রাবিতে শহীদ ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

হিল ভয়েস, ১২ জুলাই ২০২৫, রাজশাহী: গতকাল ১১ জুলাই, ২০২৫ খ্রি: পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার উদ্যোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটে অধ্যয়নরত পাহাড়-সমতলের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যকার পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আয়োজিত “শহীদ ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট -২০২৫” এর সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা এবং পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো। উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক প্রাচুর্য্য চাকমা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী সুরেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, দিব্য চাকমা, অরুপ ত্রিপুরাসহ প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ।

রেং ইয়ং ম্রো তার বক্তব্যে, বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, খেলা মাত্রই প্রতিযোগিতা যেখানে একটা দল হারবে আরেকটা দল জিতবে। দুটি দলের কোয়ালিটিই সমান ছিল। কিন্তু ২০২২-২৩ এর টিম কংলাক এর সামান্য দুর্বলতার কারণে রানার্স-আপ নির্বাচিত হয়। তবে ভবিষ্যতে আরো ভালো করার সুযোগ রয়েছে। টুর্নামেন্ট সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখা এবং আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। সর্বোপরি শহীদ আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

সিনিয়র শিক্ষার্থী অরুপ ত্রিপুরা বলেন, এমন আয়োজন প্রতিবছর করা হলে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের মধ্যকার সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিকভাবে কোনো কাজ করতে করতে আমাদের সুবিধা হবে।

সিনিয়র শিক্ষার্থী সুরেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আয়োজক কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার যেসকল কর্মী অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, পাহাড় ও সমতলের এই অন্তর্ভুক্তিতে পাহাড় ও সমতলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। আগামী ৯ আগস্ট, বিশ্ব আদিবাসী দিবসে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত পাহাড় ও সমতলের সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একসাথে দিবসটি উৎযাপন করার আহবান জানান। সর্বোপরি শহীদ আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমা।

সমাপনী ম্যাচের প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে ছিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের টিম কাইরিং এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের টিম কংলাক। ১-০ গোলে ব্যবধানে টিম কংলাককে হারিয়ে কাইরিং দল বিজয় লাভ করে।

এতে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন সুজন টুডু। সেরা গোল কিপার নির্বাচিত হন ইগনেসেস সরেন। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় রোমান আক্কা। উদীয়মান খেলোয়াড় নির্বাচিত হন উহ্লাছাই মারমা।

উল্লেখ্য যে,আজ থেকে ১৫ বছর আগে ২০১০ সালের ৩জুন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলার সদরে বাজার এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলোপাতারি গুলিবর্ষণ করলে ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা নিহত হন। শহীদ ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা পিসিপি রোয়াংছড়ি থানা শাখার সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালের ৩ জুন সকাল ৮.১৫ ঘটিকায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলা সদরে ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এর ২০/২৫ জনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ৪/৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে একযোগে বাজারে অবস্থিত জেএসএস, যুব সমিতি ও পিসিপির অফিস, কর্মীদের আবাসস্থল, সরকারি রেস্ট হাউজে ৩৫ মিনিট ব্যাপী গুলিবর্ষণ করে সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় পিছন দিক হতে পিঠে গুলি লেগে সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত পিসিপি ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা (২২), পীং- গণেশ তঞ্চঙ্গ্যা, সাং- ওয়াগয় পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা ঘটনাস্থলে নিহত হন। ঐ সময় তিনি বাজারের দোকানে নাস্তা করতে বের হয়েছিলেন।

More From Author