Home Blog

যৌথ বাহিনী কর্তৃক আরও ২৩ জন নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক, সর্বমোট ৭৭

0

হিল ভয়েস, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচিতে সেনাসৃষ্ট কেএনএফ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর পরিচালিত তথাকথিত অভিযানে বিগত সাত দিনে আরও ২৩ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করা হয়েছে এবং ১২ জনকে সাময়িক আটক করে হয়রানি করা হয়েছে।

এ নিয়ে গ্রেপ্তার ও আটকের শিকার আদিবাসী জুম্ম নারী ও পুরুষের সংখ্যা দাঁড়ালো সর্বমোট ৭৭ জন। পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত ৫৪ জন বম নারী ও পুরুষের মধ্যে অধিকাংশই নিরীহ হলেও তাদের কাউকে ছেড়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে যৌথ বাহিনী কর্তৃক শুরু থেকেই নির্বিচারে সাধারণ ও নিরীহ বম জনগোষ্ঠীর নারী ও পুরুষদের গ্রেপ্তার এবং নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠছে। ইতিপূর্বে কেবল বম সম্প্রদায়ের লোকদের গ্রেপ্তার করা হলেও সম্প্রতি আটককৃতদের অধিকাংশই ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নিরীহ গ্রামবাসী বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, ডাকাতি ঘটনার পর যৌথ বাহিনী এ পর্যন্ত কেএনএফ-এর কোনো সক্রিয় ও সশস্ত্র সদস্যকে আটক করতে পারেনি এবং লুণ্ঠিত অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি। কিন্তু বান্দরবান সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে, জনগণের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী কেএনএফ দমনের নামে অভিযান পরিচালনা এবং নিরীহ জনগণকে নির্বিচারে আটক ও গ্রেপ্তার করছে।

গত ১৬ এপ্রিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন তার এক প্রেস বিবৃতিতে, কিছু কেএনএফ সদস্যের কর্মকান্ডের কারণে সমগ্র বম সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং সম্মিলিত শাস্তির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে নিরীহ নাগরিকদের মুক্তি ও সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, গতকাল ১৬ এপ্রিল ২০২৪ যৌথবাহিনী অভিযানের সময় বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন থেকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৮ নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, গতকাল সকালের দিকে ওই গ্রামবাসীরা নিজেদের গরু খুঁজতে পাশর্^বর্তী জঙ্গলে যায়। যৌথবাহিনী খবর পেয়ে ওই গ্রামবাসীদের ধরে নিয়ে আসে। আটককৃত উক্ত গ্রামবাসীরা হলেন- বড়থলি ইউনিয়নের শেপ্রু পাড়া গ্রামের বীরবাদু ত্রিপুরা (৩০), গুণীজন ত্রিপুরা (৫০), বীর্নজয় ত্রিপুরা (২০), শিমন ত্রিপুরা (২৫), ধুপপানিছড়া পাড়ার কার্বারি জাতিরায় ত্রিপুরা (৪১), প্যাট্রিক ত্রিপুরা (২৬) এবং হাতিছড়া পাড়া থেকে জ্যাকব ত্রিপুরা (৩২) ও কৃষ্ণচন্দ্র ত্রিপুরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বি বলেন, কেএনএফ-এর সাথে উক্ত গ্রামবাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও যৌথবাহিনী এই গ্রামবাসীদের কেএনএফ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

একইদিন (১৬ এপ্রিল) সেনাবাহিনী বান্দরবান সদর উপজেলার কালাঘাটা বড়ুয়াটেক নামক স্থান থেকে খ্রিস্টান মিশনারি হোস্টেল এর সুপার অলিয়া বম (২৬), পীং-ভানমুনসিয়ান বম, গ্রাম-গেৎসিমানি পাড়া নামে একজন বম নারীকে আটক করে।

এর পূর্বে গত ১৪ এপ্রিল ২০২৪ যৌথবাহিনী রুমা উপজেলার বেথানি ত্রিপুরা পাড়া থেকে কেএনএফ-কে সহযোগিতা করার কারণ দেখিয়ে কার্বারি রতিচন্দ্র ত্রিপুরা (৫৮), পীং-গঙ্গামনি ত্রিপুরা; নটরডেম কলেজে পড়ুয়া ছাত্র কার্বারির ছেলে সুকান্ত ত্রিপুরা (২১); রখাচন্দ্র ত্রিপুরা (২১); আব্রাহাম ত্রিপুরা (৩০); পিন্টু ত্রিপুরা (৩০),পীং-শৈতোহা ত্রিপুরা এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১ জন সহ মোট ৬ জন নিরীহ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে আটক করে। আটকের পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ ধরে আটককৃতদেরকে ‘কেএনএফের ক্যাম্প কোথায় এবং কতদিন ধরে কেএনএফ সদস্যরা বেথানি পাড়াকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছে?’ ইত্যাদি প্রশ্ন করে রাতেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়।

জানা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএফ বিরোধী অভিযান শুরু করার পরপরই বম অধ্যুষিত লাইরুনপি পাড়া, মুনলাই পাড়া ইত্যাদি পাড়াগুলোর সাধারণ বম জনগণ পাড়া ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ফলে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা মুনলাই পাড়ার পার্শ্ববর্তী বেথানি পাড়াকে কেন্দ্র করে অবস্থান করে আছে বেশ কিছুদিন ধরে।
একই দিন (১৪ এপ্রিল) পুলিশ সাম্প্রতিক রুমা ও থানচির ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সন্দেহভাজন আসামী বলে বান্দরবান সদর থেকে বম জনগোষ্ঠীর আরও ৪ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- লাল রৌবত বম (২৭), পীং-লাল মিন সাওম বম, গ্রাম-রেমাক্রি প্রাংসা; লাল লোম খার বম (৩১), পীং-লিয়ান জুয়াম বম, গ্রাম-কুহালং; মিথুসেল বম (২৫), পীং-রুয়াল লাই বম, গ্রাম-পাইন্দু ইউনিয়ন এবং লাল রুয়াত লিয়ান বম (৩৮), পীং-রামকুপ বম, গ্রাম-বান্দরবান সদর।

গত ১৩ এপ্রিল, রাত ৯:৩০টায়, সেনাবাহিনী রেইচা সেনা চেকপোস্টে বান্দরবান থেকে ঢাকাগামী একটি শ্যামলী বাস থেকে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাংসিংময় বম (২১), পীং-লাল তিন খুম বম, গ্রাম-লাইমি পাড়া; ঢাকা প্রাইম কলেজ অফ নার্সিং-এর ছাত্রী রাম ঝাউ কিম বম (২২), পীং-লাল তিন খুম বম, গ্রাম-লাইমি পাড়া; গাজীপুর পানজুরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সারি লালরম বম (১৫), পীং-লাল কিম বম, গ্রাম-লাইমি পাড়া; ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর ছাত্র লাল লিয়ান নুয়াম বম (২৫), পীং-হাওলিয়ান বম, গ্রাম-লাইমি পাড়া; ঢাকা নটরডেম কলেজের ছাত্র রৌজালিয়ান বম (১৭), পীং-ভানরৌ, গ্রাম-লাইমি পাড়া; ঢাকা সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্র টমাস লালরাম তাং বম (১৭), পীং-লাল রিন সাং বম, গ্রাম-বালাঘাটা নামে ৬ জন বম ছাত্র-ছাত্রীকে আটক করে। পরে রাত ৯:৪০টার দিকে এএসইউ বান্দরবান ইউনিটের প্রধান লেঃ কর্নেল মোঃ ফাহাদ ফয়সাল রেইচা চেকপোস্টে এসে আটককৃতদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর উক্ত ৬ ছাত্রকে বান্দরবান সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরদিন (১৪ এপ্রিল) আটককৃত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর ছাত্র লাল লিয়ান নুয়াম বম-কে রেখে অন্যান্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৫ এপ্রিল, লাল লিয়ান নুয়াম বম এর পিতা ও লাইমি পাড়ার কার্বারি হাওলিয়ান বম বান্দরবান থানায় দেখা করতে গেলে সাথে সাথে পুলিশ কার্বারিকে আটক করে এবং তার ছেলেকে ছেড়ে দেয়।

