স্থায়ী ফোরামে আদিবাসী কর্মীদের উপর ডিজিএফআই-এর নজরদারি কি জাতিসংঘের মানবাধিকার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

0
274

প্রীতি বি চাকমা

সম্প্রতি আমি নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশনে যোগ দিতে যা ১৭ থেকে ২৮ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি ১৭-২০ এপ্রিল পর্যন্ত এতে অংশ নিয়েছিলাম এবং সারা বিশ্বের বিপুল সংখ্যক আদিবাসী দেখেছি যারা এতে অংশ নিতে এসেছিলেন।

২০০০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভা কর্তৃক স্থায়ী ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যার অধিবেশন প্রতি বছর সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্থায়ী ফোরাম অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার এবং সেই সাথে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত আদিবাসী ইস্যুসমূহের উপর এখতিয়ার নিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) অধীনে একটি উচ্চ-পর্যায়ের উপদেষ্টা সংস্থা হিসাবে কাজ করে থাকে।

স্থায়ী ফোরামে আটজন সরকারি প্রতিনিধি এবং আটজন আদিবাসী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১৬ জন বিশেষজ্ঞ সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকার কর্মী, জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থার প্রতিনিধি, সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা স্থায়ী ফোরামের অধিবেশনে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারেন এবং আলোচ্যসূচি অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ মিনিটের বক্তব্য দিতে পারেন।

যেহেতু জাতিসংঘ হচ্ছে সার্বজনীন মানবাধিকারের আতুর ঘর, তাই স্থায়ী ফোরামের অধিবেশনে আদিবাসীরা ভয়ভীতিহীন ও স্বাধীনভাবে তাদের আশা-আকাঙ্খা ও দু:খ-বেদনা প্রকাশ করতে পারে। আদিবাসীরা তাদের যন্ত্রণা, তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি, তারা যে উন্নয়ন চায় বা চায় না, তারা যে আত্মনিয়ন্ত্রণ উপভোগ করতে চায় এবং সবকিছু যা তারা বলতে চায় তার সবই তুলে ধরতে পারে এই স্থায়ী ফোরামে।

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলিও ফোরামের অধিবেশনে যোগ দেয় যেখানে আদিবাসী ও রাষ্ট্র উভয় পক্ষ একে অপরের সমস্যা বা সমাধানের বিষয়ে শুনতে আগ্রহী। কোনো কিছু নিয়ে বলার জন্য এটি একটি উত্তম প্ল্যাটফর্ম, যখন কেউ তার নিজের দেশের শাসন ও বিধান, দমন, নিপীড়ন এবং আরও অনেক কারণে নিজের দেশে এসব কথা তুলে ধরতে পারেন না। স্থায়ী ফোরাম তথা জাতিসংঘ একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আদিবাসী এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলি তাদের মধ্যে ব্যবধান, বিরোধ ও চ্যালেঞ্জগুলি মিটমাট করতে পারে।

আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসীদের চাকমা সম্প্রদায়ের লোক, যেখানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সমস্যা রয়েছে। আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামে বহুল পরিচিত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই, যা ২৫ বছরের এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হলে আমাদের জুম্ম আদিবাসীদের সকল সমস্যা সমাধান হতে পারত।

যেহেতু সরকার কালক্ষেপণের ছলচাতুরী করছে, চুক্তির বাস্তবায়ন মোটেও অগ্রসর হচ্ছে না, যার অর্থ হল আমাদের আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। সে কারণেই আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে আমাদের দুর্ভোগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরতে এ বছর ফোরামের ২২তম অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। সরকার যদি সত্যিই আমাদের জন্য ভালো কিছু করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তার পক্ষেও কিছু বলতে যেতাম।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দেশে শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে। কিন্তু স্ববিরোধ হলো এই যে, দেশের অভ্যন্তরে একই সেনাবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্ট) যারা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি এবং জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে লিপ্ত আদিবাসী অধিকার কর্মীদের প্রায়ই অপরাধীকরণের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে।

ফলে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই জুম্ম আদিবাসী অধিকার কর্মীদের উপর নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো, ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ক্যাম্পে আটক ও নির্যাতন, বাড়িঘরে তল্লাশি, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি সংঘটিত করে চলেছে।

