চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের চলমান অনশন কর্মসূচির সাথে পিসিপির সংহতি এবং অবিলম্বে কুয়েট ও চবির শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান

হিল ভয়েস, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, চট্টগ্রাম: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের চলমান অনশন কর্মসূচির সাথে সংহতি এবং অবিলম্বে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের অন্যায় বহিষ্কারাদেশ ও মামলা প্রত্যাহার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটকে অবিলম্বে মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে অন্বেষ চাকমা স্বাক্ষরিত এক বার্তা প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

উক্ত বার্তায় বলা হয়, গত ২১ এপ্রিল (সোমবার) থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ জন শিক্ষার্থী। এর আগে রবিবার বেলা তিনটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে ভিসির অপসারণের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় অনশনে বসেন তারা।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড-বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও তীব্র হতে থাকে। গত ২১ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে।

বার্তায় আরো বলা হয়, চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ের (৩১ মার্চ ২০২৫) মধ্যে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করার কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিবাদে আমরণ অনশনে বসেছে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। চবির চারুকলা ইনস্টিটিউট এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মূল ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগের বাদশাহ মিয়া রোডে অবস্থিত ভবনে সীমিত পরিসরে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, আবাসন, ক্যান্টিন সুবিধাসহ নানবিধ মৌলিক সমস্যার কারণে তারা গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরে আসার দাবিতে কয়েক দফায় তাদের এই যৌক্তিক দাবি আদায়ে আন্দোলন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ দীর্ঘ কয়েক মাস তাদের সকল শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ছিল। যার ফলে দীর্ঘদিনের সেশনজটের সম্মুখীন হন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ৩১ মার্চ ২০২৫ এর মধ্যে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন এবং ১ এপ্রিল ২০২৫ হতে তাদের ক্লাস কার্যক্রম মূল ক্যাম্পাসে শুরু করার আশ্বাস দেন। তবে সেই আশ্বাস ২১ এপ্রিলে এসেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চারুকলার ৯ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে নেমেছেন।

বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, কুয়েট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে পাশ কাটানোকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হয়। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই অবিলম্বে কুয়েট ও চবিতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনাপূর্বক দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করার জন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান করা হয়।

More From Author

+ There are no comments

Add yours