সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি ঐক্য পরিষদের

0
437

হিল ভয়েস, ২৩ অক্টোবর ২০২১, ঢাকা: শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে সারা দেশে প্রতিমা ভাঙচুর, পূজামন্ডপ ও মন্দিরে হামলা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত মাননীয় বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে ঐক্য পরিষদের ডাকে আজ (২৩ অক্টোবর) শনিবার সারাদেশে গণ-অনশন ও গণ-অবস্থান  কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় এই কর্মসূচি পালিত হয় শাহবাগে। এখান থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী কালীপূজায় দীপাবলী উৎসব বর্জন, সন্ধ্যে ৬টা থেকে ৬.১৫ পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির/মন্ডপের ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী ম্লোগান সম্বলিত ব্যানার টাঙানোর যে প্রতিবাদী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার সঙ্গে সুগভীর সংহতি জ্ঞাপন করা হয়েছে এবং এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সর্বস্তরের পূজার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া দাবিসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে পরবর্তীতে এসব দাবির সমর্থনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকা চল’ শ্লোগানে ঢাকায় সমবেত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

শাহবাগে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল এসে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। গণঅনশন ও গণঅবস্থান শুরু হয় পরিষদের অন্যতম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এখানে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। কর্মসূচির শেষের দিকে অবস্থান থেকে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। কর্মসূচি শেষে বেলা পৌনে একটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বেরোয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী এ্যাড. সুলতানা কামাল বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, যেখানে মেরুদন্ডহীন একটা বিরোধী দল আছে, এককভাবে তারা সংসদ চালায়, প্রশাসন চালায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে দেশে এমন ঘটনা ঘটল কী করে? তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশের বদনাম হলো। আমরা সব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। একটিও সাম্প্রদায়িক হামলার এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়নি। সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। প্রশাসনের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চিন্তা কাজ করে।

গণ-অনশন ও গণ-অবস্থানে আরও বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা ও আপিল বিভাগের প্রাক্তন বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এমপি, পঙ্কজ নাথ এমপি, ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকার নেত্রী খুশি কবীর, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, গৌড়ীয় মঠের পদ্মনাভ মহারাজ, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, গণ ফোরামের মোস্তফা মহসীন মন্টু, ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার ও অন্যতম ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক, উদীচীর সঙ্গীতা ইমাম, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং,বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, বাংলাদেশ বুড্ড্স্টি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব ও এ্যাড. তাপস কুমার পাল প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. কিশোর রঞ্জন ম-ল, দীপংকর ঘোষ, পদ্মাবতী দেবী, রবীন্দ্রনাথ বসু ও সুখেন্দু শেখর বৈদ্য।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট (প্রভাস-পলাশ) বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট (সোনালী-মৃত্যুঞ্জয়), ভোলাগিরি আশ্রম ট্রাস্ট, সাংবাদিক সংগঠন স্বজন, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু আইনজীবী পরিষদ নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।