আমি অবহত ছিলাম যে, ডিজিএফআই বা সামরিক বাহিনী চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে যা সকলের কাছে ওপেন সিক্রেট ব্যাপার। আমি এটাও জানি যে, তারা আদিবাসীরা যারা অধিকারের জন্য সোচ্চার, যারা সরকারের কঠোর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে থাকে, যারা বিদেশিদের সাথে কথা বলে বা সঙ্গ দেয়, তাদেরকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের উপর নজরদারি করে থাকে। কিন্তু আমি কখনই জানি না যে, তারাও (ডিজিএফআই বা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা) স্থায়ী ফোরামে যায় এবং ফোরামে অংশগ্রহণকারী জুম্ম আদিবাসী অধিকার কর্মীদের উপর নজরদারী করতে যায়।

আমি পার্মামেন্ট ফোরামে যোগ দিতে গিয়ে কী ঘটেছিল তা এখানে ব্যাখ্যা করছি:

১৮ এপ্রিল, আমি আইটেম ৩: অধিবেশনের বিশেষ থিম: “আদিবাসী জনগণ, মানব স্বাস্থ্য, গ্রহ ও আঞ্চলিক স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন: একটি অধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতি” এর উপর বিকালের অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা আমাকে নজরদারী করছে কিনা তা আমি জানতাম না, কিন্তু দেখলাম পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন।

১৯ এপ্রিল, এক জুম্ম অধিকারকর্মী চঞ্চনা চাকমা আইটেম ৫(ঘ) “আদিবাসীদের অধিকার এবং আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থা বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর এর সাথে মানবাধিকার সংলাপ”-এর উপর সকালের অধিবেশনে যোগদান করেন। তিনি দেখতে পান বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি (ডিজিএফআই ও এনএসআই) তার আসনের পিছনে বসে আছেন। তাই তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কর্মীদের অবহিত করতে যান। নিরাপত্তা কর্মীরা এসে তাদেরকে পরিচয় দেখাতে বলেন এবং দেখতে পান যে, তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যেই আমাদের জানানো হয়েছিল যে, প্রতিনিধিদলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ছাড়াও ডিজিএফআই-এর একজন সদস্য, এনএসআই-এর একজন সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কর্মীরা ডিজিএফআই সদস্যকে সেখান থেকে সরে গিয়ে সরকারি প্রতিনিধিদলের জন্য নির্ধারিত এলাকায় বসতে বলেন। ছবিটি নিম্নরূপ:

ছবি: চঞ্চনার পেছনে বসা ডিজিএফআই ও এনএসআই সদস্যরা

একই দিনে একই আইটেমে পরের অধিবেশনে আমি বক্তৃতা দিয়েছিলাম। এসময় বাংলাদেশের উক্ত দুই গোয়েন্দা আমাকে ভিডিও করেছিছেন। ছবিটি নিম্নরূপ:

ছবি: ডিজিএফআই এবং এনএসআই সদস্যরা প্রীতি বি চাকমাকে তার আলোচনার সময় ভিডিও করছেন

২০ এপ্রিল, আমরা, জুম্ম প্রতিনিধিরা যেখানে স্থায়ী ফোরামের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় সেই স্থানের কাছে জড়ো হয়েছিলাম। তখন গোয়েন্দা সংস্থার একজন লোক আমাদের ভিডিও করা শুরু করে। আমি যখন এটি দেখলাম, আমিও তার ছবি তুলতে দেরি করিনি এবং যখন তিনি দেখলেন আমি তার ছবি তুলছি, তিনি সাথে সাথে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন। পরে আমরা যখন অন্য কোথাও যাচ্ছিলাম, তিনি আমাদের লিফট পর্যন্ত অনুসরণ করলেন। তার ছবিটি নিম্নরূপ:

আমার এই লেখা এই ছবিগুলির ব্যক্তিদের আক্রমণ করা নয়, বরং যেহেতু তারা দেশ চালান বা সরকারের বিশিষ্ট প্রতিনিধি হন তাই তাদের সাধারণ জ্ঞান ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম সকলের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম এবং প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তুলে ধরতে পারে এবং এসব বক্তৃতার ভিডিও গুগল অনুসন্ধানে সহজেই পাওয়া যায়।

তাহলে তারা কেন আমাদের পিছু নেয়? পার্বত্য চট্টগ্রামে, জুম্ম জনগণ বিদেশীদের সাথে কথা বলতে পারে না এবং যখন তারা কথা বলে, তখন ডিজিএফআই এজেন্ট অবশ্যই সেই জুম্মকে অনুসরণ করে বিদেশীদের সাথে তিনি কি বলেছেন তা জানতে চেষ্টা করে। কিন্তু, নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের এই স্থায়ী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম নয় যে, যেখানে আমরা বিদেশীদের সাথে কথা বলতে পারি না। কারণ তারা সবাই বিদেশী। এমনকি বাংলাদেশ সরকারের পাঁচজন প্রতিনিধিও বিদেশি। তাহলে তারা কেন আমাদের পিছু নেয়?

