হিল ভয়েস, ২৫ নভেম্বর ২০২২, চট্টগ্রাম: “অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের দাবিতে” আজ ২৫ নভেম্বর ২০২২ রোজ শুক্রবার সকাল ১০:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় চত্বরে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক বিনিময় চাকমা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হ্লামিও মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য ও প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমা, সদস্য সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সুজন চাকমা এবং প্রসেনজিৎ চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অম্লান চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে অম্লান চাকমা বলেন, ২২ বছর বয়সী এই আমি ২৫ বছর পূর্ণ হতে যাওয়া এক অবাস্তবায়িত পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে আজকে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। এর থেকে বড় লজ্জাজনক দৃশ্য আর কী হতে পারে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এমন দৃশ্য খুবই বেমানান। তিনি অতি দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী বলেন, বছরের পর বছর ঘুরে যুগ পেরিয়ে যায়, তবু পাহাড়িদের দুঃখ কমে না। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য, শান্তিতে বেচেঁ থাকার জন্য বারবার তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। আমরাতো এমন রাষ্ট্র চাইনি! যে রাষ্ট্রে ভেদাভেদ থাকে সে রাষ্ট্র কিছুতেই গণতান্ত্রিক হতে পারে না। তিনি সরকারের কাছে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে পাহাড়িদের ঐতিহ্যগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা দাবি জানান।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ রুমেন চাকমা বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে সমবেত হয়েছি। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে শান্তি আসেনি, হারানো জায়গা জমি পাহাড়িরা ফিরে পায়নি। তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে শত শত ত্রিপুরা ও ম্রো জনগোষ্ঠীর জমি রাবার কোম্পানি কর্তৃক জোর-জবরদস্তি করে দখলে নেয়া হচ্ছে। অথচ সেই রাবার কোম্পানির সাথে জড়িত রয়েছে সরকারের টপ টপ লেভেলের নেতা।
পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অন্বেষ চাকমা বলেন, চুক্তির ২৫ বছর হতে চলেছে। এই চুক্তির ফলে পাহাড়িদের যে অধিকার, যে নিরাপত্তা, শান্তি থাকার কথা ছিলো তা একদমই নেই। কেননা এত বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন অধরায় রয়ে গেছে। অথচ প্রতি বছর এই দিনগুলোতে সরকার বলে থাকে যে, চুক্তির এত এত ধারা বাস্তবায়ন করেছি-করছি। তিনি আরো বলেন, সরকারের এসব নাটকে আর পাহড়িরা আশাবাদী নয়। কিভাবে অধিকার আদায় করতে হয় পাহাড়িরা জানে, জানে কিভাবে শাসকের কারাগার ভেঙে দিতে হয়।
পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা বলেন, আমরা সংবিধানের প্রতি সম্মান এবং সরকারের উপর আস্থা রেখেই চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু এত বছরেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অতি দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে জুম্ম জনগণ আবারো গণজোয়ার তুলতে দ্বিধাবোধ করবে না।
সভাপতির বক্তব্যে সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর অতিক্রান্ত হতে চললো, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সেই একই সুর শোনা যাচ্ছে যে, ৭২ ধারার মাঝে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন করেছি। অথচ ভূমি সমস্যা এখনো অধরায় থেকে গেছে। অথচ সেটিই হচ্ছে পাহাড়ের প্রধান সমস্যা। তাহলে কিভাবে বিশ্বাস করবো যে আসলে সরকার সত্যি সত্যিই চুক্তি বাস্তবায়ন করছে?
তিনি হুশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, সরকার যদি মনে করে যে, সহজ-সরল পাহাড়িদের চুক্তি বাস্তবায়ন না করেই সরকার পার পেয়ে যাবে তবে সেটি ভুল হবে। তিনি সমাবেশ থেকে অতিদ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান।