Home Blog

সেনাবাহিনী কর্তৃক সীমান্ত সড়ক নির্মাণ: পর্যটন স্থাপনে আদিবাসী জুম্মদের গ্রাম উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র

0

হিল ভয়েস, ২৬ মার্চ ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদন: আদিবাসী জুম্মদের গ্রাম উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি ও বাগান-বাগিচা ধ্বংস, জুম চাষে বাধা প্রদান, সড়ক সংলগ্ন এলাকায় জুম্মদের ঘরবাড়ি নির্মাণে বাধা প্রদান করে সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তারই সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীন ২৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজে জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়া নামে দুইটি জুম্ম গ্রামের ২৩ পরিবার জুম্ম পরিবার উচ্ছেদের পাঁয়তারা ও ১৭ পরিবারকে জুম চাষে বাধা প্রদান করা।

গত ৯ মার্চ ২০২৪ সেনাবাহিনীর চাইচাল প্রকল্প ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন কবির ও সুবেদার প্রিয় রঞ্জন চাকমা গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেয় যে, সেনাবাহিনী জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নের গাছবাগান পাড়া ও বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের থুম পাড়ার মধ্যবর্তী পিলার চুগ ও লাঙেল টিলাতে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করবে। তাই এই দুই গ্রামের গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে এবং সেখানে ও আশেপাশের এলাকায় জুম কাটা যাবে না এবং ইতোমধ্যে কাটা জুমগুলোতে আগুন দেওয়া যাবে না।

এরপর গত ১১ মার্চ ২০২৪ সেনাবাহিনী এক্সকেভেটর দিয়ে পিলার চুগ ও লাঙেল টিলায় মাটি কাটা শুরু করে এবং বুদ্ধলীলা চাকমার কাটা জুম ধুলিসাৎ করে দেয়। এর পূর্বে গত ৬ মার্চ সেনাবাহিনী বীরসেন তঞ্চঙ্গ্যার কাটা জুম এক্সকেভেটর দিয়ে ধ্বংস করে দেয়। গত ১২ মার্চ ২০২৪ চাইচাল সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন কবির ও সুবেদার প্রিয় রঞ্জন চাকমা গাছবাগান পাড়া গ্রামের কার্বারি (গ্রাম প্রধান) থুদো চাকমার কাছ থেকে জুমের তালিকা চেয়েছেন। এসময় ক্যাপ্টেন কবির কার্বারি থুদো চাকমাকে বলেন, ‘তালিকা দিলেও পাড়া ছাড়তে হবে, না দিলেও পাড়া ছাড়তে হবে। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো কখনও লাভ হয়নি। অতএব, সরকারের বিরুদ্ধে না গিয়ে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও।’ গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ পাওয়া এই গ্রামবাসীরা বর্তমানে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

গত ১৯ মার্চ ২০২৪ সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড কর্তৃক দু’টি গ্রামে উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ ফটকে দুই গ্রামবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। গ্রামবাসীরা তাদের স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন যে, তাদের প্রধান জীবিকা জুমচাষ। বিগত ২৪/২৫ বছরে তাদের অনেকেই কলাবাগান, আম-কাঠাল বাগান, ঝাড়–ফলের বাগান গড়ে তুলেছে। জুমে অনেকে ধানচাষের পাশাপাশি আদা, হলুদ, তিল, মরিচ ইত্যাদি চাষও করেছে। স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে এবং উক্ত দুই গ্রাম উচ্ছেদ হলে, এর সাথে সাথে শুক্করছড়ি, চঙরাছড়ি, দুলুবাগান, বিলাইছড়ির মন্দিরাছড়া ও জুরাছড়ির মন্দিরাছড়া ইত্যাদি পাহাড়ি গ্রামগুলিও উচ্ছেদ হতে বাধ্য হবে।

উক্ত স্মারকলিপিতে গ্রাম ত্যাগ করার নির্দেশ প্রত্যাহার করা, গ্রাম সংলগ্ন পর্যটন স্থাপন না করা, জুম চাষে কোর বাধা প্রদান না করা এবং বাগান-বাগিচা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করার দাবি করা হয়। আশার দিক যে, উক্ত প্রতিবাদের পর সেনাবাহিনী জুম চাষ করা এবং কাটা জুমের আগুন দেয়া যাবে বলে গ্রামবাসীদেরকে অনুমতি দিয়েছে। তবে এখনো গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেনি।

গত ৮ মার্চ ২০২৪ বিকাল আনুমানিক ৩ টায় হেলিকপ্টার যোগে এক উধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা চাইচাল সেনা ক্যাম্পে সফর করেন। এর পরের দিনই (৯ মার্চ) চাইচাল ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা গ্রামে গিয়ে গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়ার জুম্ম গ্রামবাসীদের এই মর্মে জানিয়ে দেন যে, সেনা প্রধানের নির্দেশ জুমচাষ বন্ধ করতে হবে এবং গাছবাগান পাড়ার ১২ পরিবারকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ারমারের সীমান্তে ৩১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত সড়কের সাথে রয়েছে অনেকগুলি সংযোগ সড়ক। তার মধ্যে অন্যতম সংযোগ সড়কগুলো হলো- আলিকদম-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সংযোগ সড়ক; রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-ঠেগামুখ সংযোগ সড়ক; সিজকছড়া থেকে সাজেক-শিলদা-বেতলিং সংযোগ সড়ক এবং বাঘাইছড়ির উগলছড়ি গ্রাম থেকে মাঝিপাড়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বাস্তবায়নাধীন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় বসবাসকারী আদিবাসী জুম্ম জনগণ ব্যাপক বঞ্চনা, স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং ফলজ, বনজ ও ভূমি-সম্পত্তির দিক থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এবং এখনো ক্ষয়ক্ষতির মুখে রয়েছেন। উক্ত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসহ স্থানীয় নেতৃত্ব ও জনগণের মতামতকে যেমন উপেক্ষা করা হয়, তেমনি ক্ষতির সম্মুখীন স্থানীয় অধিবাসীদের মানবাধিকার ও ক্ষতিপূরণকে পদদলিত করা হয়।

এই সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কারণে এ পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) অন্তত ৭৭৬টি জুম্ম পরিবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৭৮টি পরিবার নিজের বাড়ি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তার মধ্যে সর্বশেষ জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুই জুম্ম গ্রামের ২৩টি জুম্ম পরিবার সেনাবাহিনীর উচ্ছেদের পাঁয়তারা। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বাঘাইছড়ি এলাকার মাত্র ৫৬টি পরিবার ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শনের এক পর্যায়ে আংশিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বাকীরা কেউ ক্ষতিপূরণ পাননি। ক্ষতিপূরণ দাবি করলে সেনা কর্মকর্তারা ক্ষমতার জোরে বলে থাকেন, “দেশ আমার, মাটি আমার। তাই ক্ষতিপূরণ কেন দেবো?”

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের ভূমি বেদখলের অন্যতম দুটি হাতিয়ার হল ক্যাম্প স্থাপন ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন। নিরাপত্তার নামে যেমন যত্রতত্র সেনা ও বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়, তেমনি অপরদিকে উন্নয়নের নামেই সেনাবাহিনী ও বিজিবি ইচ্ছেমত ভূমি ও পাহাড় দখল করে বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করে থাকে। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সুযোগে সেনাবাহিনী ও বিজিবি ইচ্ছামাফিক ভূমি ও পাহাড় দখল করে ক্যাম্প সম্প্রসারণ এবং তাদের পর্যটন ব্যবসাকে অধিকতরভাবে সম্প্রসারণ করে চলেছে। ইতোমধ্যে বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের কমলাক এলাকায় ৬ পরিবারের ভূমি বেদখল করে একটি বিজিবি ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়।

অপরদিকে জুম্মদের ভূমি বেদখল করে সিজকছড়া মুখ নামক স্থানে একটি ও উদয়পুর এলাকায় একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এছাড়া সিজকছড়া থেকে উদয়পুর পর্যন্ত ৫টি সেনা ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির লোগাং ইউনিয়নের ঘিলাতুলি গ্রামে জুম্ম ফলজ বাগান দখল করে একটি বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ করার সময় জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নের চাইচাল সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।

চাইচাল সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার সাইফুল কর্তৃক সীমান্ত সড়ক ও আশেপাশের ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে স্থানীয় গন্ডাছড়া মৌজার হেডম্যান সংঙুর পাংখোয়া ও পার্শ্ববর্তী রেংখ্যং চংড়াছড়ি মৌজার হেডম্যান বলভদ্র চাকমার কাছ থেকে এই মর্মে জোরপূর্বক দস্তখত আদায় করে নেয়া হচ্ছে যে, এসব ভূমি ও পাহাড় হচ্ছে খাস ভূমি। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনা মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন খাস জমি নেই। সেনাবাহিনী যেসব ভূমি ও পাহাড় খাস ভূমি হিসেবে চিহ্নিত করছে সেগুলো আদিবাসী জুম্মদের সামাজিক মালিকানাধীন মৌজা ভূমি ও জুম ভূমি।

এছাড়া সীমান্ত সড়ক ও সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সড়কের আশেপাশে আকর্ষণীয় বহু জায়গা বাছাই করে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে সেখানে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বলে উল্লেখ করে দখল করে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। নির্বিচারে সীমান্ত ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে জুম্ম জনগণ কেবলমাত্র উচ্ছেদ, তাদের বাগান-বাগিচা ধ্বংস, জুম চাষে বাধা ও সড়ক সংলগ্ন এলাকা ঘরবাড়ি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে তাই নয়, এলাকায় বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। সড়ক নির্মাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছড়া-ঝিড়ি থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে পানির উৎস ধ্বংস হচ্ছে। ফলে অনেক এলাকায় পানীয় জলের সংকটও দেখা দিচ্ছে।

এছাড়াও সেনাবাহিনী কর্তৃক সীমান্ত সড়কের পার্শ্ববর্তী বহু জায়গায় জুম্মদের স্থানীয় নামের বিপরীতে বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি হল- বাঘাইছড়ির সার্বোয়াতলী এলাকার ভিজে হিজিং নামক স্থানের জায়গায় ‘শাহীন টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়া স্থানের জায়গায় ‘মাহমুদ টিলা’, সাজেক এলাকার দুরবাছড়া স্থানের জায়গায় ‘এনামুল টিলা’, সাজেক এলাকার বটতলা নামক স্থানের জায়গায় ‘সজীব টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়ার স্থানে আরো একটি ‘শামীম টিলা’, সাজেক এলাকার ভুইয়োছড়া নামক স্থানের জায়গায় ‘সাইদুর টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়ায় আরো একটি ‘ইসমাইল টিলা (বিওপি পোস্ট)’, সাজেক এলাকার ভুইয়োছড়া নামক জায়গায় আরো একটি ‘আল-আমিন টিলা’ ইত্যাদি।

এটা জুম্মদের উপর চরম ইসলামী সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসন এবং জুম্মদের ঐতিহ্য ও নাম-নিশানা নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে বিবেচনা করা যায়। এটা নিশ্চিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম (উপজাতি) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের যে অঙ্গীকার ও বিধান রয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার ও সেনাবাহিনী তা সম্পূর্ণভাবে বরখেলাপ করছে এবং জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের উপর গভীর আঘাত সৃষ্টি করে চলেছে বলে বিবেচনা করা যায়।

স্থানীয় জুম্মদের আশংকা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায়, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং চুক্তির আলোকে স্থাপিত বিশেষ শাসনব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায়, সর্বোপরি সেনাবাহিনী ও সরকারের চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম বিদ্বেষী ভূমিকার কারণে এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প জুম্মদের বর্তমান ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও সুদুরপ্রসারী আরও অনেক ক্ষতি ডেকে আনবে। এতে বহিরাগত অনুপ্রবেশ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বহিরাগত পুঁজির আধিপত্য, ভূমি বেদখল ও স্থানীয়দের ভূমি বেহাত হওয়ার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে, যাতে জুম্মদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বশাসন নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থস্থান কান্তজী মন্দিরের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা

0

হিল ভয়েস, ২৩ মার্চ ২০২৪, ঢাকা: পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজী মন্দিরের দেবোত্তর ভূমিতে অবৈধভাবে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

পরিষদের সভাপতিত্রয় প্রাক্তন সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত এক বিবৃতিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাকারিয়া জাকা কর্তৃক কান্তজী মন্দিরের দেবোত্তর ভূমিতে মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং এই অবৈধ কাজের প্রধান উদ্যোক্তা হওয়ায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবিরোধী এই অপচেষ্টার সাথে নিজেদেরকে যুক্ত করে জাতি ও দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের ঘৃণ্য অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছেন যা নিঃসন্দেহে দেশের শান্তি শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

পরিষদ হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা সুনিশ্চিতকরণে কান্তজী মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

আজ (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজল দেবনাথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক এই বিবৃতিদানের কথা জানানো হয়েছে।

বাঘাইছড়িতে সেনা ও বিজিবির অদ্ভুত সাইনবোর্ড: সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ভূমি বেদখলের নতুন কায়দা

0

হিল ভয়েস, ২২ মার্চ ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদন:সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়িতে সীমান্ত সড়ক ও সীমান্ত সংযোগ সড়ককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক স্থানীয় আদিবাসী জুম্মদের বিভিন্ন আবাসভূমিতে স্থানীয় নামের বিপরীতে বহিরাগত মুসলিম ব্যক্তির নামে নতুন নাম সম্বলিত অদ্ভুত সাইনবোর্ড স্থাপন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় জনগণ ও পর্যবেক্ষমহলের ধারণা, সেনাবাহিনী ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন বিজিবি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং স্থানীয় জুম্মদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের লক্ষেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এইসব সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। বলাবাহুল্য, ওই সাইনবোর্ডে উল্লিখিত স্থানের নামের সাথে স্থানীয় জনগণের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কোনো সম্পর্কই নেই।

এধরনের সাইনবোর্ড স্থাপনের কয়েকটি উদাহরণ হল- বাঘাইছড়ির সার্বোয়াতলী এলাকার ভিজে হিজিং নামক স্থানের জায়গায় ‘শাহীন টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়া স্থানের জায়গায় ‘মাহমুদ টিলা’, সাজেক এলাকার দুরবাছড়া স্থানের জায়গায় ‘এনামুল টিলা’, সাজেক এলাকার বটতলা নামক স্থানের জায়গায় ‘সজিব টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়ার স্থানে আরো একটি ‘শামিম টিলা’, সাজেক এলাকার ভুইয়োছড়া নামক স্থানের জায়গায় ‘সাইদুর টিলা’, সাজেক এলাকার কিংকরপাড়ায় আরো একটি ‘ইসমাইল টিলা (বিওপি পোস্ট)’, সাজেক এলাকার ভুইয়োছড়া নামক জায়গায় আরো একটি ‘আল-আমিন টিলা’ ইত্যাদি নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐ এলাকাতে যুগ যুগ ধরে আদিবাসী জুম্মরাই বসবাস করে আসছে এবং জুমচাষ ও বাগান-বাগিচা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ঐ সকল স্থানে কোনো মুসলিম বাঙালির বসতি ছিল না এবং নেই। সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা যাদের নামে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে তাদের নামও কখনো শোনেনি ঐ এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঘাইছড়ির এক অধিকারকর্মী বলেন, এটা জুম্ম বিদ্বেষী সেনাবাহিনীরই ষড়যন্ত্র। এটা জুম্মদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বদলে দেবার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এই ধরনের সাইনবোর্ড স্থাপন বহিরাগত অনুপ্রবেশকেও উস্কে দেবে।

এছাড়া সীমান্ত সড়ক ও সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সড়কের আশেপাশে আকর্ষণীয় বহু জায়গা বাছাই করে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে সেখানে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বলে উল্লেখ করে দখল করে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। পাশাপশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমত কারো কারো জায়গায়, এমনকি স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গায়ও সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে দেখা যায়। এতে তারা স্থানীয় জনগণকেও ঐ এলাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করছে।

এর কয়েকটি উদাহরণ হল- (১) বাঘাইছড়ির সারোয়াতলী ইউনিয়নের রেগাছড়া নামক স্থানে স্থাপিত ‘মহাসাতিপট্ঠান ভাবনা কুটির’ নামক বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় সম্প্রতি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বলে সাইনবোর্ড দিয়ে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ, মাটিকাটা সহ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে; (২) লংগদু সেনা জোনের পক্ষ থেকে বাঘাইছড়ির সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর খাগড়াছড়ি এলাকায় জুম্ম বসতবাড়ির পাশে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য নির্ধারিত স্থান’, বৌদ্ধ মন্দির সহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ বলে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে; (৩) লংগদু উপজেলার গুলশাখালীতে শান্তিনগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গাতেই ‘শান্তিনগর বিজিবি ক্যাম্প, রাজানগর জোন ৩৭ বিজিবি’ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

এই ধরনের কর্মকান্ডকে জুম্মদের উপর চরম ইসলামী সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসন এবং জুম্মদের ঐতিহ্য ও নাম-নিশানা নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে বিবেচনা করা যায়। এটা নিশ্চিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম (উপজাতি) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের যে অঙ্গীকার ও বিধান রয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার ও সেনাবাহিনী তা সম্পূর্ণভাবে বরখেলাপ করছে এবং জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের উপর গভীর আঘাত সৃষ্টি করে চলেছে বলে বিবেচনা করা যায়।

স্থানীয় জুম্মদের আশংকা, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায়, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং চুক্তির আলোকে স্থাপিত বিশেষ শাসনব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায়, সর্বোপরি সেনাবাহিনী ও সরকারের চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম বিদ্বেষী ভূমিকার কারণে এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প জুম্মদের বর্তমান ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও সুদুরপ্রসারী আরও অনেক ক্ষতি ডেকে আনবে। এতে বহিরাগত অনুপ্রবেশ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, বহিরাগত পুঁজির আধিপত্য, ভূমি বেদখল ও স্থানীয়দের ভূমি বেহাত হওয়ার প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে, যাতে জুম্মদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বশাসন নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তে ৩১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্প-১ম পর্যায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কারণে এ পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) অন্তত ৭৭৬টি জুম্ম পরিবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৭৮টি পরিবার নিজের বাড়ি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজে জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী পাশাপাশি ২টি জুম্ম গ্রামের মোট ২৩ পরিবার জুম্ম পরিবার উচ্ছেদের মুখে রয়েছে। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে তাদের গ্রামে ছেড়ে চলে যেতে বলেছে এবং জুমচাষে বাধা প্রদান করছে।

দুই পাহাড়ি গ্রাম উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

0

হিল ভয়েস, ২১ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: আজ ২১ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী গাছবাগান পাড়া ও থুমপাড়া নামে দুটি গ্রাম উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষের ছাত্র-যুব সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ঢাকার শাহবাগে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও তার পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), ঢাকা মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল চাকমার সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদ এর সভাপতিত্বে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নানু, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী’র সভাপতি অতুলন দাস আলো, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) এর সভাপতি গৌতম শীল, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা ও বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি দনওয়াই ম্রো প্রমুখ।

উক্ত সমাবেশে বিবৃতি পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি দনওয়াই ম্রো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল ধরে নিপীড়ন-নির্যাতন করে আসছে দেশের শাসকগোষ্ঠী। পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক জেলা পরিষদের প্রকল্পগুলোতে পাহাড়িদের ভালোভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের জীবনমানের উপর সবসময় আঘাত হানা হয়। উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের উপর রোলার কোস্টার চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা বলেন, সীমান্ত সড়কের পাশে পর্যটনের নামে দুটি পাহাড়ি গ্রামকে উচ্ছেদ করার জন্য সেনাবাহিনী পাঁয়তারা চালাচ্ছে। পাহাড়ের মানুষের প্রধান জীবিকা জুম চাষ। এখন জুম চাষ, হলুদ চাষ, আদা চাষ যদি করতে না দেয় এই দেশের শাসকগোষ্ঠী তাহলে আদিবাসীদের জীবনমান কেমন হবে তা আপনারা ভাবুন। আমরা কেউ উন্নয়নের বিরোধী নই, পর্যটনের বিরোধী নই। কিন্তু পর্যটনের নামে যদি আমাদের উচ্ছেদ করা হয়, আমরা সেই উন্নয়নের বিরোধী। পাহাড় থেকে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক ভূমি ব্যবস্থাপনা জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হোক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, পাহাড়-সমতলে ঘটনা নিয়ে আমাদের বারে বারে এই শাহবাগে দাঁড়াতে হয়। যেটি খুবই দুঃখজনক। পাহাড়িদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে উন্নয়ন করাকে আমরা উন্নয়ন হিসেবে দেখি না। ভুক্তভোগী পাহাড়িদের গ্রেপ্তার করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হয়ে যদি তারা ভক্ষক হয় তাহলে হবে না। তারা কেন পর্যটনের ব্যবসা করবে? তারা পাহাড়িদের বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করতে চায়। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে বানচাল করার জন্য শাসকগোষ্ঠী নানারকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি প্রগতিশীল সকল ছাত্র সমাজকে লড়াই-সংগ্রামে থাকার জন্য আহ্বান জানান।

জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী হাজার বছর ধরে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। আর তা বন্ধ করার জন্য অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। একটি রাষ্ট্র যখন তার সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে সমান চোখে দেখে না তা খুবই লজ্জাজনক। দুঃখ হলেও সত্যি যে, আজকে সেনাবাহিনী উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। উন্নয়নের নামে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। রাষ্ট্রের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা বন্ধ করুন।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেন, যেকোনো উন্নয়ন সেটা জনবান্ধব হতে হবে। সাজেকের লুসাইদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া করা হয়েছিল। একধরনের ব্যবসায়িক গোষ্ঠী লুট করে যাচ্ছে আর সরকার তা করার জন্য সহযোগিতা প্রদান করবে তা আমরা হতে দিব না।

বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস আলো সমাবেশের সাথে সংহতি জ্ঞাপন করে বলেন, সমতলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা সরকার করে। কিন্তু পাহাড়ের বিষয়টা অন্যরকম। যেমন খুশি তেমন সাজো একটা অবস্থা। কিন্তু পাহাড়ে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া তো হয় না। উল্টো রাতের বেলা বিশেষ বাহিনীকে পাঠিয়ে পাহাড়িদের গুম করে দেওয়া হয়। একটি রাষ্ট্রে দুইটি নীতি হতে পারে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে বাঙালির রক্তের পাশাপাশি পাহাড়িদেরও রক্ত আছে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে এইসকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন সুপেয় পানির ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো মানের শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে। মৌসুমি পর্যটকদের ছুড়ে দেওয়া একটি চকলেটের পিছনে পাহাড়ি শিশুদের ছুটে চলা এই ব্যবস্থা আমরা হতে দিব না।

বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ-সভাপতি টনি চিরান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বলতে চাই আমরা জাতীয় জাদুঘরের বাক্সে শুধু থাকতে চাই না। আমরা ভূমি অধিকার সহ সকল ধরনের অধিকার চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয় নাই। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ইন্ধনে আজ পাহাড়ে ধর্ষণ, নিপীড়ন, গুম চলমান রাখা হয়েছে। তা যদি বন্ধ না হয় পাহাড়-সমতলের রাজপথে আমরা সংগ্রাম জারি রাখব।
সংহতি বক্তব্যে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নানু বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চলে সমানভাবে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের সমান নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়নি। পার্বত্য চুক্তি ২৬ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। পাহাড়ে ভূমি বেদখল বন্ধ হয় নাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর হয় নাই। সরকার একটি বাহিনীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য পাহাড়ের সমস্যাকে সমাধান করছে না। সীমান্ত সড়ক বানানোর জন্য কেন গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ করা হবে। এইভাবে উচ্ছেদ করতে থাকলে পাহাড়িরা কোথায় যাবে? যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটি জমিও খালি রাখা যাবে না। তাহলে আজ কেন পাহাড়িদের জুমচাষ না করার জন্য বলা হচ্ছে?

সভাপতির বক্তব্যে তৌহিদুর রহমান তৌহিদ বলেন, পাহাড়িদের উচ্ছেদ করার যে অভিযান চালানো হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের আদিবাসীদেরকে সমান অধিকার দিতে হবে। কাপ্তাই বাঁধের মাধ্যমে পাহাড়িদের উদ্বাস্তু করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে সেসকল উদ্বাস্তুদের পূনর্বাসনের কথা বলা হলেও দিনশেষে পার্বত্য চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন করা হয় নাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করা হলেও কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন করা হয় না। তিনি আরও বলেন, পর্যটন প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের রাখতে হবে। ইকো ট্যুরিজম নিশ্চিত করতে হবে। যে দুটি গ্রামকে উচ্ছেদ করে পর্যটন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে তা বন্ধ করে গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।

সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত ৮দফা দাবি জানানো হয়-

১। পর্যটনের নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদ বন্ধ করা।
২। পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ করা।
৩। গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা বিধান করা।
৪। গ্রাম ত্যাগ করার নির্দেশ প্রত্যাহার করা।
৫। গ্রাম সংলগ্ন পর্যটন স্থাপন না করা।
৬। জুম চাষে কোনো বাধা প্রদান না করা।
৭। সীমান্ত সড়ক প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।
৮। পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক অবিলম্বে জেলা পরিষদের নিকট পর্যটন খাতকে হস্তান্তর করা।

বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি সীমান্তে ২টি গ্রাম উচ্ছেদের প্রতিবাদে গ্রামবাসীর মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

0

হিল ভয়েস, ১৯ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড কর্তৃক জুরাছড়ি-বিলাইছড়ির সীমান্তবর্তী গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়া উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে দুই গ্রামবাসী মানববন্ধন এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ ফটকে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুলু পাড়ার কাবার্রী অজিত কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন থুম পাড়ার বাসিন্দা মদন বিকাশ চাকমা, দুলু পাড়ার বাসিন্দা পূন্যরানী চাকমা। এছাড়াও মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উলিসিং মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টু মনি তালুকদার ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা।

মানববন্ধন শেষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৪টি দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়ার পাহাড়ি অধিবাসীদের পক্ষে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর প্রদান করেন অজিত কুমার চাকমা, মদন বিকাশ চাকমা, চিবোক্ষ চাকমা ও পূন্যরাণী চাকমা। ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সজল চাকমার সঞ্চলনায় স্মারকলিপি পাঠ করেন বৃষ্টি চাকমা।

স্মারকলিপিতে বলা হয় যে, সেনাবাহিনী ঐ এলাকায় সীমান্ত সড়ককে কেন্দ্র করে তাদের পর্যটন ব্যবসার বিকাশের লক্ষে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং স্থানীয় জুম্মদের মৌলিক ও মানবাধিকারকে লংঘন করে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে দুই গ্রামের অধিবাসীকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং দুটি গ্রামের ১৭ পরিবারদেরকে তাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন জুমচাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে এবং উক্ত দুই গ্রাম উচ্ছেদ হলে, এর সাথে সাথে শুক্করছড়ি, চঙরাছড়ি, দুলুবাগান, বিলাইছড়ির মন্দিরাছড়া ও জুরাছড়ির মন্দিরাছড়া ইত্যাদি পাহাড়ি গ্রামগুলিও উচ্ছেদ হতে বাধ্য হবে।

গত ৯ মার্চ ২০২৪ চাইচাল সেনা ক্যাম্পের সুবেদার প্রিয় রঞ্জন চাকমার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল গাড়িযোগে গাছবাগান পাড়া গ্রামে উপস্থিত হয়ে গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়া গ্রামবাসীদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে ডেকে একটি সভা করে। এসময় সুবেদার প্রিয় রঞ্জন চাকমা গাছবাগান পাড়া গ্রামের ১২ পরিবারকে অচিরেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং তা না হলে আগামীতে খারাপ সময়ের সম্মুখীন হতে বলে হুমকি প্রদান করেন। এসময় সেনা সদস্যরা আরো জানিয়ে দেয় যে, তারা থুম পাড়া ও গাছবাগান পাড়ার মধ্যবর্তী পিলার চুগ ও লাঙেল টিলাতে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করবে, তাই সেখানে ও আশেপাশের এলাকায় জুম কাটা যাবে না এবং ইতোমধ্যে কাটা জুমগুলোতে আগুন দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ এই দুই গ্রামে ও আশেপাশের এলাকায় জুমচাষ করা যাবে না।

এর পরদিনই (গত ১১ মার্চ) সেনাবাহিনী এক্সকেভেটর দিয়ে পিলার চুগ ও লাঙেল টিলায় মাটি কাটা শুরু করে এবং বুদ্ধলীলা চাকমার কাটা জুম ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। এর পূর্বে গত ৬ মার্চ সেনাবাহিনী বীরসেন তঞ্চঙ্গ্যার কাটা জুম এক্সকেভেটর দিয়ে ধ্বংস করে দেয়।

সর্বশেষ গত ১২ মার্চ ২৯২৪ চাইচাল সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার ক্যাপ্টেন কবির ও সুবেদার প্রিয় রঞ্জন চাকমা গাছবাগান পাড়া গ্রামের কার্বারি (গ্রাম প্রধান) থুদো চাকমার বাড়িতে গিয়ে জুমের তালিকা চেয়েছেন। এসময় ক্যাপ্টেন কবির কার্বারি থুদো চাকমাকে বলেন, ‘তালিকা দিলেও পাড়া ছাড়তে হবে, না দিলেও পাড়া ছাড়তে হবে। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো কখনও লাভ হয়নি। অতএব, সরকারের বিরুদ্ধে না গিয়ে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও।’ এসময় ক্যাপ্টেন কবির রাতের মধ্যে জুমের তালিকা ক্যাম্পে গিয়ে জমা দিতে নির্দেশ দিয়ে যান।

স্মারকলিপিতে বলা হয় যে, গত ৮ মার্চ ২০২৪ বিকাল আনুমানিক ৩ টায় হেলিকপ্টার যোগে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সাইফুদ্দিন আহমেদ চাইচাল সেনা ক্যাম্পে সফর করেন। এর পরের দিনই (৯ মার্চ) চাইচাল ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা গ্রামে গিয়ে গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়ার জুম্ম গ্রামবাসীদের এই মর্মে জানিয়ে দেন যে, সেনা প্রধানের নির্দেশ জুমচাষ বন্ধ করতে হবে এবং গাছবাগান পাড়ার ১২ পরিবারকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয় যে, আমরা গাছবাগান পাড়া ও থুম পাড়ায় বর্তমানে ২৩টি পাহাড়ি পরিবার বসবাস করে আসছি। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরপরই ১৯৯৮ সাল থেকে এই জুম্ম পরিবারগুলো সেখানে বসতিস্থাপন শুরু করি। আমাদের প্রধান জীবিকা জুমচাষ। বিগত ২৪/২৫ বছরে তাদের অনেকেই কলাবাগান, আম-কাঠাল বাগান, ঝাড়–ফলের বাগান গড়ে তুলেছি। জুমে অনেকে ধানচাষের পাশাপাশি আদা, হলুদ, তিল, মরিচ ইত্যাদি চাষও করেছি।

সেনাবাহিনীর জুমচাষে নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে তারা অত্যন্ত দিশেহারা অবস্থায় পড়েছে। তাদের বাড়ি, ভূমি ও জীবিকা রক্ষায় গ্রামবাসীরা গ্রাম ত্যাগ করার নির্দেশ প্রত্যাহার করা; গ্রাম সংলগ্ন পর্যটন স্থাপন না করা; জুম চাষে কোর বাধা প্রদান না করা এবং বাগান-বাগিচা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা- এই চারটি দাবি জানিয়েছে। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ পাওয়া এই গ্রামবাসীরা বর্তমানে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

সদয় অবগতি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে।

আলীকদমে সেটেলার বাঙালির নির্মম মারধরের শিকার ৬ আদিবাসী ম্রো নারী ও শিশু

0
ছবি: হামলায় আহত ম্রো নারীদের জখমের চিহ্ন

হিল ভয়েস, ১৮ মার্চ ২০২৪, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন আলীদকম উপজেলার ১নং আলীকদম সদর ইউনিয়নে এক মুসলিম সেটেলার বাঙালি যুবকের হামলায় ছয় আদিবাসী ম্রো নারী ও শিশু নির্মমভাবে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে গুরুতর জখম তিন নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হামলাকারী সেটেলার যুবকের নাম- মোঃ শাহ উদ্দিন (২৫), পীং-মোঃ ফজল কবির, গ্রাম-নজুমিয়া সর্দার দক্ষিণ-পূর্ব পালং পাড়া, ৩নং ওয়ার্ড, ১নং সদর আলীকদম ইউনিয়ন।

ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আলীকদম থানায় মামলা করতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সেটেলারদের মুরুব্বিদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করার প্রস্তাব দেন।

মারধরের শিকার ৬ জুম্ম নারী ও শিশু হলেন- (১) ছংপা ম্রো (৩৬), স্বামী-ছাকনাই ম্রো; (২) লেংরুং ম্রো (২২), স্বামী-মেনপ্রে ম্রো; (৩) হিলিউ ম্রো (১৩), পীং-ছাকনাই ম্রো; (৪) বুরাও ম্রো (১৩), পীং-সুইলাপ্রু ম্রো; (৫) তুংটক ম্রো (৫০), স্বামী-রুইরেং ম্রো ও (৬) নংপাও ম্রো (১৯), স্বামী-খামচুম ম্রো। ভুক্তভোগীরা সবাই ১নং সদর আলীকদম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আমতলি সাতক্লাম ম্রো পাড়ার অধিবাসী।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে উক্ত ছয় ম্রো নারী ও শিশু নিজেদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী তৈনখাল এলাকার ঝিড়িতে ও জঙ্গলে শাক-সবজি, মাছ-চিংড়ি, শামুক ইত্যাদি তরকারি খুঁজতে যান। তরকারি খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে তারা গুইসাপ ঝিড়ি মুখ এর নীচে এক স্থানে পৌঁছেন। এমন সময় হঠাৎ কোনো প্রকার উস্কানি বা কথাবর্তা ছাড়াই মোঃ শাহ উদ্দিন নামের সেটলার বাঙালি যুবকটি লাঠিসোটা নিয়ে জুম্ম নারী ও শিশুদের উপর হামলা শুরু করে।

ভুক্তভোগীরা জানান, ‘আমার জমির মাটি ভেঙে পড়বে, এখানে আসতে পারবে না, এখানে কেন আসছ’ বলেই আর কোনো কিছু না বলে মোঃ শাহ উদ্দিন আচমকা লাঠি দিয়ে তাদেরকে মারধর শুরু করে। মারতে মারতে কয়েকটা লাঠি ভেঙে যায়।

