সুনামগঞ্জে আদিবাসী হাজং নারীকে ধর্ষণকারী আব্দুল রাশিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

0
700
ছবিতে মানববন্ধন

হিল ভয়েস, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের রাজাই গ্রামে এক আদিবাসী হাজং নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার ১১:০০ টায় সুনামগঞ্জের ট্রাফিক পয়েন্টে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন (বাহাছাস) কেন্দ্রীয় পরিষদ।

বাহাছাসের সভাপতি জিতেন্দ্র হাজংয়ের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাদল হাজংয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক এন্ড্রু সলমার, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য, সুজন, সুনামগঞ্জের নির্বাহী পরিচালক নির্মল ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজং, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি চিরান, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ ও বাহাছাসের যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর হাজং প্রমুখ। মানববন্ধনে মূল বক্তব্য পড়েন বাহাছাসের সাংগঠনিক সম্পাদক ছোটন হাজং।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক এন্ড্রু সলমার বলেন, ধর্ষক যদি বেড়িয়ে পড়ে তাহলে অসহায় ভিকটিম পরিবার ও হাজং জনগোষ্ঠীর আমাদের প্রতি আর আস্থা থাকবে না।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য বলেন, শুধু আদিবাসীরা কেন আমাদের রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের সকলকে ধর্ষকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দেশের প্রতিটি জায়গায় একজন নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সুনামগঞ্জ জেলার সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি নিজের মুখে শিকার করেছে তার শ্লীলতাহানির কথা, সকলেই এটি বলেছে। এজন্য এমন একটি চার্জশীট দিতে হবে যেন ধর্ষক কঠোর শাস্তি পায়।
‘সুজন’ সুনামগঞ্জের নির্বাহী পরিচালক নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, আমি জোর দাবি জানাচ্ছি ধর্ষক যেন কোনভাবেই জামিন না পায় এবং অবিলম্বে তার শাস্তি কার্যকর করা হোক।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা বলেন, একজন নারী যদি ধর্ষণের শিকার হয় তাহলে এদেশেই কেবল নারীকে আবারো প্রমাণ করতে হয় বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে যে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক! যার ফলে মেডিক্যাল পরীক্ষায় অনেক ষড়যন্ত্র ও প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থাকে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই সারাদেশে আদিবাসী নারী ও সাধারণ মানুষের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে।

আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, হাজং নারীর প্রতি যে ধর্ষণ ও আঘাত এটি শুধু হাজং নারীর জন্য নয়, সারাদেশের মানুষের জন্য অপমানজনক। আর কত বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা দেখব! দেশের সকলেরই বিচার ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকলকেই রাস্তায় নামতে হবে।

মানববন্ধন থেকে সরকারের প্রতি ৬ দফা দাবি পেশ করা হয়। তা হলো- (১) হাজং নারী ধর্ষণের ঘটনাটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, (২) ধর্ষণের অভিযুক্ত আসামীকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, (৩) নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার আদিবাসী তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় কোন অবহেলা ও ফলাফলে প্ররোচনা হয়ে থাকলে তা খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদেরও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে, (৪) মামলা পরিচালনায় এই অসহায়, দরিদ্র ভিকটিমকে আইনী সহায়তা প্রদান করতে হবে এবং ভিকটিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, (৫) ক্ষতিগ্রস্ত নারীর মানসিক অবস্থা জোরদার করণে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং (৬) সারাদেশে আদিবাসী নারীদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতা ঘটনার দ্রুত সুষ্ঠু বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, গত ১৪ আগস্ট ২০২১ সকালে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থানাধীন সীমান্তবর্তী রাজাই গ্রামে এক হাজং আদিবাসী তরুণী (২৩) পার্শ্ববর্তী ছড়ায় গোসল করতে গেলে ঐ গ্রামের আব্দুল রাশিদ (৪৫), পিতা আবুল কালাম কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন। ঐ দিনই এ ধর্ষণ ঘটনায় ভিকটিমের মায়ের অভিযোগে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা হয়। মামলা নং ১২, তারিখ ১৪/০৮/২০২১ খ্রি:, ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯ (১)। এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব আছেন তাহিরপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবু বকর সিদ্দিক।