারা এই পার্বত্য অঞ্চলের একটি স্থায়ী সমাধান চান, এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তাদেরকেও সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি জোরালো অভিমত তুলে ধরেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক সুবল কুমার দে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধানাবলী এখনো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চুক্তি অনুসারে জনজাতি মানুষ জাতীয় অস্তিত্ব অক্ষুন্ন রাখতে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য সরকার পক্ষ থেকে যথাযথ কোন আইন ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরঞ্চ উল্টো রোহিঙ্গাসহ বহিরাগত মুসলমানদের অনুপ্রবেশ চলছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের সামনে কোন আয়না থাকে না। লঙ্কায় যারা যায় তারাই রাবন বনে যায় অর্থাৎ যে সরকার ক্ষমতায় যায় সেই সরকার ডাইনোসরাস হয়ে যায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে সরকার গঠিত হওয়ার পর আশা ছিল যে, জুম্মরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু এই বঞ্চনার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯৮ শতাংশ জুম্ম জনসংখ্যা থেকে বর্তমানে ৫০ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। বাকিরা বিভিন্ন জায়গা থেকে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাই চাকমাদের অধিকার ফিরে পেতে সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে বলে আহ্বান করেন তিনি। তিনি আশ্বাস ব্যক্ত করেন, আগামী দিনে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় সারা বিশ্বে এই অধিকারের জানান দেয়া হবে।
বিশিষ্ট লেখক সুব্রত রায় বলেন, আশির দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে যে নির্যাতন, অন্যায় সংগঠিত হয়েছে আর হচ্ছে সেগুলো সম্বন্ধে আমরা কমবেশি অবগত আছি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের প্রাক্কালে ৯৮ শতাংশ হিন্দু এবং বৌদ্ধ অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে স্বাভাবিকভাবেই ভারতবর্ষে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে সেই অঞ্চলটি পাকিস্তানে চলে যায়। আমি স্নেহ কুমার চাকমার বাড়িতে কয়েকবার গেছি। স্নেহ দা বলেছিলে, তিনি নিজেই ৩/৪ দিন রাঙ্গামাটিতে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়িয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সেদিন যদি সেই ঐতিহাসিক ভুলটি না হতো, তাহলে আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সেটাই হতো না। কাজেই তখনকার সময়ে যে কোনো কারণে যে ঐতিহাসিক ভুল হয়েছে তার ফলে কাউকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে হয়তো দিল্লীর যারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে ছিলেন তারা জানেননি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামটা কোথায় কিংবা এর গুরুত্ব কী। আজ যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতবর্ষে অন্তর্ভুক্ত হতো তাহলে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে একটা সমুদ্র বন্দর থাকতো। এখানে যে প্রাকৃতিক সম্পদ কাঠ, রাবার বা অন্যান্য মালামাল আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে কম খরচে অনায়াসেই সম্পন্ন করা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্য তা হয়নি।
স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান আর অধুনা বাংলাদেশ শাসনামলে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়ে আসছে, যার পরিণামে স্বাধীনতার সময় ২২ শতাংশের অধিক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান জনগোষ্ঠী কমতে কমতে বর্তমানে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানান লেখক সুব্রত রায়।
রেজ্য কার্বারী দেবজান চাকমা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ দুর্বার সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চু্ক্তি সম্পাদনে সরকারকে বাধ্য করেছে। আমরা আশা করেছিলাম যে, দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে অর্জিত এই চুক্তি বাংলাদেশ সরকার বাস্তবায়ন করবে আর সেখানকার বসবাসরত জুম্ম জনগণের অধিকার অর্জিত হবে। কিন্তু আজ ২৫ বছর পর আমরা তার সম্পূর্ণ বিপরীত দিক দেখতে পাই।
তিনি আরো বলেন, এখন বাংলাদেশ সরকারের সেনাবাহিনী কর্তৃক দমন-পীড়ন আর নানা ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টির মাধ্যমে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত চুক্তির ধারা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পেইন ফর হিউমিনিটি ফ্রটেকশন ফোরাম থেকে আমরা আওয়াজ তুলতে চাই যে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সকল সংখ্যালঘু সম্পদ্রায়ের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা হোক এবং পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত সকল বিষয়গুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।