লাঠির আঘাতে বিশেষ করে ছংপা ম্রো (৩৬), লেংরুং ম্রো (২২) ও তুংটক ম্রো গুরুতরভাবে জখম হন। তাদের হাতে, পায়ে, কাঁধে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন সৃষ্টি হয়। পরে তাদেরকে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, ঘটনার পরপরই গ্রামের কার্বারি সুইসামং ম্রো’র নেতৃত্বে ভূক্তভোগীরা আলীকদম থানায় অভিযোগ করতে গেলে ঐসময় সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা (নাম জানা যায়নি) মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পুলিশ কর্মকর্তা কার্বারি ও ভুক্তভোগীদের বলেন যে, মামলা করলে টাকা খরচ হবে। আপনারা বরং অভিযুক্ত ব্যক্তির মুরুব্বিদের সাথে সামাজিকভাবে আলোচনা করে সমঝোতার চেষ্টা করেন।

শ্রীমঙ্গলে আদিবাসী ভাষা লেখকদের নিয়ে পরামর্শ সভা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত

0

হিল ভয়েস, ১৭ মার্চ ২০২৪, সিলেট: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় (খাসিয়া, মনিপুরী মৈতৈ ও মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া) শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক দুই দিনব্যাপী পরামর্শ সভা ও লেখক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০ ঘটিকায় হোটেল শ্রীমঙ্গল ইন এর সম্মেলন কক্ষে জাবারাং কল্যাণ সমিতির আয়োজনে এ কর্মশালা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাওয়ানকা ফান্ড অব RSF সোস্যাল ফাইন্যান্স এর অর্থায়নে পরিচালিত সঞ্জীবন প্রকল্পের উদ্যোগে এই পরামর্শ সভা ও লেখক কর্মশালা হয়।

জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক লেখক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সঞ্জীবন প্রকল্পের সমন্বয়কারী জয় প্রকাশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক ২০২৩ প্রাপ্ত মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া লেখক-গবেষক ড. রঞ্জিত সিংহ, মনিপুরী মৈতৈ লেখক আয়েকপম অঞ্জু দেবী, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সভাপতি ও খাসি মান্রী জিডিশন প্রধান সুছিয়াং, আদিবাসী নারী নেত্রী ফ্লোরা বাবলি তালাং প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু তালেব বলেন, ‘নিজ নিজ মাতৃভাষা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ভাষার জাতিগোষ্ঠীকে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে, নিজের মাতৃভাষাকে ভালবাসতে হবে। সরকার এবং উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।’

কর্মশালায় অংশ নিয়ে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ নির্ধারিত ৬টি ভাষা মৈতৈ মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি, খাসিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, বম ও ম্রো ভাষায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।

দুইদিন ব্যাপী এ পরামর্শ কর্মশালা গত রবিবার (১৭ মার্চ) বিকালে শেষ হয়।

নানিয়াচরের বগাছড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক চাকমা যুবক খুন

0

হিল ভয়েস, ১৫ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়াচর উপজেলার বগাছড়ি এলাকায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক জিকন চাকমা (২৬) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মার্চ ২০২৪ দুপুরের দিকে জিকন চাকমা (২৬), পিতা: নিরঞ্জয় চাকমা, গ্রাম: ব্যাঙমারা হলা মো: জিয়া নামের এক বাঙালি ব্যবসায়ীকে মোটর সাইকেল যোগে ইসলামপুরে পৌঁছে দিয়ে বটতলা মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে যায়। সেখান থেকে বিকাল আনুমানিক ৪:৩০ ঘটিকার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে বগাছড়ি জামে মসজিদ এলাকার রাস্তা মাথায় পৌঁছলে সেটেলার বাঙালিরা তার উপর হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর ও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয় কয়েকজন বাঙালি জিকন চাকমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সিএনজিযোগে নানিয়াচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জিকন চাকমাকে রাঙ্গামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাঙ্গামাটি নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নানিয়াচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মুমূর্ষু অবস্থায় জিকন চাকমা আলমগীর নামটি দুবার উচ্চারণ করে। সন্দেহ করা হচ্ছে সেটেলার মো: আলমগীর (২৮), পিতা: মো: মোশারফ, গ্রাম: বগাছড়ি এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

বিলাইছড়িতে সেনামদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক জুম্ম গ্রামবাসীর হলুদ লুট, ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি

0

হিল ভয়েস, ১৫ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা সদর এলাকা থেকে এক জুম্ম গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৮ মন পরিমাণ শুকনা হলুদ লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সন্ত্রাসীরা ওই জুম্ম গ্রামবাসীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করেছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ ১৫ মার্চ ২০২৪ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টার দিকে সাগর চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের একটি দল বিলাইছড়ি উপজেলা সদর বাজার ঘাট থেকে সুন্দরমনি চাকমা (৪৭), পীং-অজ্ঞাত নামে এক জুম্ম গ্রামবাসীর কাছ থেকে সাড়ে ৮ মন পরিমাণ শুকনো হলুদ লুট করে নিয়ে যায়। এসময় সন্ত্রাসীরা সুন্দরমনি চাকমার কাছে ১০ হাজার টাকা চাদাও দাবি করে এবং না দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি প্রদান করে। এরপর অন্যান্য জুম্ম কাঁচামাল বিক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, সুন্দরমনি চাকমা নিজেদের চাষ করা ঐ শুকনো হলুদ বিক্রির জন্য বাজারে আনেন। ঐ হলুদের বর্তমান বাজারমূল্য ৬৪ হাজার টাকার চেয়ে বেশি।

একটি সূত্র জানায়, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা স্থানীয় সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে বিলাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হেডম্যান-কার্বারি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের রাঙ্গামাটির জীবতলিতে অবস্থিত আস্তানায় কয়েকবার ডেকে সভা করে, চিঠি দিয়ে এবং বিভিন্ন ভাবে চাঁদা দাবি করে আসছিল। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায় সন্ত্রাসীরা তাদেরকে মারধরসহ বিভিন্ন কায়দায় হুমকি দিয়ে আসছিল।

সাজেকে স্কুলের সমাবেশস্থলে বিজিবির দোকান নির্মাণ

0

হিল ভয়েস, ১৪ মার্চ ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিতে সাজেক জুনিয়ন হাই স্কুলের সমাবেশস্থলে মারিশ্যা বিজিবি জোন কর্তৃক দোকান নির্মাণের খবর পাওয়া গেছে। এতে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করতে শিক্ষকদের চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এনিয়ে এলাকাবাসী, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।

সাজেক ভ্যালির রুইলুইয়ে সড়কের পাশে সাজেক জুনিয়র হাইস্কুলের অবস্থান। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ের সামনে সেমিপাকা ছয়টি দোকানে ছাউনি দেওয়া হচ্ছে। দোকানগুলোর কারণে বিদ্যালয়ে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একটি সরু পথ দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করছে। বিদ্যালয়ের সমাবেশস্থলে এসব দোকান তৈরি করায় শিক্ষার্থীরা সমাবেশও করতে পারছে না।

বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা তিনটি। শিক্ষকদের জন্য কক্ষ একটি। দোকান নির্মাণকাজের সুবিধার্থে লাইব্রেরির কক্ষটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। লাইব্রেরির বইগুলো শিক্ষকদের কক্ষে রাখা হয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়কে এখন তাদের কাছে একটি বদ্ধ ঘর মনে হয়। শ্রেণিকক্ষের পাশে নির্মাণকাজ চলতে থাকায় তারা পাঠে মনোযোগী হতে পারছে না। শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হলে পাকা দেয়াল যেন নাকে-মুখে লেগে যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ববীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘স্কুলটি বাঘাইছড়ি মারিশ্যা বিজিবি জোন পরিচালনা করছে। দোকান নির্মাণের আগে আমাদের বলা হয়েছিল দোকান থেকে যে আয় আসবে সে টাকা দিয়ে স্কুল পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হবে। সাজেক ভ্যালির মসজিদের পাশে স্কুলের নামে দেড় একর জায়গা আছে সেখানে এটি স্থানান্তরের কথা। কিন্ত বিগত ৮-১০ বছর আগে থেকে স্থানান্তরের কথা বলা হলেও এখনো স্থানান্তর করা হয়নি।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। সাজেকে এই স্কুলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার পরিবেশ দেওয়া হলে এখানে আরও দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। দ্রুত এর নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে এলাকার জন্য মঙ্গল হবে।’

বিদ্যালয়ের আশপাশে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। স্থানীয় বেটলিং, শিয়ালদাহ ও তুইচুই এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু বসার জায়গা ও শ্রেণিকক্ষের সংকটে ভর্তি করাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

রুইলুই মৌজার হেডম্যান এল থাংগ্যা পাংখোয়া বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। এটা বিজিবি করছে। আমরা কিছুই বলতে পারি না। এ কথা বললে শুধু চোখের পানি চলে আসে। এ কাজ বন্ধ করতে হলে আমাদের মিছিল করতে হবে। স্কুলের নামে আমি দেড় একর রেকর্ড করা জায়গা দিয়েছি। সে জায়গায় মসজিদ করা হয়েছে। স্কুল হবে বলা হয় তা অনেক বছর ধরে। এরপরে মসজিদ উঠে গেছে। স্কুলের খবর নেই।

সাজেক জুনিয়ন হাই স্কুলের সমাবেশস্থলে মারিশ্যা বিজিবি জোন কর্তৃক দোকান নির্মাণ

বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, স্থানীয়রা তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য ১৯৯৮ সালে সাজেক জুনিয়র হাইস্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজেকে এলে তাঁর সম্মানে মারিশ্যা বিজিবি জোন বিদ্যালয়টি সংস্কার করে নাম দেয় রুইলুই জুনিয়র হাইস্কুল। এর পর থেকে বিজিবি স্কুলটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি অফিশিয়াল জটিলতায় পড়লে এর নাম প্রতিষ্ঠাকালীন নামে ফিরিয়ে আনা হয়।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, ‘আমরা স্থানীয় অভিভাবকেরা ও জনপ্রতিনিধিরা স্কুল সম্পর্কে কথা বলতে পারি না। স্কুলটি রুইলুই মৌজায় অন্তর্ভুক্ত। এই স্কুল অনেক বছর হলো করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি এটি এমপিওভুক্ত করা হোক। কিন্তু বিজিবি নিয়ন্ত্রণের নেওয়ার পর সব কাজ থমকে যায়। এই স্কুল নিয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না স্থানীয়রা। এখন এর সামনে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। সাজেক ভ্যালিতে যেভাবে রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, এতে স্কুল নির্মাণ করার জায়গা তো কমে এসেছে।’

এ বিষয়ে মারিশ্যা বিজিবি মিডিয়া ইউং হাবিলদার মো. সাখাওয়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা সিরাজ মাস্টারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

সিরাজ মাস্টার বলেন, ‘স্কুলের ব্যয় অনেক। এই ব্যয় নির্বাহের জন্য স্কুলের সামনে দোকান করা হচ্ছে সেটা জানি। নতুন জায়গায় নতুন বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখা হয়েছে। তবে জানামতে প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি। টেন্ডারও হয়নি। তবে হবে। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করতে আবেদন করা হয়েছে। বোর্ড থেকে কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গেছেন।’

নতুন বিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত পাঠদান ব্যাহত করে বিদ্যালয়ের সামনে কেন দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজ মাস্টার বলেন, ‘এ বিষয়ে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানবে। আমরা তাঁদের বাইরে কোনো কথা বলতে পারি না। তারা সব জানবেন।’

তথ্যসূত্র : আজকের পত্রিকা