এক্ষেত্রে আমি কিছু কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি, আর তা হলো: ১. এই গোন্দোদের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা যেভাবে মোকাবেলা করা হয় তা মোটেও ফলপ্রসূ নয়। কারণ তাদের মস্তিষ্কে শুধুমাত্র দমন করার প্রবণতা রয়েছে। একটি টেকসই সমাধানের জন্য এটা কখনো ভাল পন্থা নয়। যেহেতু তাদের দমনমূলক প্রবণতা এবং বর্ণবাদী মানসিকতা রয়েছে। তাই তারা স্থায়ী ফোরামে গিয়েও নজরদারী করার চেষ্টা করেন, যেখানে তারা জানেন না যে, সেখানে তাদের এই ধরনের কার্যকলাপ চালানো মানবাধিকারের পরিপন্থী; ২. তারা হলেন বেতনভুক্ত এজেন্ট এবং তাই তারা বিরাট কিছু করেছেন বলে দেখাতে চান এবং তারা উচ্চ বেতনে পদোন্নতির সুযোগ পাওয়ার জন্য এটা করে থাকেন; ৩. তারা তাদের বসদের সন্তুষ্ট করতে চান এবং এই বসদের মানসিকতা প্রায় একই রকম যারা তাদের অধীনে কাজ করছেন; ৪. সরকারি টাকায় কেনাকাটা করতে নিউইয়র্কে গিয়ে তারা সন্তোষ্টি লাভ করেন। এমনকি সরকারি কর্তৃপক্ষ আমাদের হত্যা করতে বললেও তারা তা করতে প্রস্তুত থাকেন। এই গোয়েন্দা এজেন্টরা এটা জেনে বিস্মিত হবেন না যে, আমি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষকে ফোরাম ভেন্যুতে ডিজিএফআই-এর উপদ্রব/নজরদারী সম্পর্কে অবহিত করেছি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জার্মান নাৎসিদের গোয়েন্দা সংস্থা ছিল গেস্টাপো এবং তারা জার্মানির সর্বত্র ছিল। যদি কেউ নাৎসিদের বিরুদ্ধে কিছু বলত, তবে তাকে নির্মূল করা হত। ফলস্বরূপ তাদের অনিবার্য পতন হয়েছিল যা তারা আশা করেনি। আমি যদি সমগ্র বাংলাদেশ বিবেচনা করি, আমি দেখতে পাই যে, সেখানে সব জায়গায় গেস্টাপোরা (ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিবি, র‌্যাব ইত্যাদি) সক্রিয় রয়েছে। আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী বা ম্যাডাম শেখ হাসিনাকে রুডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। বাংলাদেশের স্রষ্টার একজন কন্যা হিসেবে এবং সরকার প্রধান হিসেবে আমি তাঁকে অনেক সম্মান করি। তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছেন, আমি অবশ্যই তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু, সমস্যা হল তিনি এইসব মাথামোটা ডিজিএফআই এজেন্টদের সাথে ঘেরাও হয়ে পড়েছেন এবং সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সমাধান এখন অচলাবস্থায় রয়েছে। এই মাথামোটা এজেন্টদের কারণে তাঁর পতনও আসন্ন হয়ে পড়ছে কিনা কে জানে।

জাতিসংঘের ভীতি প্রদর্শন এবং প্রতিশোধমূলক কাজগুলি প্রতিরোধ এবং মোকাবেলা করার কার্যব্যবস্থা অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির একটি প্রাথমিক দায়িত্ব রয়েছে ভীতি প্রদর্শন এবং প্রতিশোধমূলক কাজগুলি প্রতিরোধ করা ও এ থেকে বিরত থাকা এবং প্রতিশোধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিদের রক্ষা করারও একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যেখানে প্রতিশোধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেখানে জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক ফোরামে জুম্ম আদিবাসী অধিকার কর্মীদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই এবং এনএসআই) লোক পাঠানোর বিষয়টি মানবাধিকার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেই প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে বৈকি।

প্রকৃতপক্ষে, সরকার যা করছে তা কখনোই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর গৃহীত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের আদিবাসী অধিকার কর্মীদের উপর নজরদারির জন্য জাতিসংঘে ডিজিএফআই এবং এনএসআই কর্মীদের পাঠানো আদিবাসীদের উপর সরকারের দমন-পীড়নের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে এবং বলা যেতে পারে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী নীতিকেই উন্মোচিত করেছে।