লংগদু সাম্প্রদায়িক হামলার ৬ বৎসর পরও শাস্তি হয়নি আসামিদের

0
332

হিল ভয়েস, ২ জুন ২০২৩, রাঙ্গামাটি: ২০১৭ সালে লংগদু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা আজ ছয় বৎসর অতিক্রান্ত হলেও এখনও পর্যন্ত হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান নেতৃত্ব প্রদানকারী লংগদু সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার লে: কর্ণেল আবদুল আলিম চৌধুরী পিএসসি, টুআইসি মেজর রফিক ও লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম এবং স্থানীয় আওয়ামী-যুবলীগসহ ঘটনায় জড়িত সেটেলারদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। এসব আসামীরা আজও গ্রেফতার বা আইনের বাইরে রয়ে গেছে এবং তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে।

অপরদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে কিশোর চাকমা ও লংগদু থানা পুলিশের পক্ষে এস.আই দুলাল হোসেন কর্তৃক দায়েরকৃত দুটি মামলার পর কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ ও প্রশাসনের উদ্দেশ্য-প্রণোদিত গাফিলতির কারণে বর্তমানে সবাই জামিনে জেল থেকে বের হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আজকের এই দিনে ২০১৭ সালের ২ জুন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলা সদরে সেনা-পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগের নেতৃত্বে মুসলিম সেটেলাররা তিনটিলা এবং পার্শ্ববর্তী মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যা পাড়া এই তিন গ্রামে আদিবাসী জুম্মদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। এতে প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়।

এছাড়া তিনটিলা এলাকায় গুণমালা চাকমা নামে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধা পালিয়ে যেতে না পারায় ঘরের মধ্যে জীবন্ত আগুনে পুড়ে মারা যায়। এছাড়া হামলাকারীদের মারধরের শিকার হয়ে আহত হন তিন জুম্ম গ্রামবাসী।

পুড়ে যাওয়া তিন গ্রামের প্রায় ২৫০ পরিবার কেউই কোন সহায় সম্পত্তি রক্ষা করতে পারেনি এবং এক কাপড়ে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে কোন রকমে জীবন রক্ষা করেছে তারা।

সেনা-পুলিশ-সেটেলার-যুবলীগ কর্তৃক এভাবে সমাবেশের পর হামলা চালানো হয়।

এ হামলার পর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় দেখা দিলে সরকার স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে হামলার শিকার ও পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণ করে দেয়ার কাজটিও সঠিকভাবে হয়নি।

এর আগেও ১৯৮৯ সালে ৪ মে লংগদুতে আদিবাসী জুম্মদের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা হামলা চালানো হয়। যা ