সেনাবাহিনীর টহল ও চলাচল থেমে নেই পাহাড়ে, উদ্বেগ ও আশঙ্কা জনমনে

0
1448
ছবি: প্রতীকী

হিল ভয়েস, ৯ মার্চ ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় নিয়মিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল অভিযান, গ্রামে গ্রামে সেনা উপস্থিতি, বাড়িতে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ থেমে নেই বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে আদিবাসী জুম্মদের সবসময় এক ধরনের উদ্বেগ, মানসিক অশান্তি ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেনাবাহিনীর চলাচল, টহল ও উপস্থিতির কারণে লোকজনের, বিশেষত নারী ও যুব বয়সীদের স্বাভাবিক চলাচলে ও কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৮ মার্চ ২০২১ বিকাল আনুমানিক ২:৩০ টার দিকে রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলায় বনযোগীছড়া সেনা জোনের অধীন নতুন স্থাপিত লুলাংছড়ি সেনা ক্যাম্প থেকে ২৫ জনের একটি সেনাদল মৈদুং ইউনিয়নের বেলতলা নামক এলাকায় টহল অভিযানে যায়। অপরদিকে প্রায় একই সময়ে ফকিরাছড়ি সেনা ক্যাম্প থেকে একজন ওয়ারেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে ১৮ জনের একটি সেনাদল মৈদুং ইউনিয়নের কাঠালতলি নামক গ্রামে টহল অভিযানে যায়। এছাড়া, বিকাল আনুমানিক ৫:৩০ টার দিকে শিলছড়ি বাজার সেনা ক্যাম্প থেকে জনৈক ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে ১৮/১৯ জনের একটি সেনাদল মৈদুং ইউনিয়নের বটতলি গ্রামের দিকে টহল অভিযানে যায় বলে জানা যায়। এতে এলাকার জুম্ম জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জনগণের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক মুরুব্বি জানান, সেনাবাহিনী টহল অভিযানে বের হলে জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়। কারণ, যেকোনো সময় তারা সেনাবাহিনীর তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মারধর, আটকসহ অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেও রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন এলাকায় হঠাৎ সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করার খবর পাওয়া যায়। নিয়মিত সেখানে পর্যাপ্ত সেনা, বিজিবি ও পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও সম্প্রতি সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল ঐ এলাকায় মোতায়েন করা হয়। এনিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি।

জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ দুপুর ২:০০ টার দিকে দুইটি হেলিকপ্টার যোগে ৪০ জনের অধিক সেনাবাহিনীর একটি দল সাজেকের নিউ থাং থাং বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর বিকাল ৩:০০ টার দিকে সেনাবাহিনীর আরেকটি দল সেলদাই বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছে। এরপর সেনাদলটি স্থানীয় জনগণের কাছে দুর্গম লালু ও কালু যাওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকে। এছাড়া সাজেকের মাচলং লালুমুখ এলাকায় ইতোমধ্যে ৫০ জনের মত সেনাবাহিনীর একটি দল অবস্থান নেয় বলে জানা যায়।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সকাল আনুমানিক ১১:০০ টার দিকে বাঘাইছড়ির শিজকমুখ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের জায়গায় অবৈধভাবে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য প্রথমে বাঘাইছড়ি উপজেলার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর কর্মী ত্রিদিপ চাকমা দীপবাবু (৫৫) এর বাড়ি ঘেরাও করে এবং বাড়ির লোকদেরকে নানা প্রশ্ন করে। এরপর সেনা সদস্যরা জেএসএস’এর অপর কর্মী জুপিটার চাকমা বাপ্পি (৩৫) এর বাড়ি ঘেরাও করে তার খোঁজ করে। এসময় বাড়িতে জুপিটার চাকমা বাপ্পিকে না পেয়ে সেনা সদস্যরা জুপিটারের বড় ভাইয়ের স্ত্রী চয়ন তারা চাকমাকে হয়রানিমূলকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং হুমকিমূলক কথাবার্তা বলে।