সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মীয় পরিচয়ে চিহ্নিত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী- ঐক্য পরিষদ

0
782

হিল ভয়েস, ২৭ এপ্রিল ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মীয় পরিচয়ে কিংবা বিধর্মী বা অবিশ্বাসী হিসেবে চিহ্নিত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। গত ২৫ এপ্রিল ২০২১ ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের এই বক্তব্যের কথা জানানো হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী গত ২২ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে রিমান্ডে নেয়া আলেম উলেমাদেরকে ‘বিধর্মী এবং অবিশ^াসীদের’ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না করার যে আহ্বান জানিয়েছেন, একে ‘সাম্প্রদায়িক বক্তব্য’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কার্যনিবার্হী কমিটির গত ২৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখ অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, সরকারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিধায় তাদেরকে মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান বা বিধর্মী এবং অবিশ্বাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার পরিপন্থি।

ঐক্য পরিষদের সভায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সকল গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকেও এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ড.নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে কার্যনির্বাহী কমিটির সম্প্রতি (২২ এপ্রিল, ২০২১ শুক্রবার) অনুষ্ঠিত এ সভায় লকডাউন পরিস্থিতিতেও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-নির্যাতন বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অনতিবিলম্বে তা বন্ধে সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে দুঃস্থ, কর্মহীনদের মধ্যে সকল ধরনের মানবিক সহায়তা ও প্রণোদনার ক্ষেত্রে সকল প্রকার ধর্মীয় বৈষম্যের আশু অবসান কামনা করা হয়েছে।

সভায় গত ২০ এপ্রিল ২০২১ কথিত মাদকবিরোধী সমাবেশ থেকে হবিগঞ্জের চিরিয়াকান্দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সভায় একই সাথে এ ঘটনার সাথে কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কারো চক্রান্ত ও যোগসাজস আছে কিনা তা খুঁজে বের করে রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জড়িত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করা হয়েছে। সভায় আক্রমণকারী ও আক্রান্তদের সমন্বয় করে স্থানীয় থানা পুলিশের দায়েরকৃত মামলাকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে এ ব্যাপারে উধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

ভার্চুয়াল সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত কর্তৃক বক্তব্য উপস্থাপনের পর এর উপর আলোচনায় অংশ নেন মি. নির্মল রোজারিও, সি আর মজুমদার, কাজল দেবনাথ, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, দীপেন চ্যাটার্জী, বাসুদেব ধর, মিলনকান্তি দত্ত, অজয় দাশগুপ্ত, রঞ্জন কর্মকার, জে এল ভৌমিক, এ্যাডভোকেট অজয় চক্রবর্তী, মঞ্জু ধর, জয়ন্তী রায়, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাডভোকেট তাপস পাল, মি. হেমন্ত আই কোড়াইয়া, ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, এ্যাডভোকেট শ্যামল রায়, এ্যাডভোকেট কিশোর মন্ডল, দিপংকর ঘোষ, পদ্মাবতী দেবী, রবীন বসু, সন্তোস শর্মা, সুরজিৎ দত্ত লিটু, এ্যাডভোকেট বিনয় ঘোষ বিটু, অরবিন্দ ভৌমিক, ড. অরুণ গোস্বামী (শিক্ষক ঐক্য পরিষদ), সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য (মহিলা ঐক্য পরিষদ), ব্যারিস্টার তাপস বল (যুব ঐক্য পরিষদ), ইঞ্জিনিয়ার শুভ্রদেব কর প্রমুখ।