এর পূর্বে গত ১২ এপ্রিল, যৌথবাহিনী কর্তৃক রুমা উপজেলার জাইয়ন পাড়া থেকে কেএনএফ সন্দেহে তোয়ার লিয়ান বম ও ডেবিড বম নামে ২ জনকে এবং একইদিন বান্দরবান সদরের বালাঘাটা থেকে কেএনএফ সন্দেহে লমথার বম, গ্রাম-চিনলুং পাড়া ও রবার্ট বম, গ্রাম-হেবরন পাড়া নামে আরো ২ জনকে আটক করার খবর পাওয়া যায়।

গত ১১ এপ্রিল, যৌথবাহিনীর সদস্যরা রুমা উপজেলার ইডেন পাড়া থেকে লালরিন তোয়াং বম (২০), পীং-লালচেও, ভাননিয়াম থাং বম (৩৭), পীং-ঙুনদাং বম ও ভানলাল থাং বম (৪৫), পীং-লালমুয়ান বম নামে ৩ জনকে আটক করে। এছাড়া একইদিন নাজিরাট পাড়াতে গিয়ে যৌথবাহিনীর একটি দল ৩টি গ্রেনেড এবং ২০-২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বলে খবর পাওয়া যায়। জানা গেছে, তারা এসময় নাজিরাট পাড়ার কার্বারিকে ধরতে সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু যৌথবাহিনী আসার খবর পেলে পাড়াবাসীরা সবাই ভয়ে পাড়া ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

গত ১০ই এপ্রিল, রাত ১০:৩০টা থেকে যৌথবাহিনীর একটি দল লাইরুনপি পাড়া ও ইডেন পাড়াকে ঘিরে রাখে এবং পাড়ার সমস্ত বম গ্রামবাসীদেরকে রুমার মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যায়। জানা গেছে, ওই গ্রামের পুরুষ ও যুবকরা ভয়ে কয়েকদিন আগেই গা ঢাকা দিয়ে আছে, এসব বম পাড়াগুলোতে এখন শুধু মহিলা আর শিশুরা থাকে।

অপরদিকে ঐদিনই (১০ই এপ্রিল), যৌথবাহিনী আর্থা পাড়া ও বাসতলাং পাড়ার প্রবেশমুখে বমদের কয়েকটি দোকানঘর পুড়িয়ে দেয় বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ৯ এপ্রিল, যৌথবাহিনী রুমার বেথেল পাড়া থেকে কেএনএফ সন্দেহে প্যাস্টর লিয়ান সিয়াম বম (৫৫), পীং-থন আলহ বম নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে। পরে ১০ এপ্রিল, যৌথবাহিনী ওই ব্যক্তিকে বান্দরবান থানায় সোপর্দ করে। একইদিন থানচি থেকে ভানলালবয় বম (৩৩), পীং-জিংতোয়ার বম, গ্রাম-শাহজাহান পাড়া নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে যৌথবাহিনী। তার বিরুদ্ধে থানচি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার সহযোগী হিসেবে মামলা দায়ের করা হয় বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য যে, গত ২ এপ্রিল, রাত ৯ টার দিকে জাওরিন লুসাই (৪২) এর নেতৃত্বে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ১৩ জনের একটি সশস্ত্র দল সোনালী ব্যাংকের রুমা উপজেলা শাখায় ডাকাতি করে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজারকেও অপহরণ করে নিয়ে যায়। যদিও পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশাসন কর্তৃক উক্ত টাকা খোয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়। এর পরদিনই ৩ এপ্রিল, দুপুর ১২ টার দিকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের আরো একটি সশস্ত্র দল বান্দরবান জেলারই থানচি উপজেলার পাশাপাশি দুটি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে হানা দিয়ে ১৯ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে কেএনএফ কর্তৃক পুলিশ ও বিজিবি ক্যাম্পের মধ্যে অবস্থিত ব্যাংকে এধরনের সফল ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

উক্ত ব্যাংক ডাকাতি ঘটনার পর সরকারের যৌথবাহিনী ৭ এপ্রিল থেকে কেএনএফের বিরুদ্ধে বান্দরবান এলাকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে ঘোষণা দেয়। ৭ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে যৌথবাহিনী রুমা থেকে ৪৯ জনকে এবং থানচি থেকে ৫ জনকে সর্বমোট গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই নিরীহ ও নিরপরাধ বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে ১৮ জনই নারী, ২ জন অন্তঃসত্তা নারী, ৮ জন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্যরা সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, বাগান চাষী, মজুর ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। এদের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট পেশা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন ঢাকায় পড়াশোনা করছেন, যারা মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের এখনও কাউওে ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ২০০৮ সালে নাথান বম ও ভাংচুনলিয়াম বমের নেতৃত্বে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) গঠন করা হয়। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের ইন্ধনে কেএনডিও-এর নাম পরিবর্তন করে বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নাম রেখে সশস্ত্র কার্যক্রম শুরু করা হয়।

জাতিসংঘে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার শক্তিশালীকরণের উপর জেএসএস প্রতিনিধি বক্তব্য

0

হিল ভয়েস, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রতিনিধি, প্রীতি বি চাকমা, “আইটেম ৩: আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপটে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার শক্তিশালীকরণ: আদিবাসী যুবকদের কণ্ঠ জোরদারকরণ”-এর উপর বক্তব্য দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকালের অধিবেশনে প্রীতি বি চাকমার প্রদত্ত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্বলিত স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিধান করা হয়। এলক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তিতে এসব পরিষদের উপর সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নসহ সকল প্রকার উন্নয়ন কার্যক্রম ন্যস্ত করার বিধান করা হয়।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তির কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করলেও স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট উল্লেখিত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত অধিকার ও এখতিয়ার এখনো আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ন্যস্ত করেনি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।

আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হলেও এসব পরিষদকে পাশ কাটিয়ে এখনো উল্লেখিত সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন প্রয়োগ করে চলেছে।

শুধু তাই নয়, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এখনো সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে জুম্মদের ভূমি পুনরুদ্ধার, আভ্যন্তরীণ উদ্বান্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের তাদের ভূমি প্রত্যর্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন, সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকায় আদিবাসী যুবক-যুবতী, পুরুষ, নারী, সকলেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। আদিবাসী জুম্ম যুবকরা তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হতে চায়, কিন্তু পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পরিপূর্ণ এবং এই সামরিক বাহিনী যুবদের কণ্ঠ বন্ধ করার জন্য দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী তাদেরকে অপরাধী (ক্রিমিনালাইজ) হিসেবে আখ্যায়িত করছে।

