মামলাবাজ সুহাস চাকমা কর্তৃক কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি

হিল ভয়েস, ১৫ আগষ্ট ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: দিল্লিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি সুহাস চাকমা, তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোত মানিক্য দেববর্মা কর্তৃক সুহাসের নাগরিকত্ব সম্পর্কে মন্তব্যের সংবাদ শেয়ার করার জন্য তার নিজস্ব চাকমা জনজাতি সম্প্রদায়ের কিছু সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।

হুমকির সম্মুখীন সংবাদমাধ্যমগুলি হলো চাকমা ভাষার সংবাদ চ্যানেল ‘চাঙমাহ টাইমস’, ‘চাকমা ক্রনিকল’ এবং ‘বরগাং টাইমস’। এর আগে সুহাস চাকমা হিল ভয়েসের সাথে যুক্ত করে নিরঞ্জন চাকমার বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন।

সুহাস চাকমার নাগরিকত্ব সম্পর্কে তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোত মানিক্য দেববর্মার মন্তব্যের বিষয়ে স্রেফ রিপোর্ট করার জন্য সুহাস চাকমা তাদেরকে এই হুমকি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে, প্রদ্যোত মানিক্য দেববর্মা ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার)-এ একটি পোস্টে সুহাস চাকমার অবৈধ নাগরিকত্ব, ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থানে প্রচুর জমি ক্রয় এবং বিদেশী গুপ্তচর সংস্থা, বিশেষ করে আইএসআই-এর সাথে তার সংযোগের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী পুলিশ তদন্তের দাবি জানান। ‘ত্রিপুরা টাইমস’ “সুহাস চাকমার অবৈধ নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান প্রদ্যোত” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা ‘চাঙমাহ টাইমস’ এবং ‘চাকমা ক্রনিকল’ নামক ছোট সংবাদ চ্যানেলগুলি শেয়ার করে।

এরপর প্রদ্যোত মানিক্য দেববর্মা তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে তার পোস্টটি মুছে ফেলেন।

কিছু তরুণ চাকমা সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন যে ত্রিপুরা টাইমসের খবর শেয়ার করার জন্য তারা সুহাস চাকমার কাছ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি পেয়েছেন।

‘চাঙমাহ টাইমস’-এর পোস্টে মন্তব্য করে সুহাস চাকমা লিখেছেন: “মহারাজা প্রদ্যোতের এমন কোনও পোস্ট নেই। তার এক্স অ্যাকাউন্টটি পরীক্ষা করে দেখুন। এবং সম্পাদক মিঃ সূর্যধন, আমাকে মানহানির জন্য আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখী হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।” ‘চাঙমাহ টাইমস’-এর সম্পাদক জবাবে বলেন, “ভয় দেখানোর পরিবর্তে ত্রিপুরা টাইমসের খবরটি মিথ্যা প্রমাণ করা উচিত সুহাসের।”

‘চাঙমাহ টাইমস’ তাদের পোস্ট মুছে ফেলতে বাধ্য হলেও, অন্য একজন সংবাদ চ্যানেলের সম্পাদক তার অবস্থানে অটল ছিলেন এবং সুহাস চাকমার ভয় দেখানোর কথা অমান্য করেছিলেন। তবে মামলার ভয়ে সর্বশেষ ‘চাকমা ক্রনিকল’ ও ‘বরগাং টাইমস’ও তাদের পোষ্ট মুছে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায়, ‘চাকমা ক্রনিকল’ সংবাদ চ্যানেলের সম্পাদক এইচ আল্লাং চাকমা দাবি করেছেন যে সুহাস চাকমা তাকে এবং তার বন্ধু সূর্য্যধন চাকমাকে (চাঙমাহ টাইমস সম্পাদক) ভয় দেখিয়েছেন।

“সুহাস চাকমা, আমাদের পোস্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন, কিন্তু আপনার ফেসবুক পোস্টে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেবেন না”, আল্লাং চাকমা সুহাস চাকমাকে বলেন।

তার আত্মপক্ষ সমর্থনে সুহাস চাকমা দাবি করেছেন যে, “মহারাজ প্রদ্যোত মানিক্য দেববর্মা আমার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি।” কিন্তু চাকমা সাংবাদিকরা এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন যে, সুহাস চাকমা নিজেই ‘এক্স’-এ প্রদ্যুৎ দেববর্মার পোস্টটি মুছে ফেলার আগে তার উত্তর দিয়েছিলেন এবং প্রমাণ হিসেবে তাদের কাছে স্ক্রিনশট রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকমা নেতা বলেন, সুহাস চাকমার দুর্নীতি, অবৈধ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন, মামলা দায়ের করে হয়রানি করা ইত্যাদি বিরুদ্ধে মানুষের উচ্চকিত কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেয়ার হীনউদ্দেশ্যেই সুহাস চাকমা এভাবে ‘চাঙমাহ টাইমস’ ‘চাকমা ক্রনিকল’, ‘বরগাং টাইমস’ প্রভৃতি গণমাধ্যমকে এই হুমকি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সুহাস চাকমা নিজেকে মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মী হিসেবে দাবি করেন, কিন্তু তিনি অন্যের বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নন। তিনি নিজেকে ভিক্টিম মনে করেন এবং নিজেকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে থাকেন বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু অন্যের সহজাত অধিকারকে মান্য করেন না।

উক্ত চাকমা নেতা আরো বলেন, নিজেকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে অন্যের বাক-স্বাধীনতার অধিকারকে হরণ করেন তা সুহাস চাকমা ভাবেন না। শাসকশ্রেণি বা প্রতিক্রিয়াশীলদের একটা পুরানো পদ্ধতি হলো, তাদের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের বিরুদ্ধবাদীদের কণ্ঠ করার জন্য মামলা দায়ের করে হয়রানি করা, যাতে তারা আর সোচ্চার হওয়ার সাহস না পান। সুহাস চাকমা এখন প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে নিজেকে শাসক ও নিপীড়ক শ্রেণিতে রূপান্তর করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে কেউ কোন টু শব্দ করলেই তার বিরুদ্ধে তিনি মামলার হুমকি বা মামলা দায়ের করে থাকেন।

সুহাস চাকমা অর্থ শক্তি ব্যবহার করে চাকমা সম্প্রদায়ের নেতা এবং ছাত্র নেতাদের চুপ করানোর জন্য একের পর এক মামলা দায়ের করে তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছেন। তিনি ২০২১ সাল থেকে ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশের শীর্ষস্থানীয় চাকমা সম্প্রদায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশসহ আদালতে কমপক্ষে ১৬টি মামলা দায়ের করেছেন এবং এতে কমপক্ষে শতাধিক চাকমা নেতা মামলার শিকার হয়েছেন। তার টার্গেটের মধ্যে চাকমা ব্যক্তিরা ছিলেন ত্রিপুরার চাকমা সম্প্রদায়ের প্রধান সমাজপতি, এনজিও কর্মী, গ্রাম প্রধান এবং ছাত্র নেতাবৃন্দ।

More From Author