হিল ভয়েস, ১৮ আগস্ট ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল (১৭ আগস্ট) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানেও চাকমা জনজাতির বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ‘কালো দিবস’ পালিত হয়েছে। এতে চাকমা সম্প্রদায়ের সর্বস্তরের নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে গতকাল বিকাল ৫টার দিকে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুর মহকুমার অন্তর্গত শ্রীরামপুরের শাক্য ছদক প্রাইভেট বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (সিএনসিআই) এর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সিএনসিআই’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপিত অনিরুদ্ধ চাকমা, সাবেক ছাত্রনেতা জীবন বসু চাকমা, ছাত্র যধা’র নেত্রী শিবানী চাকমা, ছাত্র যধা’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চাকমা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্র যধা’র কাঞ্চনপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক রতিশ চাকমা।
সভায় অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গে আমরা এসটি (সিডিউল ট্রাস্ট) হিসেবে স্বীকৃত। এটা দুর্ভাগ্যজনক এইজন্য যে, ১৯৪৭ সালে ১৭ আগস্ট চাকমারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চাকমাদের যে একটা রাজ্য হওয়ার কথা সেই অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। এইজন্য ১৭ আগস্ট চাকমা জাতির জন্য একটি কালো দিবস।
একই দিন উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর এলাকায় ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন, ধর্মনগর শাখার উদ্যোগে কালো দিবস উপলক্ষে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে একটি বিরাট মিছিল বের করা হয়। মিছিলে ১৭ আগস্টকে স্মরণ করে বিভিন্ন বক্তব্য, মন্তব্য ও দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, পোস্টার প্রদর্শন করা হয়। ধর্মনগরের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের (টিসিএসএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি সবুল কুমার চাকমা, টিসিএসএ এর কেন্দ্রীয় সদস্য তৃতীয় রতন চাকমা, ধর্মনগর শাখার সভাপতি শুক্রধন চাকমা, ধর্মনগর শাখার সহ-সভাপতি বিলকিস চাকমা, সহ-সাধারণ সম্পাদক তৃষ্ণা চাকমা প্রমুখ।
এছাড়া গন্ডাছড়ায়ও সিএনসিআই’র উদ্যোগে কালো দিবস পালিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ উপলক্ষে গন্ডাছড়ার পঞ্চরতন জনকল্যাণ বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কালো দিবসের প্রেক্ষাপট, তাৎপর্য নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেন সিএনসিআই’র নেতা শান্তি বিকাশ চাকমা।
শান্তি বিকাশ চাকমা বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে ভারতের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণও ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। সেই সময় চট্টগ্রামে অবস্থানরত ব্রিটিশ হাই কমিশনার জে হাইড, তিনিও এই পতাকা উত্তোলনে অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু দুই দিন পর দেখা গেল, অর্থাৎ ১৭ আগস্ট দেখা গেল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ভারতে অন্তর্ভুক্ত না করে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর পাকিস্তান আমল, এমনকি বাংলাদেশ আমলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ভারতপন্থী বলে অভিহিত করে অন্যায় করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই কালো দিবস পালন করার উদ্দেশ্য হলো এই যে, সেই সময় যে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের কোনো মতামত না নিয়ে তাদেরকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা ছিল অন্যায়। তারই প্রতিবাদ স্বরূপ এই কালো দিবস পালন করা থাকে। এইদিন ভারতের যেখানে যেখানে চাকমা রয়েছেন তারা সবাই এই দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরা রাজ্য ছাড়াও মিজোরাম, গৌহাটি, অরুণাচল প্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যে বসবাসকারী চাকমারাও এই দিবসটি যথাযথ গুরুত্বের সাথে পালন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।