ড. বিন্দু রঞ্জন চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদিও বলছে তারা চুক্তির বেশির ভাগ অংশ বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য চুক্তির যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভূমি সমস্যা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ভূমি সমস্যা যদি সমাধান করা না যায়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কিন্তু কখনোই সমাধান করা যাবে না। যখনই ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ভূমি সংক্রান্ত কোন সমস্যা সমাধানের জন্য মিটিং আহ্বান করে তখন একটি চুক্তি বিরোধী শক্তির দ্বারা সবসময় বাধাগ্রস্ত করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। সুতরাং এই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের পজিটিভ রোল থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আমরা দেখি যে, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে একটা শব্দও আজ অবধি আমরা শুনতে পাইনি। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে তিনি ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট লেখক ক্রাইরি মগ চৌধুরী দুঃখের সঙ্গে বলেন, শুধু চাকমা সম্প্রদায় হত্যার শিকার, নির্যাতন-নিপীড়ন-অত্যাচারের শিকার হয়নি, তাদের মধ্যে মগ সম্প্রদায়ও সমান নির্যাতনের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের জন্য শুধু বাঙালি জাতি যুদ্ধ করেনি, সেখানে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও যুদ্ধ করেছে। নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছে স্বাধীনতার জন্য।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মগ রেজিমেন্ট তৈরী করা হয়েছিল। আমাদের মং রাজা নিজের রাজবাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অকাতরে খুলে দিয়েছিলেন। আহতদের চিকিৎসা জন্য হাসপাতাল খুললেন। তারপর ভারতবর্ষে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেন। সাব্রুম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মেইন সেন্টার। জিয়াউর রহমানও বহুবার আমাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। উনাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র এখনও আমাদের বাড়িতে আছে। কিন্তু তাদের (মগ সম্প্রদায়ের) অনবদ্য অবদানের কথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্থান দেয়া হয়নি। পক্ষান্তরে তাদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে।
ড. পরমা চাকমা বলেন, ১৯৪৭ সালের পরে পাকিস্তানের শাসনামলে ১৯৬২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক্সক্লুটেড এরিয়া মর্যাদা থেকে ট্রাইবাল এরিয়া করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে বিশেষ শাসনব্যবস্থা ছিল তা পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তুলে দেয়া হয়। আর আমরা দেখতে পাই, ধীরে ধীরে সরকার হিলের কর্মচারীদেরকে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করা হয়েছে আর বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ট্রান্সফার দেয়া হয়েছে। আর অনেকগুলি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার হয়েছে। যেমন যে কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী না হলেও ১৫ বছরের অধিক যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করে থাকে, তাহলে তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। এটা ছিল সম্পূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বার্থ পরিপন্থী।
অনুরুদ্ধ চাকমা বলেন, অভিভক্ত ভারত যখন বিভক্ত হয়ে স্বাধীন দুইটি রাষ্ট্র ভারত এবং পাকিস্তান জন্ম নেয়, তখন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদেরকে উপর নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হতে শুরু করে । পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯৮ শতাংশ অমুসলিম জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও অনৈতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। যদিও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান আর অমুসলিমদের নিয়ে ভারত হওয়ার কথা ছিল।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেখি যখন ১৯৭১ একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম লাভ হলো তখন থেকে এই অত্যাচার, নিপীড়ন, হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকার অর্জন করতে না পেরে পরে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। তার ফলস্রুতিতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত হয় শান্তি চুক্তি বা পার্বত্য চুক্তি। কিন্তু ২৫ বছরে পদার্পণ করলেও চুক্তি বাস্তাবায়নে বাংলাদেশ সরকারের অদ্যবধি কোন সদিচ্ছা আমরা দেখতে পাই না। বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে চু্ক্তি লঙ্ঘন আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র আমরা দেখতে পাই।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে শান্তি বিকাশ চাকমা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি জাতি ছাড়াও, হিন্দু, শিখ, জৈয়ন সম্প্রদায়ের লোকদের অনবরত বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আমরা দেখতে পাই। এই মানবাধিকার লঙ্ঘন আজ থেকে শুরু হয়নি, বৃটিশ আমল থেকে শুরু হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় থেকে আজ অবধি যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সেটার আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা আমরা দেখতে পাইনা। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ লাভ করার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবিধান রচনা করা হয়। কিন্তু সেই সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের জন্য কোন অধিকারের কথা লেখা হয় নাই।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক অবৈধ সেটেলারদের ফেরত, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার আর স্বশাসন প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও দীর্ঘ ২৫ বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়াতে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াতে সেখানে আজ ভূমি বেদখল, হত্যা, অপহরণ, জুম্ম নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মত মানবাধিকার লঙ্ঘন সংগঠিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ৯৮.৫% অমুসলিম থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেওয়ায় সেই জনগোষ্ঠীর সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে সেই অন্যায়ের সুরাহা আজ পর্যন্ত হয়নি। তিনি পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেন।