হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় আয়োজিত এক গণসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের উপর সেনাশাসন চলছে। জুম্ম জনগণ দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
আজ ২ ডিসেম্বর ২০২২ পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বরকল থানা কমিটির উদ্যোগে বরকল উপজেলা মাঠে আয়োজিত উক্ত গণসমাবেশে নেতৃবৃন্দ উক্ত বক্তব্য রাখেন।
সকাল ১০:৩০ টায় পিসিপি’র বরকল থানা কমিটির সভাপতি কেতন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য বিধান চাকমা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য শ্যাম রতন চাকমা, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বরকল থানা মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুচরিতা চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক মিন্টু চাকমা, বরকল থানার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক অরুমিতা চাকমা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক জ্ঞান জ্যোতি চাকমা। আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন পিসিপি’র বরকল থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রিয় জ্যোতি চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র বরকল থানা কমিটি’র সহ সাধারণ সম্পাদক ইলেন চাকমা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি বিধান চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগনের উপর প্রতিনিয়ত সেনাশাসন চলছে। জুম্ম জনগণকে দূর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতির সাথে যখন চুক্তি সাক্ষরিত হয় তখন তিনি ছাত্র ছিলেন, বয়স ছিল ২৪ বছর। এখন ৪৯ বছর, যা পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার বলে থাকেন, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু আমি বরকল উপজেলার জনপ্রতিনিধি হয়েও মনেকরি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য, চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য, নিপীড়ন, নির্যাতন, ঘুম, হত্যা ইত্যাদি চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের ভুমি ফেরত দেওয়া হয়নি। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের পূর্নবাসন করা হয়নি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি-শৃংখলা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি শ্যামরতন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি এবং অধিকার হারা, ভিটেমাটি হারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি এরশাদ আমলেও হতে পারতো। কিন্তু তা না করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তাদের সাথে চুক্তি করেছিল জনসংহতি সমিতি।
তিনি বলেন, জনসংহতি সমিতি মনে করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বিশেষ শাসনব্যবস্থা তা পাহাড়ি-বাঙালি উপভোগ করতে পারবে। কিন্তু আজ ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ধারা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করে, পাহাড়িদেরক বিভিন্ন দলে ভাগ করে দিয়ে চুক্তিকে অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য চেষ্টা করছে।
পিসিপি’র রাঙ্গামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক মিন্টু চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোর মধ্য ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি বেদখলকারী সেটেলারদের নিজ ভূমিতে সম্মানজনক পূর্নবাসন এবং জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন সহ মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন না করে সরকার তা নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার কেবল এ ধরনের চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রমের মধ্যেই ক্ষান্ত থাকেনি, ‘ভাগ করো শাসন করো’ উপনিবেশিক নীতি অনুসরণ করে চলেছে।
গণসমাবেশের সভাপতি কেতন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে নস্যাৎ করার জন্য সরকার সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ, সংস্কারপন্থী, চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ইত্যাদি পরিচালনা করছে এবং জনসংহতি সমিতি, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। তাই তিনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য গ্রামে-গঞ্জে, শহরে, বন্দরে ছাত্র-যুব-জনতার লৌহ দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করার আহ্বান জানান। জনসংহতি সমিতি যেকোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে তা যেকোনো বিনিময়ে বাস্তবায়নে জন্য সর্বদা বরকল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রস্তুত আছে বলে ঘোষণা করেন।