৭ মাসে ১৭ জন সংখ্যালঘু হত্যা ও ৬৫ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে: ঐক্য পরিষদ

0
887

হিল ভয়েস, ৬ অক্টোবর ২০২০, ঢাকা: চলতি ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ৭ মাসে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ফলে ১৭ জন সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে হত্যা, ৬৫ জন সংখ্যালঘু নারী ও শিশু সহিংসতা শিকার, ৬০টি প্রতিমা ভাংচুর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে।

আজ ৬ অক্টোবর ২০২০ মঙ্গলবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথের স্বাক্ষরিত “করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের চালচিত্র” শীর্ষক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, চলতি বছরে (২০২০ সালে) করোনাভাইরাস সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ মহামারীতেও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস পূর্বেকার মতো অব্যাহত ছিল। এসব সন্ত্রাসের কোন কোনটির সাথে সন্ত্রাসীরা সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীর পরিচয় দিয়েছে।

বিগত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর-এ ৭ মাসের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ফলে ১৭ জন হত্যার শিকার, ১০ জন হত্যাচেষ্টার শিকার ও ১১ জনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।

সংখ্যালঘু নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতায় ৩০ জন ধর্ষণের/গণধর্ষণের-নির্যাতনের শিকার, ৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা, ৩ জন শ্লীলতাহানীর কারণে আত্মহতা, ২৩ জন জোরপূর্বক অপহরণের শিকার ও ২ জনকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।

ধর্মীয় পরিহানিমূলক ঘটনাবলীর মধ্যে ২৭টি প্রতিমা ভাংচুর; ২৩টি মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা; ৫টি শ্মশান/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া ৪ জনকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য হুমকি দেয়া; ৭ জনকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ; ২০টি পরিবারকে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ত্রাণ বিতরণকালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আহ্বান করা এবং মহানবীকে কটুক্তির মিথ্যা অভিযোগে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

জায়গা-জমি জবরদখল ও উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে হামলার মধ্যে ২৬টি বসতভিটা, জমিজমা ও শ্মশান থেকে উচ্ছেদের ঘটনা; ৭৩টি বসতভিটা, জমিজমা ও শ্মশান থেকে উচ্ছেদের অপপ্রয়াসের ঘটনা; ৩৪ জনকে দেশত্যাগের হুমকি; ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করার ঘটনা; ৮৮টি বসত-ভিটা/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা; ২৪৭ জন দৈহিক হামলায় গুরুতর জখমের ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নিজস্ব সূত্র, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচ ও শীর্ষ গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্য তথ্যের ভিত্তিতে বিগত সাত মাসের করোনাকালীন সময়ের এই সাম্প্রদায়িক চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এ চালচিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত এক বিবৃতিতে বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাংলাদেশে নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো- ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভয়ে ভীত করে উচ্ছেদের মাধ্যমে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা যাতে, দেশটি সংখ্যালঘুশূণ্যে পরিণত হয়। পাকিস্তানি আমলের সাম্প্রদায়িক মহলবিশেষের এ ঘৃণ্য চক্রান্ত স্বাধীন বাংলাদেশেও অব্যাহত রয়েছে। এ চেষ্টা ফলপ্রসূ হলে দেশ ও জাতি গভীর সংকটে নিপতিত হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

বিষয়টি সুগভীর বিবেচনায় নিয়ে আনার জন্যে বিবৃতিতে সরকার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। বিগত নির্বাচনের পূর্বে সরকারী দল কর্তৃক প্রতিশ্রুত ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকবলিত স্থান পরিদর্শনে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ‘পূর্বেকার চেয়ে ইতিবাচক’ হিসেবে মন্তব্য করে সন্ত্রাস রোধে ও সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিতে অর্থবহ ভূমিকা পালনের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।