হিল ভয়েস, ৪ ডিসেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত দুমদুম্যা ইউনিয়নের এক জুম্ম নারী (১৮) চট্টগ্রাম-ঠেগামুখ ট্রানজিট সড়ক নির্মাণ কাজের এক বাঙালি ট্রাক চালক কর্তৃক ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে ভুক্তভোগী পরিবার বিষয়টি স্থানীয় সেনাক্যাম্পে জানালে সেনাবাহিনী অভিযুক্ত ট্রাক চালকসহ উল্টো ওই নারীকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এখনও মেয়েটির হদিশ পাওয়া যায়নি। এদিকে ভুক্তভোগী নারীটির পরিবার উল্টো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং এমনকি তারা বাড়িতে থাকতেও ভয় পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত ২ ডিসেম্বর ২০২২ রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হুলুগোছড়া গ্রামে ওই নারীর বাড়িতে এই ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম-রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-ঠেগামুখ স্থল বন্দর ট্রানজিট সড়কের কাজের অংশ হিসেবে জুরাছড়ি-বিলাইছড়ি উপজেলা সীমান্তবর্তী গাছবাগান এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সড়ক নির্মাণ কাজ চলছিল।
জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী বিলাইছড়ি উপজেলাধীন গাছবাগান এলাকায় একটি সেনা ক্যাম্প, চেকপোস্ট ও সেনাবাহিনীর নির্মাণাধীন পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২ ডিসেম্বর ২০২২ সকালের দিকে গাছবাগান এলাকায় ট্রানজিট সড়ক নির্মাণ কাজের অন্তর্ভুক্ত উক্ত অভিযুক্ত বাঙালি ট্রাক ড্রাইভার মোরগ কেনার নাম করে পার্শ্ববর্তী দুমদুম্যার হুলুগোছড়া গ্রামে ওই ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে যায়। এসময় ওই নারীর পিতা দেবচান চাকমা ও পরিবারের অন্যান্যরা জুমের কাজে বাড়ির বাইরে যায়। এমন সময় উক্ত ট্রাক চালক ওই নারীকে বাড়িতে একা পেয়ে প্রথমে কুপ্রস্তাব, কিন্তু নারীটি রাজী না হলে ট্রাক চালক ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই নারী ধস্তাধস্তি করে ধর্ষণের চেষ্টা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পালিয়ে গিয়ে ওই নারী তার বাবা-মা’কে বিষয়টি জানালে, নারীর বাবা গাছবাগান সেনা ক্যাম্পে গিয়ে সেখানে দায়িত্বরত কম্যান্ডার জনৈক ক্যাপ্টেনকে ঘটনাটি বিষয়ে অবহিত করেন।
ঐ দিনই উক্ত ক্যাম্প কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন অভিযুক্ত ট্রাক চালক ও ভুক্তভোগী নারীকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে যান। ঐদিন (২ ডিসেম্বর) সারারাত সেনাবাহিনী নারীকেও ক্যাম্পে আটকে রাখে। গতকাল (৩ ডিসেম্বর ২০২২) সকাল ৯:০০ টার দিকে সেনাবাহিনী অভিযুক্ত ট্রাক চালকসহ ভুক্তভোগী নারীকেও রাজস্থলীর দিকে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সেনাবাহিনী ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকার মুরুব্বি কাউকে ওই নারীকে আটক রাখা এবং রাজস্থলীর দিকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত ও আলোচনা করেনি।
ভুক্তভোগীর উপর সেনাবাহিনীর এহেন আচরণ ও ভূমিকার কারণে, ভুক্তভোগী নারীর জুমচাষী নিরীহ বাবা-মা গভীর উদ্বেগ ও ভয়ের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।