সেনাবাহিনী কর্তৃক সুবলঙে দুই নিরীহ জুম্মকে মারধর, বড়াদমে নতুন ক্যাম্প স্থাপন

0
2030
ছবি: সুবলং ক্যাম্প

হিল ভয়েস, জুন ২০২০, রাঙ্গামাটিসম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলাধীন বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নে সুবলং সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী কর্তৃক দুই নিরীহ জুম্মকে আটকে রেখে বেদম মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের পর ছেড়ে দেওয়ার সময় সেনাবাহিনী ঐ নিরীহ ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখেছে বলেও জানা গেছে।

মারধরের শিকার দুই নিরীহ জুম্ম হলেন- সুবলং ইউনিয়নের পুর্ব কদমতলী গ্রামের শরৎচন্দ্র চাকমা (৫৫), পিতা- মৃত কালা চান চাকমা ও সুখময় চাকমা (৪৪), পিতা- শান্তি কুমার চাকমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবারসকাল আনুমানিক ৮:৩০ টার দিকে তাদের গ্রাম থেকে ট্রলার বোটে রাঙ্গামাটি সদরে যাওয়ার পথে সুবলং সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী শরৎচন্দ্র  চাকমা ও সুখময় চাকমাকে আটক করে রাখে এবং ব্যাপক মারধর করে। এসময় সেনাবাহিনী তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়।

জানা গেছে, শরৎ চন্দ্র চাকমা ও সুখময় চাকমা উভয়েই খুবই সহজ সরল স্বভাবের এবং সাধারণ মানুষ। গত ২০১৯ অর্থবছরে পূর্ব কদমতলী গ্রামবাসীরা তাদের গ্রামে ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ডেকোরেশন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য সাহায্য চেয়ে বরকল উপজেলা পরিষদে আবেদন জানায়।

সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ মে ২০২০ বরকল উপজেলা পরিষদ থেকে গ্রামবাসীদেরকে কিছু আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করা হয়। গ্রামবাসীদের পক্ষে ডেকোরেশনের জিনিসপত্র কেনার জন্যই ঐদিন শরৎচন্দ্র চাকমা ও সুখময় চাকমা রাঙ্গামাটিতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে সুবলং সেনা ক্যাম্পের চেকপোস্টে পৌঁছেই আটকের পর তারা এই মারধরের শিকার হন।

সুবলং সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী কর্তৃক বিনা কারণে এভাবে নিরীহ মানুষকে আটক করে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় মানুষ অবাক ও ক্ষুব্ধ হন।

জলপথে যাতায়াতকারী লোকদেরকে ও সুবলং বাজারে আসা গ্রামবাসীদেরকে চেক করার নামে সুবলং ক্যাম্পের সেনা সদস্য কর্তৃক মারধর, হয়রানি, জিজ্ঞাসাবাদ, অনেক আটকে রাখা ইত্যাদি নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত করে আসছে। সম্প্রতি গত ১১ মে ২০২০ সুবলং ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা জুয়েল চাকমা নামে একজন নিরীহ ব্যক্তিকে অমানুষিকভাবে মারধর করে।

এর আগে ২৪ এপ্রিল ২০২০ রনিকা চাকমা (২২) নামে এক গর্ভবর্তী জুম্ম নারীকে জুরাছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি জেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে তল্লাসীর নামে সুবলং ক্যাম্পের সেনাবাহিনী কর্তৃক বিনা কারণে প্রায় একঘন্টা আটকে রাখার ফলে হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সকাল ৭:৩০ ঘটিকায় উক্ত গর্ভবতী নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

বড়াদমে নতুন ক্যাম্প স্থাপন

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মুরোঘোনায় প্রতাপ দেওয়ানের রেকর্ডীয় জমিতে সেনাবাহিনী একটি নতুন ক্যাম্প স্থাপন শুরু করেছে। পার্বত্য চুক্তির পর উক্ত স্থান থেকে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

গত ৩১ মে ২০২০ তারিখে ২৩ ইবি-এর কাপ্তাই জোনের ২৫/৩০ জনের এক সেনাদল তল্পিতল্পা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

গত ১ জুন ২০২০ রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল রফিকুল ইসলাম ও রাঙ্গামাটি বিগ্রেড ২০৩ পদাতিক ডিভিশনের মেজর মহিউদ্দিন ফারুকী (জি২) নতুন ক্যাম্প স্থাপনের কাজ পরিদর্শন করেছেন। সেই সময় সেনাবাহিনীর সাথে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর সদস্যরাও ছিল বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

গত ৪ জুন ২০২০ তারিখে  সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে জীবতলী ক্যাম্পে সিও লে. কর্ণেল মো: তুহীন ও চারজন সংস্কারপন্থী সদস্য নির্মাণাধীন ক্যাম্পে আরেক বার পরিদর্শনে এসেছে বলে জানা গেছে। এসময় দেপ্পোছড়ি গ্রামের সুধীর কার্বারীকেও ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে আসা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

নির্মাণাধীন ক্যাম্পের চেক পোষ্ট বসিয়ে যাতায়াতকারী গাড়ি ও লোকজনদের তল্লাসী ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।