লামাপুঞ্জিতে খাসিয়াদের পান গাছ কর্তনের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

হিল ভয়েস, ১ আগস্ট ২০২৫, ঢাকা: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের লামাপুঞ্জির আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের দুই হাজারের অধিক পান গাছ কর্তনের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত ৩১ জুলাই ২০২৫ বিকাল ৪ ঘটিকার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আদিবাসী ছাত্র ও যুব সংগঠনসমূহ।

উক্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, হেলেনা তালাং, প্রতিনিধি কুবরাজ আন্তঃ পুঞ্জি উন্নয়ন, ফারহা তানজীম তিতিল, শিক্ষক, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ডাঃ গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, সহ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, রিপন বানাই, সদস্য সচিব, সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলন, উজ্জ্বল আজিম, ক্রীড়া, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, হ্লামংচিং মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখা, সুর্মী চাকমা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মৃন্ময় চিরান, সভাপতি, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর শাখা, অক্ষয় হাজং, সাধারণ সম্পাদক, হাজং স্টুডেন্ট কাউন্সিল সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

হেলেনা তালাং বলেন, যেসকল পান গাছ কর্তন করা হয়েছে সেগুলো কেবল খাসিদের একমাত্র জীবিকার অবলম্বন নয়, সেগুলো খাসিদের কাছে সন্তান সমতুল্য। যারা এই গাছগুলোকে কর্তন করেছে তারা খাসিয়াদের সন্তানদের হত্যা করেছে। আদিবাসীরা বনকে রক্ষা করতে জানে, কিন্তু রাষ্ট্র আদিবাসীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ।

ফারহা তানজীম তিতিল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যান্য সররকারের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে কোন তফাত দেখছি না। রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে কোন ধরনের গুণগত মান পরিবর্তিত হয়নি। আদিবাসীদের প্রতি সব সরকারের আচরণ বিমাতাসুলভ।

ডাঃ গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, বৈষম্য বিরোধের স্বপ্নকে সামনে নিয়ে যখন অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠিত হয় তখন আমরা মনে করেছিলাম, আমাদের আদিবাসীদের সাথে দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটবে। কিন্তু দেখলাম দেশের আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের উপর পাহাড় এবং সমতলে নানা অত্যাচার মামলা হামলা করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেসব সমস্যা সমাধানে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখিনি।

উজ্জ্বল আজিম বলেন, আদিবাসীরা আজ নিজ ভূমে পরবাসী। খাসিদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই বারবার খাসিয়াদের আদিবাসীদের পান গাছ কর্তন করা হচ্ছে। রাষ্ট্র কর্তৃক কোন উন্নয়ন মানেই আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ কিংবা ভূমি দখলের পাঁয়তারা। উন্নয়নের কথা শুনলেই আদিবাসীরা এখন আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। বর্তমান সরকার অন্যান্য সরকারের মতন আদিবাসীদের তোয়াক্কা করে না বলেই আদিবাসীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোন ধরনের আন্তরিকতা প্রকাশ করেনি।

রিপন বানাই বলেন, আদিবাসীদের উপর আর কত নিপীড়ন হলে রাষ্ট্র থামবে? খাসিয়া পুঞ্জিতে পান গাছ কর্তনসহ সারা দেশে আদিবাসীদের উপর নিপীড়নের ঘটনায় রাষ্ট্র নিরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে যারা এসব কার্যের সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোন উদাহারণ দেখতে পাই না। রাষ্ট্র বারবার আদিবাসীদের অধিকারকে উপেক্ষা করে চলেছে।

হ্লামংচিং মারমা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশে কত সরকার এলোগেলো, রাষ্ট্র ব‍্যবস্থার নানাকিছু পরিবর্তন ঘটলো, কিন্তু আদিবাসী জনগণের উপর সরকারের নিপীড়নের সিস্টেমের কোনো পরিবর্তন আসেনি। সরকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে বি-মাতাসূলভ আচরণ করে আসছে।

জুলাই গণঅভ‍্যুন্থানের পর আমরা মনে করেছিলাম এই গণ অভ‍্যুত্থানের মাধ‍্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার ভোগ করতে পারবে। কিন্তু গণ অভ‍্যুত্থানের মাধ‍্যমে গঠিত সরকার ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, অধিকার তো দিতেই পারেনি, বরং যারা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ করতে চায় তাদের উৎসাহিত করেছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ‍্যার সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা।

More From Author