এমতাবস্থায় আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রর্তবনের লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ, পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার উদ্বুদ্ধ করতে পার্মানেন্ট ফোরামে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করলে, তরুণ-তরুণীসহ আদিবাসীরা সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) থেকে নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশন। ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই অধিবেশন। গতকাল (মঙ্গলবার) এজেন্ডা আইটেম ৩-এর উপর আর্যশ্রী চাকমাও বক্তব্য প্রদান করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত মদদপুষ্ট প্রক্সি সংঘাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান সিএইচটি কমিশনের

0

হিল ভয়েস, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন) বান্দরবানে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শান্তিতে এসবের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কমিশন জোরালোভাবে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এবং কথিত মদদপুষ্ট প্রক্সি সংঘাত দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সমুন্নত রাখতে এবং স্থায়ীত্বশীল শান্তির জন্য গঠনমূলক সংলাপের স্বার্থে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে।

সিএইচটি কমিশন ১৬ এপ্রিল ২০২৪-এ সিএইচটি কমিশন-এর তিন কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপোলু এবং মিরনা কানিংহাম কাইনের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিবৃতিতে এইসব আবেদন জানিয়েছে।

সিএইচটি কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, গত ২ ও ৩ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় পরপর ব্যাংক ডাকাতি করে। আগ্নেয়াস্ত্র লুট করার সময় তারা পুলিশ বাহিনী, ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী এবং আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। সিএইচটি কমিশন বিশেষত কেএনএফ এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা’র নেতৃত্বাধীন ‘শান্তি কমিটি’-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনার এক মাসেরও কম সময় থেকে কেএনএফ-এর এই অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

কেএনএফ-এর কর্মকান্ডের প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ গত ৭ এপ্রিল ২০২৪-এ বান্দরবান সফর করেন এবং কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় মোট ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেকেই নিরপরাধ নাগরিক, যার মধ্যে বম সম্প্রদায়ের গর্ভবতী মহিলা, ছাত্র, শিক্ষক এবং সরকারি কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং চিম্বুকের জুম্ম বাসিন্দাদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে তাদের চাল ক্রয়ের সর্বোচ্চ ৫ কিলো সীমা রয়েছে, যার লক্ষ্য কেএনএফ-এর সরবরাহ ব্যাহত করা। সিএইচটি কমিশন কিছু কেএনএফ সদস্যের কর্মকান্ডের কারণে সমগ্র বম সম্প্রদায়ের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং সম্মিলিত শাস্তির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে নিরীহ নাগরিকদের মুক্তি ও সুরক্ষা দাবি করেছে।

উপরন্তু, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন গত ১০ এপ্রিল একটি প্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর বর্ধিত উপস্থিতির ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য কেএনএফ-এর কার্যক্রম মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, কেএনএফ গঠন একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি বজায় রাখার জন্য ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতির অংশ। এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এমএনপি) নামে পরিচিত একটি নবগঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেটিকে কেএনএফের সূচনায় যারা মদদ দিয়েছে সেই একই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এবং আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যকার সম্প্রীতিকে অস্থিতিশীল করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দ্বারা এই ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সিএইচটি কমিশন বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সিএইচটি কমিশন এইসব পরিস্থিতির জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিশ্বাস করে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পরেও দীর্ঘায়িত অ-বাস্তবায়ন থেকে এসব উদ্ভূত হয়েছে। সরকার যত বেশি বিলম্ব করবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত জটিল হবে। এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য, কমিশন নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি জরুরী বাস্তবায়নের সুপারিশ করছে:

সরকারকে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নকে দুর্বল করার জন্য কেএনএফ এবং এমএনপি-এর মতো সশস্ত্র সক্রিয় গোষ্ঠীগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতাকারী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

● সরকারকে আর বিলম্ব না করে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।

● নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই বম বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তি বন্ধ করতে হবে, মানবাধিকার লংঘন থামাতে হবে এবং অবিলম্বে নির্দোষ বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দিতে হবে।

● কমিশন কেএনএফকে শান্তি কমিটির সাথে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করা, অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রক্ষার জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানায়।

সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থাযী ফোরামের ২৩তম অধিবেশন

0

হিল ভয়েস, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সোমবার (১৫ এপ্রিল) থেকে নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদরদপ্তরে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশন। নিউইয়র্ক সময় সকাল ১১:০০ ঘটিকায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯:০০ ঘটিকায়) অনুষ্ঠিত হবে ২৩তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই অধিবেশন। এবারের ২৩তম অধিবেশনের মূল প্রতিপ্রাদ্য বিষয় হচ্ছে “আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপটে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ত্বরান্বিতকরণ: আদিবাসী যুবদের কণ্ঠ জোরালোকরণ”।

এই অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন প্রীতিবিন্দু চাকমা ও চঞ্চনা চাকমা। এছাড়া কানাডা থেকে অগাষ্টিনা চাকমা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মনোজিত্‌ চাকমা অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশ থেকে চন্দ্রা ত্রিপুরা, টনি চিরান, রাজকুমারী আয়েত্রী রায়, তৈসা ত্রিপুরা প্রমুখ আদিবাসী প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ সরকারের একদল প্রতিনিধি যোগদান করছেন। প্রতিনিধিদলের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের একটি উচ্চ-স্তরের উপদেষ্টা সংস্থা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত আদিবাসী সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য ২০০০/২২ রেজোলিউশনের মাধ্যমে ফোরামটি ২৮ জুলাই ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রতি বছর জাতিসংঘের সদরদপ্তরে সাধারণত দুই সপ্তাহ ব্যাপী এই ফোরামের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এপ্রিল মাসে। এই অধিবেশনে আদিবাসী প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকে। এছাড়া সরকারের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থার প্রতিনিধি, একাডেমিক, মানবাধিকার কর্মীরা পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হওয়া উচিত ছিল: আরএসএস নেতা ড. সুনিল দেওধর

0

হিল ভয়েস, ১২ এপ্রিল ২০২৪, আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক: ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৌদ্ধ-হিন্দু অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ হওয়া উচিত ছিল বলে অভিমত তুলে ধরেন আরএসএস নেতা ড. সুনিল দেওধর।

আজ ১২ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ২:০০ টায়, ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে লাজপথ নগর অডিটোরিয়ামে দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কর্তৃক আয়োজিত চাকমা আদিবাসীদের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু মেলার আলোচনা সভায় এই অভিমত ধরেন ড. সুনিল দেওধর।

দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিলোনির চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত বিজু মেলার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিস ক্যাম্পেয়েন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট করুনা লঙ্কার ভিক্ষু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরএসএস নেতা ড. সুনীল দেওধর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. জয় কুমার চাকমা, সাইনস্টিস, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্স। এছাড়াও ত্রিপুরা, অরুনাচল, মিজোরাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন সংগঠনের ৫০০ শতাধিক ব্যক্তি উক্ত বিজু মেলায় অংশগ্রহণ করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরএসএস নেতা ড. সুনীল দেওধর বলেন, ভারতবর্ষ একটি বৈচিত্র্যময়, ভাষা-সংস্কৃতির দেশ। এই দেশে বিভিন্ন জাতির মানুষ বসবাস করে। সুতরাং, সারা বছর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসবে আমাদের ভারতবর্ষে মেতে থাকে। ভারতবর্ষে উৎসবের কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মিলে সকল জাতির উৎসব উদযাপন করে থাকি। চাকমাদের প্রধান উৎসব বিজু মেলাতে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে গর্ববোধ মনে করছি।

