সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল ও প্রতিবন্ধী কোটা বৃদ্ধির দাবিতে চবিতে সমাবেশ

হিল ভয়েস, ১০ জুলাই ২০২৪, চট্টগ্রাম: আজ (১০ জুলাই) ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল এবং প্রতিবন্ধী কোটা বৃদ্ধির দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকাল ১১:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইফাজ উদ্দিন ইমু।

এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডিসেবল স্টুডেন্টস সোসাইটি অব চিটাগং ইউনিভার্সিটি (ডিসকু) এর সভাপতি শিহাব উদ্দীন ভূঁইয়া, সিনিয়র সদস্য মো. মাইদুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চাকমা, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম এর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুখীজয় তঞ্চঙ্গ্যা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মংক্যউ চাক, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল এর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিনিধি সিংয়ইপ্রু মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর চবি সংসদের দপ্তর সম্পাদক জোনায়েদ কবীর সায়র প্রমুখ।

শিহাব উদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, দেশের কোটার বৈষম্যমূলক বন্টন আজকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দেশের কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারই এই চলমান সমস্যার একমাত্র সমাধান। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে তিনি ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটার পুনর্বহাল এবং ১ শতাংশ ঐচ্ছিক প্রতিবন্ধী কোটা আবশ্যিক করে ৫ শতাংশে উন্নীত করে প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবি জানান।

মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, কোটা নিয়ে বাংলাদেশে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি আদিবাসীদের ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল এবং প্রতিবন্ধী কোটার আবশ্যকীকরণ ও ৫ শতাংশে উন্নীত করার জোর দাবি জানান।

সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে সমানতালে সমানভাবে সকলকে নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সরকারের অঙ্গীকার সত্ত্বেও ২০১৮ সালে ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫% আদিবাসী কোটা বাতিল করা হয়। এর মধ্য দিয়ে অনগ্রসর আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে আরও পেছনে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তিনি পূর্বতন আদিবাসী কোটার পুনর্বহাল এবং বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করার দাবি জানান।

সুভাষ চাকমা বলেন, পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা হলো অধিকার। দেশের প্রতিবন্ধী সমাজের জন্যও কোটা আবশ্যিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। সমগ্র দেশের সকল প্রান্তে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে কোটার যৌক্তিক সংস্কার অতীব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ অনাদিকাল থেকে শাসন-শোষণে জর্জরিত। প্রান্তিক আদিবাসী জাতিসমূহকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সমান্তরালে এগিয়ে আনতে সরকারের আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। এজন্য সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটার পুনর্বহাল অত্যন্ত জরুরি।

সুখীজয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ২০১৮ সালে মন্ত্রীসভার এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটা বাতিল করা হয়। যার ফলে অনগ্রসর আদিবাসী জনগোষ্ঠী আরও পিছিয়ে পড়ে যায়। তিনি পূর্বতন ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

মংকিউ চাক বলেন, সারাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলন দেখে আমরা বুঝতে পারি কোটা বন্টনে বৈষম্যমূলক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দেশের অপরাপর প্রান্তের সাথে আদিবাসী সমাজকে সমানভাবে এগিয়ে নিতে ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫% আদিবাসী কোটার পুনর্বহাল করার দাবি জানান।

সিংয়ইপ্রু মারমা বলেন, কোটা আমাদের অধিকার। দেশের অন্যান্য অগ্রসর অংশের সাথে সমানভাবে এগিয়ে নিতে অনগ্রসর প্রান্তিক মানুষদের কোটার আবশ্যকতা রয়েছে। তিনি ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের আহ্বান জানান।

জোনায়েদ কবীর সায়র বলেন, বর্তমান কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে একটা অংশ কোটা বাতিলের আন্দোলন বলে প্রচার চালাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনগ্রসর সুবিধাবঞ্চিত আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী সমাজের কোটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই কোটা নিয়ে চলমান সমস্যার সত্যিকারের সমাধান কোটার যৌক্তিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত।

সভাপতির বক্তব্যে সুদীপ্ত চাকমা বলেন, আমদের স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে শিক্ষা শেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চাকরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এই চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের। কিন্তু আজকে বিভিন্ন সমস্যার কারণে সরকার তা নিশ্চিত করতে পারছে না, যার কারণে শিক্ষার্থীরদের আজ রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ বাজেটে সরকারের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১.৬৯ শতাংশ, যেখানে একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করতে দরকার হয় কমপক্ষে ৬ শতাংশ। যদি আজ শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হতো, গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হতো আজ শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব স্ব বিভাগে দক্ষ হয়ে বিভিন্ন জব সেক্টরে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো। যেহেতু এই অসম সমাজ ব্যবস্থায় সবাইকে চাকরি প্রদান করা যাচ্ছে না সেহেতু ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ন্যূনতম কোটা থাকা প্রয়োজন। ২০১৮ সালের যে কোটা সংস্কার আন্দোলন রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোটা সম্পূর্ণ রূপে বাতিল করা হয়েছে তা বৈষম্যমূলক। প্রতিবন্ধী ও আদিবাসীরা সমাজের মূল স্রোত থেকে সামজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে। তারা কীভাবে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা অপরাপর মানুষের সাথে চাকরির প্রতিযোগিতায় নামবে। যা একেবারেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনের সমাবেশটি সমাপ্ত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি জিরো পয়েন্ট থেকে চবি স্টেশন হয়ে আবার জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবিনামা পেশ করা হয়:

১। কোটা বাতিল না করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।

২। ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল রাখতে হবে।

৩। ঐচ্ছিক প্রতিবন্ধী কোটাকে বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৪। বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের নিয়ে বিশেষ কোটা বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

More From Author

+ There are no comments

Add yours