সরকার মহামারীকে কাজে লাগিয়ে আদিবাসীদের আরও বঞ্চনা করছে: আদিবাসী ফোরামে জেএসএস প্রতিনিধি

0
1131

হিল ভয়েস, ৫ মে ২০২২, আন্তর্জাতিক ডেস্ক:৫ মে ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২১তম অধিবেশনের এশিয়া আঞ্চলিক সংলাপে অংশ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা বলেছেন, “বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ মহামারীকে কাজে লাগিয়ে আদিবাসীদের অধিকারকে আরও পদদলিত করেছে, যেখানে তারা ইতিমধ্যে খাদ্য ঘাটতি, মৃত্যু, বেকারত্ব, বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করতে না পারা, স্বাস্থ্যসেবার সীমিত সুযোগ, সামান্য বা কোনও সরকারী ত্রাণ না পাওয়া, সামরিকায়ণ, আদিবাসী অধিকার কর্মীদের অপরাধীকরণ, ভূমি বেদখল এবং নারীর উপর সহিংসতার মুখে দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছে ।”

স্থায়ী ফোরামের বিশেষজ্ঞ সদস্য (নেপাল থেকে) ফুলমন চৌধুরী এজেন্ডা আইটেম ৫(ই): “আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী এবং মহামারী থেকে মুক্তিলাভ” বিষয়ে এশিয়ার আঞ্চলিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এবং ফোরামের অপর সদস্য (চীন থেকে) মিজ ঝাং জিয়াওন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া এশিয়া আঞ্চলিক সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সঞ্জীব দ্রং, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সন্তোষিত চাকমা বকুল, এমরিপ-এর বিনোতাময় ধামাই।

অগাস্টিনা চাকমা তার আলোচনায় বলেন, “আমরা দুঃখ অনুভব করেছি, আমরা ব্যথা অনুভব করেছি, আমরা আশাহীন বোধ করেছি এবং আমরা ভয় অনুভব করেছি যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় একত্রিত হয়েছিল তখন আমাদের অনেকেই তাদের জীবন, তাদের চাকরি এবং এমনকি জীবিকা হারিয়েছিল। পৃথিবী যে মহামারীর দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে তার সাথে আদিবাসীরা সারা জীবন ধরে বসবাস করে আসছে তারই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার একটি পূর্বরূপ। আদিবাসীরা শুধু যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করছে তা নয়, তারা ভূমি হারানো, দমন-পীড়ন, নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও সম্মুখীন হয়।”

মিজ চাকমা আরও বলেন যে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী, ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য, কিন্তু এখনো কোন ভূমি নিষ্পত্তি হয়নি। চুক্তি করা সত্ত্বেও সরকার আদিবাসীদের জমি দখল করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি বেদখল একটি নিত্য নৈমিত্তিক স্বাভাবিক ঘটনা।

মহামারী চলাকালীন ভূমি বেদখলকারী, প্রাইভেট কোম্পানি এবং নিরাপত্তা বাহিনী অব্যাহতভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমি ও ভূখন্ড দখল করেছে। অধিকন্তু, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্পোরেট ব্যবসা পরিচালনা করছে এবং স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ছাড়াই হাজার হাজার একর ঐতিহ্যবাহী জুম চাষের জমি জোরপূর্বক কেড়ে নিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে, তারা একটি বিলাসবহুল হোটেল এবং একটি বিনোদন পার্ক স্থাপন করছে, যা বান্দরবানের ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রায় ১০,০০০ জুমচাষীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তিনি কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে পার্বদ্যাঞ্চল ও সমতলের আদিবাসীদের মালিকানাধীন কমপক্ষে ৬,৫০০ একর জমি হয় দখল করা হয়েছে বা দখলের মুখে পড়েছে।

সেনাবাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের পাশাপাশি পুলিশ ও গোয়েন্দ সংস্থাগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নেতা, কর্মী ও বন্দীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব বাহিনী কর্তৃক ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে অন্তত ২৯ জন আদিবাসীকে তুলে নেয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে বিশ্বের কিছু অংশ এবং কিছু নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী মুক্তি পারে, তবে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের তরফ থেকে এগিয়ে না আসায় আদিবাসী জুম্ম জনগণ তাদের ক্রমাগত হতাশা, ভয়, শোক এবং যন্ত্রণা নিয়ে তাদের জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে।

অবশেষে, অগাস্টিনা চাকমা জুম্ম জনগণের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ভূমি অধিকার নিশ্চিত করে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র অনুসরণ করতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করার জন্য স্থায়ী ফোরামের প্রতি আহ্বান জানান।