তিনি আরো বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বৌদ্ধ, হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। তারপর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্যান্য জাতির উপরও নির্যাতন, নিপীড়ন চলমান রয়েছে। সেখান তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি আরো যোগ করেন, ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। এই দেশে সকল জনগোষ্ঠীদের মিলে আমাদের সুন্দর ভারতবর্ষ। চাকমারা আজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করছে বলে তিনি প্রশংসা করেন। ভারত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সহ সকল জনগোষ্ঠীর সাথে সংযোগ রেখে নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে বলে তার বক্তব্য জোর দেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে করুনা লঙ্কার ভিক্ষু বলেন, চাকমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই উৎসব কেবল ভারতে নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ভিন্ন নামে পালন করে থাকে।

তিনি বলেন, বিজু উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি টিকিয়ে আছে। সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রামে থেকে ভারতবর্ষ আমাদের সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে। এছাড়াও দু দেশের চাকমাসহ অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের সাথে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেখানকার শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বিজু উৎসব বিলুপ্ত করার জন্যও নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে তার বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অতিথি ড. জয় কুমার চাকমা বলেন, চাকমাদের বিজু উৎসবটা সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে হবে। ড. চাকমা আরো বলেন, আমরা যেখানে থাকি না কেন নিজেদের সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে, চাকমাদের রীতিনীতি চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, দিল্লিতে অবস্থানরত সকল চাকমাদের ঐক্য আরও সুদৃঢ় করে সামনে এগোতে হবে।

পরিশেষে, দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিলোনির চাকমার সভাপতির বক্তব্য এবং পুরস্কার বিতরণীর মধ্যে দিয়ে বিজু মেলাটি সমাপ্তি হয়।

প্রতিবিছরের ন্যায় এ বছরও দিল্লি চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বিঝু মেলা আয়োজন করে এবং নানা ঐতিহ্যবাহী খেলা-ধুলা আয়োজন করে। বিজু মেলাটি বিকেল ২:০০ টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় এবং সন্ধ্যা নাগাদ শেষ হয়।

আমাদের অঞ্চলে পাতানো খেলা চলে, সংঘাতের নাটক সাজানো হয়- রাঙ্গামাটিতে রাজা দেবাশীষ রায়

0

হিল ভয়েস, ১১ এপ্রিল ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: গতকাল ১০ এপ্রিল ২০২৪, সকাল ৯:৩০ টায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে প্রতিবছরের ন্যায় এই অঞ্চলের আদিবাসী জুম্মদের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান, বিহু’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অধিকতরভাবে এগিয়ে আসুন’ শ্লোগান নিয়ে এইসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, চাংক্রান, বিহু-২০২৪ উদযাপন কমিটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, অব:উপসচিব শ্রী প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা এবং উদ্বোধন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেলের চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক শিশির চাকমা, গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি জয়তী চাকমা। অনুষ্ঠাবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার।

উদ্বোধক ও অতিথিবৃন্দ প্রথমে বেলুন উড়িয়ে এবং গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশেনায় বিভিন্ন জাতির নৃত্য ও সংগীত প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, আমাদের মূল মূল রীদি-সুদোমগুলো (রীতি-প্রথা) আমরা যদি ধরে রাখতে না পারি, তাহলে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জাতি হিসেবে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। আমাদের পুরনো অনেক রীতি ছিলো, যাতে সেগুলো আমরা তথাকথিত অতিআধুনিকতা বা অতিশিক্ষিত হয়ে যেগুলো আমাদের মূল কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অংশ সেগুলো যেন আমরা ভুলে না যায়। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে নয়, মাঝেমধ্যে সারা দেশেও কিছু বাইরের সংস্কৃতি ভালোভাবে না বুঝে আমরা মেনে নিয়ে আমাদের প্রাচীণ যেটা ভালো সেটা ভুলে যায়।

তিনি বলেন, বাংলা ভাষায় এখন বিষুব সংক্রান্তি শব্দ খুঁজে পাওয়া কষ্ট, পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত উড়িষ্যাতে পাবেন। এই বিষুব সংক্রান্তির বিষুব থেকেই তো বিজু, বিষু, বিহু, বৈসু এবং ম্রোদের চাংক্রান, মারমাদের সাংগ্রাই। এই তো বিষুব সংক্রান্তি। একটা সম্মিলন গ্রহ-নক্ষত্রের, বিষুব রেখার।

তিনি আরও বলেন, আমার সুযোগ হয়েছিল, মাস দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার, এখানকার অন্যতম জ্যেষ্ঠ সামাজিক নেতা সম্মানিত গৌতম দেওয়ানকে সাথে নিয়ে। আমরা দু’জন মনখুলে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের বঞ্চনার কথা, আমাদের দুঃখের কথা শুনিয়েছি এবং তাঁর ধৈয্যের জন্যে, সহানুভুতির জন্যে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমি এমনও বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের অঞ্চলে এখন পাতানো খেলা চলে। মাঝেমধ্যে কৃত্রিমভাবে সংঘাতের নাটক সাজানো হয়। এইসব নাটকের যদি অবসান না হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হতে পারবে না। জুম্ম হিসেবে, আদিবাসী হিসেবে, পাহাড়ি হিসেবে, বাংলাদেশি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে থাকতে পারবো না।

তিনি বলেন, আমাদের যেমন বঞ্চনা রয়েছে, আমাদের আশার কথাও বলতে হবে। যারা তরুণরা রয়েছে, যারা কিশোরীরা রয়েছে, শুধু যদি বলি যে, আমাদের বঞ্চনার কথা, তাহলে তারা নিরাশ হয়ে যাবে, তারা সংগ্রাম করতে পারবে না। আমি মনেকরি যে, আমরা অবশ্যই যারা বঞ্চিত তাদের পাশে দাঁড়াবো, অন্যায় হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলবো। কিন্তু আমাদের আশার বাণীও শোনাতে হবে, যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের স্বকীয়তা নিয়ে, তাদের শক্তি, তাদের উদ্যম নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।

উদ্বোধক নিরূপা দেওয়ান বলেন, আমরা প্রতিবছর এখানে সমবেত হই। এই বিজুটা আমাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রতিফলিত হয় ঐক্য। আমরা চেষ্টা করি বা আমাদের চেষ্টা করতে হয়, আমাদের যে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আছে, আমাদের যে রীদি-সুদোম (রীতি-প্রথা) আছে, সেগুলোকে সমুন্নত রাখার।

তিনি বলেন, এই বিজুটা শুধু আনন্দের দিন নয়। শুধু খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করবো তা নয়। এই বিজুটা আমাদের আত্মদর্শনেরও দিন। আমাদের আত্মদর্শন ও আত্মোপলব্ধিও করতে হয়। আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সাহিত্য, আমাদের যে মূল শেকড়, যদি আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তাহলে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না, আমাদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না। সবাই মিলে সবাইকে নিয়ে আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সমাজ ও জাতীয় জীবনে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সৃদৃঢ় করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই উৎসবে আমাদের কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মিলে তা উদযাপন করতে চাই। সবাই মিলে অনাবিল আনন্দ নিয়ে যদি আমরা এই উৎসব পালন করি তবেই তা সার্থক হবে। তবে আমি অনুরোধ করবো, আনন্দের অজুহাতে আমরা যাতে সীমা লংঘন না করি। অনেক সময় দেখা যায়, আনন্দ করতে গিয়ে আমরা উচ্ছৃঙ্খলতায় জড়িয়ে পড়ি।

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ঊষাতন তালুকদার বলেন, বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু আমাদের ঐতিহ্য, আবেগ, উচ্ছাস ও জীবনের সাথে মিশে আছে। কিন্তু আগের মত জীবনকে সেভাবে উপভোগ করার সময় বা অবকাশ এখন আর নেই। আজকে যেন মনে হয়, এখানে আসার প্রয়োজন আছে, এসেছি। প্রাণখোলাভাবে, উন্মুক্তভাবে, মনপ্রাণখুলে, হেসেখেলে আসতে পারি নাই। যারা নেচেছে তাদেরও, আমি মনেকরি, সবার মনে একটা উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, নিরাপত্তাহীনতাবোধ বিরাজ করছে। পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পরেও এখনো কেন যেন মনে হয়, আমাদের জীবন আমাদের নয়। কারোর দ্বারা এটা পরিচালিত।

তিনি বলেন, মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব। আজ সভ্যতা অনেক এগিয়েছে। কিন্তু তবু আজকে কেন হানাহানি? কেন আজকে গাজায় ৩৪ হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে? শিশু, নারী কীভাবে নির্যাতিত হচ্ছে! আজকে পাহাড়ের মানুষের মুখ দেখেন। আমরা তো খোলামেলাভাবে হাসতে পারি না। কেন? এই কেন’র উত্তর পেতে আমাদের সরকারকে, নীতি-নির্ধারকদের এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ভাবা উচিত।

তিনি আরও বলেন, কাউকে পেছনে ফেলে রেখে এই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সোনার বাংলা হবে, কিন্তু সবাইয়ের নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে ইগো নয়, জাত্যভিমান নয়, এগিয়ে আসুন। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আজকে আমরা বান্দরবানে কী দেখেছি? ১৮ জন মহিলা এখন কারাগারে। সেখানে অস্ত্র লুট হয়েছে ১৪টা। কেন এই অবস্থা দাঁড়াচ্ছে? আরো অনেক কিছু দেখবো হয়ত। সেটা আশা করি না।

তিনি বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশে সকলের মিলিতভাবে উন্নয়ন হবে। মাথা উঁচু করে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মরা বাংলাদেশের শত্রু নয়, বাংলাদেশের পথের কাঁটা নয়। জুম্মরা, বাংলাদেশের আদিবাসীরা বরং বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে। বরং দেশের মানসম্মান তারা বাইরে থেকে নিয়ে আসে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সকাল ১১:৩০ টার দিকে পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার বহর করে, বিভিন্ন জাতির ঐতিহ্যবাদী বাদ্যযন্ত্র ও সঙ্গীত পরিবেশন সহ একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয় এবং র‌্যালিটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এসে সমাপ্ত হয়।

প্রতিবিছরের ন্যায় উদযাপন কমিটি এবছর তিন দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর মধ্যে অন্যতম হল- ১০ এপ্রিল, বিকাল ৩টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ, ১১ এপ্রিল, সকাল ১০টায়, রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামে আদিবাসী জুম্ম খেলাধুলা, বিকাল ৩টায় বলি খেলা, সন্ধ্যা ৬টায় কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১২ এপ্রিল, সকাল ৬:৩০ টায় ফুল নিবেদন অনুষ্ঠান, জমায়েত-রাজবন বিহার স্বর্গঘর, ফুল নিবেদন স্থান-রাজবন বিহার পূর্বঘাট।

রুমায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫৪ জন বম নরনারী গ্রেপ্তার, অধিকাংশই নিরীহ

0

হিল ভয়েস, ১০ এপ্রিল ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদন: বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচিতে সেনাসৃষ্ট কেএনএফ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর বিগত তিন দিন ধরে যৌথ বাহিনীর তথাকথিত অভিযানে ৫৪ জন আদিবাসী বম নর-নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল (৯ এপ্রিল) গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্য থেকে ৫২ জনকে বান্দরবান জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে একাধিক সূত্রে জানা যায়, কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে যৌথ বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে সাধারণ ও নিরীহ বম জনগোষ্ঠীর নারী ও পুরুষদের গ্রেপ্তার এবং নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। যৌথ বাহিনী গ্রাম এলাকার জুম্মদের ৫ কেজির বেশি চাল কিনতে বাধা দিচ্ছে এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক এর গতি কমিয়ে দিয়েছে। এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রুমা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অন্তত ৪৯ জন নর-নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে যারা নিরীহ ও নিরপরাধ বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনই নারী, ২ জন অন্তঃসত্তা নারী, ৮ জন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্যরা সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, বাগান চাষী, মজুর ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। এদের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট পেশা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন ঢাকায় পড়াশোনা করছেন, যারা মাত্র কয়েকদিন পূর্বে ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন।

সেনা অভিযানে নিপীড়ন ও হয়রানির ভয়ে ইতোমধ্যে মুননোয়াম পাড়া, বেথেলপাড়া, হ্যাপিহিল পাড়া, বাচত্লাং পাড়া, আর্থা পাড়া ইত্যাদি বম গ্রামের লোকজন গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের এক অধিকার কর্মী বলেন, ঘটনার পরপরই কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ঘটনার ৩/৪ দিন পর যৌথ বাহিনী অভিযানে নেমেছে। ইতিমধ্যে আসল অপরাধীরা হয়ত নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। কিন্তু এখন সাধারণ ও নিরীহ জনগণকে গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে এবং এলাকায় ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈ কিছু নয়।

উল্লেখ্য যে, গত ২ এপ্রিল, রাত ৯ টার দিকে জাওরিন লুসাই (৪২) এর নেতৃত্বে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ১৩ জনের একটি সশস্ত্র দল সোনালী ব্যাংকের রুমা উপজেলা শাখায় ডাকাতি করে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি ছিনতাই করে নিয়ে যায় এবং ব্যাংক ম্যানেজারকেও অপহরণ করে। যদিও পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশাসন কর্তৃক উক্ত টাকা খোয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়।

এর পরদিনই ৩ এপ্রিল, দুপুর ১২ টার দিকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের আরো একটি সশস্ত্র দল বান্দরবান জেলারই থানচি উপজেলার পাশাপাশি দুটি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে হানা দিয়ে ১৯ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে কেএনএফ কর্তৃক পুলিশ ও বিজিবি ক্যাম্পের মধ্যে অবস্থিত ব্যাংকে এধরনের সফল ডাকাতির ঘটনায় সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

উক্ত ডাকাতির ঘটনার পরপরই গত ৭ এপ্রিল থেকে সরকারের যৌথ বাহিনী বান্দরবান এলাকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করেছে বলে প্রচার করা হয়। যৌথ বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনী, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন অন্তভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, এর পূর্বে গত ৭ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১১টার দিকে পুলিশ বান্দরবান সদর উপজেলার রেইচা চেক পোস্ট থেকে বম সম্প্রদায়ের এক তরুণী ও দুই তরুণকে আটক করে। পরে তাদেরকে ডাকাতির মামলায় জড়িত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তারাও নিরীহ এবং ঢাকা থেকে বান্দরবানে ফিরছিলেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, সর্বশেষ গত ৫ মার্চ ২০২৪ তারিখ রুমায় বেথেল পাড়ায় সেনা ও ডিজিএফআই এর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা’র নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিটির সাথে বৈঠক করে কেএনএফ। বৈঠকে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় কেএনএফ। বৈঠকের পর এক মাস যেতে না যেতেই সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই ব্যাংকসমূহে কেএনএফের এমন সফল ও নাটকীয় ডাকাতি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

আরো উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ২০০৮ সালে নাথান বম ও ভাংচুনলিয়াম বমের নেতৃত্বে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) গঠন করা হয়। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের ইন্ধনে কেএনডিও-এর নাম পরিবর্তন করে বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নাম রেখে সশস্ত্র কার্যক্রম শুরু করা হয়।

পরে একটি ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে অর্থের বিনিময়ে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের খবর প্রচার হলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে সেনাবাহিনী কেএনএফের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতে বাধ্য হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই কৌশলে কেএনএফকে মদদ দিতে থাকে। ২-৩ এপ্রিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ ক্যাম্পের সন্নিকটস্থ পর পর তিনটি শাখার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাও সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের মদদ ছাড়া কেএনএফের পক্ষে কখনো সম্ভব হতো না বলে সংল্লিষ্ট অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন।

অন্যদিকে বম পার্টি খ্যাত কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তথাকথিত যৌথ অভিযানের নামে নিরীহ ও নিরস্ত্র বম গ্রামবাসীদের নির্বিচারে ধরপাকড়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনমতকে বিভ্রান্ত করে ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত কেএনএফের সন্ত্রাসীদের প্রকারান্তরে রক্ষা করা বৈ কিছু নয় বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

রুমা এলাকা থেকে যৌথ বাহিনীর গণগ্রেপ্তারের শিকার ৪৯ (নারী ১৮ জন ও পুরুষ ৩১ জন) এবং রেইচা চেক পোস্টে ধৃত তিনজন নিরীহ বম নর-নারীর পরিচয় নিম্নরূপ:

আটককৃত নারী গ্রামবাসীরা হলেন-

১। আজিং বম (২০), স্বামী-আরিনহ্ বম, পিতা-জিংরোয়াত বম, মাতা-হলচেও বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
২। লালসিং পার বম (৩০), স্বামী-আলিম বম, পিতা-লিয়ান জুয়াম বম, মাতা-পার এং ময় বম, গ্রা-বেথেল পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
৩। ভান রিন কিম বম (৩৬), স্বামী-তোলয়াং পুই বম, পিতা-জোয়াম বিল বম, মাতা-থন লিয়াং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান, পেশায় বাগান চাষী।
৪। আতং বম (৩০), স্বামী-পালেন বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
৫। আলমন বম (২২), পিতা-সিয়ান খুপ বম, মাতা-রিয়াল নেম বম, সাং-বেথেল পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি একজন ছাত্রী, ডিগ্রী ২য় বর্ষ, বান্দরবান সরকারি কলেজ।
৬। লাল মুন এং বম (১৯), পিতা-তনয়াই বম, মাতা-লালদন কিম বম, গ্রা-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
৭। লাল নুন জির বম (৩৪), পিতা-মৃত পুনসাং বম, মাতা-টয়ান কিল বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
৮। মেলরি বম (২৬), পিতা-জিংআলহ বম, মাতা-মৃত পাকতিং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
৯। লাল নুন বম (২৪), পিতা-লম জুয়াল বম, মাতা-সাংকিম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি অন্ত:সত্তা বলে জানা গেছে।
১০। নেম পেন বম (৩৮), স্বামী-সাংলিয়ান বম, পিতা-তোয়ার থন বম, মাতা-লাল জিন ময় বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
১১। এলিজাবেথ বম (৩০), স্বামী-ভানলাল দিক বম, পিতা-এলিয়াতন বম, মাতা-ননকিম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় সহকারী শিক্ষক, পেন্দু হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনি ৪ মাসের অন্ত:সত্তা বলে জানা গেছে।
১২। লাল ত্লাহকিম বম (৩০), পিতা-লালতন লিয়ান বম, মাতা-চেউতোয়ার বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় রুমার পার্বত্য শিশু উন্নয়ন প্রোগ্রাম-এ কর্মরত।
১৩। পারঠা জোয়াল বম (১৯), পিতা-লালতন লিয়ান বম, মাতা-চেও তোয়ার বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ঢাকার ওয়াইডাব্লিউসিএ কলেজের ছাত্রী।
১৪। জিং রোন এং বম (৩২), পিতা-মৃত চমনিন বম, মাতা-তিন এং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী ও দিন মজুর।
১৫। লাল নুন কিম বম (২৫), পিতা-লালতন লিয়ান বম, মাতা-চেও তোয়ার বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ছাত্রী, বিএ ২য় বর্ষ, বান্দরবান সরকারি কলেজ।
১৬। টিনা বম (১৮), পিতা-লাল রুয়াই বম, মাতা-জিংনুন ময় বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ছাত্রী, একাদশ শ্রেণি, সেন্ট যোসেফ কলেজ, সাভার, ঢাকা।
১৭। লেরী বম (২৩), পিতা-লাললম সাং বম, মাতা-লালপার ময় বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
১৮। শিউলি বম (২১), পিতা-হ্লাং খুম বম, মাতা-দাংজিং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।

আটককৃত পুরুষ গ্রামবাসীরা হলেন-

১। সাপলিয়ন থাং বম (২১), পিতা-লাল মুন সাং বম, মাতা-থোয়াং কিম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় একজন ইলেকটিশিয়ান, রুমা পল্লী বিদ্যুৎ।
২। লাল রিন সাং বম (২৫), পিতা-নলথন বম, মাতা-দৌসিম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
৩। সাইরাস বম (২৫), পিতা-সানথিয়াং বম, মাতা-লাল মিননেম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
৪। মুন থাং লিয়ান বম (৩৩), পিতা-মৃত চম নিন বম, মাতা-তিন এং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় একজন টুরিস্ট গাইড, রুমা।
৫। পাছুং বম (৪৪), পিতা-সান থিয়াং বম, মাতা-মৃত রনজিং বম, সাং-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
৬। ভান লাল দিক বম (৩২), পিতা-লাল লুং থাং বম, মাতা-লাল নুন সিয়াম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি একজন প্রাইভেট শিক্ষক।
৭। জাসুয়া বম (৪২), পিতা-লাল মুন সাং বম, মাতা-থুয়াং কিং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় সমিল মিস্ত্রি, পলি সমিল, রুমা।
৮। ভারৌ সাং বম (৩২), পিতা-রেম নিয়ার বম, মাতা-বিল থিম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় একজন গ্রাম পুলিশ, রুমা।
৯। নলথন বম (৫৫), পিতা-সাংসিং বম, মাতা-টুয়ার থুয়াং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান।
১০। লাল স্ক্লেং কিং বম (২৯), পিতা-লালমিন লিয়ান বম, মাতা-পেনা ক্লিয়ার বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
১১। লিয়ান লুয়াই থাং বম (২৪), পিতা-মৃত সাই ইয়াং বম, মাতা-সেম জিয়ার বম, গ্রাম-বাসতøাং পাড়া, ৭ নং ওয়ার্ড, ১ নং পাইন্দু ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ছাত্র, শান্তা মরিয়ম ইউনিভার্সিটি, উত্তরা, ঢাকা।
১২। লাল রাম তিয়াম বম (৪৪), পিতা-সিমথান বম, মাতা-রৌসুম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, বাকত্লাই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
১৩। লালদাম লিয়াম বম (৩৬), পিতা-জালিয়ান লাল বম, মাতা-রিয়াল নেম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় নৈশ প্রহরী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, রুমা।
১৪। লম জুয়াল বম (৫০), পিতা-মৃত সাং খন বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
১৫। রাম থাং লিয়ান বম (১৭), পিতা-জিং সাং বম, মাতা-জির ভ্লিং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ছাত্র, দ্বাদশ শ্রেণি, নটরডেম কলেজ, ঢাকা।
১৬। গিলবার্ট বম (১৭), পিতা-লাল রাম লিয়ান বম, মাতা-লাল দুহ সার বম, গ্রাম-বাসাত্লাং পাড়া, ৭ নং ওয়ার্ড, ১ নং পাইন্দু ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ছাত্র, একাদশ শ্রেণি, কাজি আজিমউদ্দিন কলেজ, গাজীপুর, ঢাকা।
১৭। ভান রুয়াত ময় বম (২৩), পিতা-লাল তুয়ার বম, মাতা-সিম তিং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি চাকুরিজীবী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, রুমা।
১৮। লাল ইমানুএল বম (৪৩), পিতা-জিং আল বম, মাতা-থাম ফ্লামির বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি চাকুরিজীবী, পার্বত্য শিশু উন্নয়ন প্রোগ্রাম, রুমা।
১৯। লালমুন লিয়ান বম (২৮), পিতা-লাল থান কুম বম, মাতা-লাল জিং ঙেন বম, সাং-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান।
২০। লাল থাং পুই বম (১৯), পিতা-মৃত লাল ময় থাং বম, মাতা-লাল সিয়াম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি ছাত্র, এইচএসসি পরিক্ষার্থী, রুমা সাংগু কলেজ।
২১। জেমস মিলটন বম (৩৪), পিতা-কং ক্লিয়ার বম, মাতা-পাক ত্লেম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি দপ্তরী, বেথেল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রুমা।
২২। রোসাং লিয়ান বম (৩০), পিতা-বিয়াক থন বম, মাতা-সিয়াম কুং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি একজন চাকুরিজীবী, ব্র্যাক, রুমা।
২৩। লাল রোয়াত লম বম (৪৫), পিতা-রাম সিম বম, মাতা-জুয়াম থিলং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি একজন ধর্ম যাজক, ইসিসি চার্চ, রুমা।
২৪। লাল দিন থার বম (৪০), পিতা-দং নিন বম, মাতা-ঙোন ফেন বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিকলীগ এর নেতা, রুমা।
২৫। জৌনুন সাং বম (৪৫), পিতা-চেও দির বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় হিসাব রক্ষক, পার্বত্য চট্টগ্রাম শিশু উন্নয়ন প্রোগ্রাম, মুননুয়াম, রুমা।
২৬। রেম থন বম (৬০), পিতা-অং চেও বম, মাতা-সিয়াম জিং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী।
২৭। পেনাল বম (৬০), পিতা-মৃত চয়তিম বম, মাতা-তিল থং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় বাগান চাষী, দিন মজুর।
২৮। রুয়াল কম লিয়ান বম (৫৫), পিতা-সাপইয়াং বম, মাতা-মৃত ঙুন চেও বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় সরকার চাকুরিজীবী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, রুমা।
২৯। লাল রাওখম বম (৩৭), লাল জা লিয়ান বম, মাতা-এলি জেবথ বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। তিনি পেশায় বাগান চাষী ও জুম চাষী।
৩০। ভান লাল সম বম (৩৪), পিতা-রেম নিয়ার বম, মাতা-কিল সিম বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক।
৩১। লাল রুয়াই বম (৫২), পিতা-সান থিয়াং বম, গ্রাম-বেথেল পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড, ২ নং রুমা সদর ইউপি, রুমা, বান্দরবান। পেশায় বাগান চাষী ও দিন মজুর।

ঢাকা থেকে বান্দরবানে ফেরার পথে রেইচা চেক পোস্টে আটকৃকতরা হলেন-

১। জেমিনিউ বম (২২), গ্রাম-সিমত্লাংপি পাড়া, থানচি উপজেলা,
২। ভাননুন নুয়াম বম (২৩), রোনিন পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা এবং
৩। আমে লনচেও বম (২২), গ্রাম-সিমত্লাংপি পাড়া, থানচি উপজেলা।

জুরাছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এক জুম্মকে হয়রানি

0
ছবি : প্রতিকী

হিল ভয়েস, ৮ এপ্রিল ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগীছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত বনযোগীছড়া সেনা জোনে আসন্ন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এক জুম্মকে ডেকে এনে প্রায় দশ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

প্রায় সারাদিন ক্যাম্পের এক জায়গায় বসিয়ে রেখে রাত ৭:৩০ টার দিকে বাড়িতে যেতে অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম কামিনী চাকমা (৪২), পীং-সুভাষ বসু চাকমা, গ্রাম-কাংড়াছড়ি, ৩নং ওয়ার্ড, ২নং বনযোগীছড়া ইউনিয়ন। তিনি বনযোগীছড়া ইউনিয়নের সাবেক নির্বাচিত মেম্বার এবং আসন্ন প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের একজন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে জুরাছড়ি সদরের যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্পের চার সেনা সদস্য কামিনী চাকমাকে যক্ষা বাজারে পেয়ে তাকে বনযোগীছড়া সেনা জোনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ১০ ঘন্টা ধরে কামিনী চাকমাকে বনযোগীছড়া সেনা জোনের অভ্যর্থনা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘গোল ঘরে’ অপেক্ষমান অবস্থায় রাখা হয় বলে জানা গেছে। তার সাথে কোনো কথা না বলে কামিনী চাকমাকে কেবল বসিয়ে রাখা হয়।

পরে রাত ৭:৩০ টার দিকে জনৈক এক সেনা সদস্য এসে ‘আজ ক্যাম্প কমান্ডার উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছেন, কিন্তু কথা বলার সময় পেলেন না’ বলে কামিনী চাকমাকে ছেড়ে দেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এটা কামিনী চাকমাকে এক ধরনের হয়রানি ও নিপীড়ন ছাড়া আর কিছু নয়।

এদিকে সেনা সদস্যরা সকালে ডেকে নিয়ে কামিনী চাকমাকে সারাদিন বাড়িতে ফিরতে না দেওয়ায় তার পরিবার ও গ্রামের লোকজনের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে।

হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরকরণে প্রেমের ফাঁদ : ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ

0

হিল ভয়েস, ৮ এপ্রিল ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদন: হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরিত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে। এ কাজে সফল হতে জমঈয়তে আহলে হাদিসের নামে একটি ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মীদের জন্য রীতিমতো পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী মৌলবাদী ধর্মীয় সংগঠন জমঈয়তে আহলে হাদিসের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানীর ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক প্রচারণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

একের পর এক সাম্প্রদায়িক এমন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। গত রোববার (৭ এপ্রিল) পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে এসব ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদিস নামীয় এক তথাকথিত সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত বেশ কিছুদিন ধরে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে চলেছে। যাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণে তাদের দলের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব শিবিরদের জন্য নতুন পুরস্কার ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ব্রাহ্মণ মেয়েদের ধর্মান্তরকরণের জন্য তিন লাখ, ভারতীয় বাঙালি মেয়েদের জন্য দুই লাখ, নমশুদ্র মেয়েদের জন্য পঞ্চাশ হাজার আর পুরো পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে কথিত ধর্মান্তরকারীদের।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রচারিত আরেক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, মুসলিম ভায়েরা মূর্তি পূজারীদের (হিন্দুদের) প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে আর সে সঙ্গে সাচ্চা মুসলিম জন্ম দিচ্ছে। সবচেয়ে এটাই ভালো লাগছে, আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা এমনভাবে ব্রেনওয়াশ করছে, সে মেয়েরা ভাবছে- তাদের সত্যি ভালোবাসছে। তাদের এ ভাবনা আমাদের মিশন পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে।

এ প্রচারপত্র মনোযোগ সহকারে পড়ার কথাও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লিখিত রয়েছে। আরেকটিতে লাভ জিহাদের এ কথিত মিশনের গ্রুপ লিডার হিসেবে জনৈক মামুনের নাম রয়েছে।

আরেকটি ফেসবুক গ্রুপের স্ট্যাটাসে কীভাবে হিন্দু নারীকে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলা হবে তার একটি নির্দেশনাও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘একটা দুইটা করে ফেক আইডি করবেন হিন্দু নাম দিয়ে। বিভিন্ন হিন্দু ফেসবুক গ্রুপে অ্যাড (যুক্ত) হবেন। অ্যাড হওয়ার পর প্রথম কাজ হচ্ছে সেখান থেকে বেশিরভাগ মেয়েদের ছবিযুক্ত আইডি টার্গেট করবেন এবং হিন্দু মেয়েদের আইডি লিংক আমাদের গ্রুপে প্রেরণ করবেন এবং নিজেরা ফেসবুকে মেসেজ করবেন। আপনারা শুরুতেই মেয়েদের সঙ্গে সমস্ত প্রেমের আলাপ করবেন না। ধীরে ধীরে তাদের মনে প্রবেশ করতে হবে। আগে তাদের মন জয় করতে হবে। বেশি অতিরিক্ত প্রশংসা করতে যাবেন না। তবে মাঝে মধ্যে কথা শেষে হালকা-পাতলা প্রশংসা করবেন এবং প্রতিনিয়ত তার প্রতি যত্নবান দেখাবেন। তার প্রত্যেকটি বিপদে আপনি বেশি উদ্বিগ্ন দেখাবেন এবং কথা শেষে আল্লাহ ভরসা এবং ইনশাআল্লাহ-এ কথাগুলো উচ্চারণ করবেন। তবে তাদের দেব-দেবী নিয়ে প্রথমে কোনো আপত্তি করবেন না, কাউকে খারাপ বলবেন না। তাহলে আপনার প্রতি বিরক্তি চলে আসবে তার মনে। আপনার স্কুলে-কলেজে অনেক হিন্দু বন্ধু আছে। তাদের বিভিন্ন পূজায় আপনার যান। তখন এ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের কুসংস্কৃতি সম্পর্কে আপনারা জেনে নেবেন। এভাবে করতে করতে একবার প্রেমে পড়লেই বিভিন্ন বাহানা করে এখানে সেখানে দেখা করার বাহানা করবেন। তবে প্রথম প্রথম তেমন কিছু করবেন না যাতে মেয়েটি বিরক্তবোধ করে। তাকে আপনি এমন মনোভাব দেখাবেন, তাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন। ওনার শরীর আপনার প্রয়োজন নেই। ওনার মনকে আপনি ভালোবাসেন। তাহলে দেখবেন অতি সহজে এবং তাড়াতাড়ি আপনার প্রতি বেশি দুর্বল হবে। আর দুর্বল হওয়ার পর আস্তে আস্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। আর একবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে আর কোনো টেনশন নেই।’

বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে উদ্ভট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত উসকানিমূলক প্রচারণা, কথিত ধর্মান্তরকরণ মিশন অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু পরিবারগুলো গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ইতোমধ্যে নিপতিত হয়েছে এবং তাদের মেয়েদের জীবনের, শিক্ষার ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় অধিকতর শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে তাদের কন্যা সন্তানদের স্কুলে-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। এসব প্রচারণা ও উদ্ভট কার্যকলাপ সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির পথে নিরতিশয় বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। এই কার্যকলাপ বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে এসব ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের এবং যারা এহেন উস্কানিমূলক অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।

সাজেকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এক ত্রিপুরা যুবক মারধরের শিকার

0
ছবি: প্রতিকী

হিল ভয়েস, ৭ এপ্রিল ২০২৪, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের কর্তৃক এক নিরীহ ত্রিপুরা যুবক মারধরের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল ৬ এপ্রিল ২০২৪ বিকেলের দিকে সাজেক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নিউ তাংথাং গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ত্রিপুরা যুবকের নাম বনেশ্বর ত্রিপুরা (২৭), পীং-চিরন কার্বারি, গ্রাম-নিউ তাংথাং।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরের দিকে হঠাৎ ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র বিভাগের কমান্ডার রিডিংস এর নেতৃত্বে ১৫-১৬ জনের একটি সশস্ত্র দল ওল্ড তাংথাং-এ আসে। বিকালে পার্শ্ববর্তী গ্রাম নিউ তাংথাং থেকে মুঠোফোন যোগে কয়েকজন গ্রামবাসীকে তাদের সাথে দেখা করতে বলে। ভয়ে উক্ত বনেশ্বর ত্রিপুরাসহ কয়েকজন গ্রামবাসী সেখানে আসলে, আসার সাথে সাথে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সদস্য রাজীব গান্ধী বনেশ্বর ত্রিপুরাকে ব্যাপকভাবে মারধর করে এবং গ্রামবাসী কয়েকজনকে জীবন নাশের হুমকি দেয়।

গ্রামবাসীদের তথ্যমতে, আগেও এই ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা মুঠোফোনে গ্রামবাসীদের একাধিকবার হুমকি দিয়েছে এবং বিভিন্ন সময় তারা নিজের ব্যক্তিগত কাজে বিনা পয়সায় জোরপূর্বক গ্রামবাসীদের কাজ করতে বাধ্য করে।

তারা আরও জানান, বিভিন্ন সামাজিক অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়ে, কোনোরূপ উপায় না থাকার কারণে নিরাপদ আশ্রয় নিতে রাজীব গান্ধী দুয়েক বছর আগে ইউপিডিএফ সশস্ত্র দলে যোগদান করে।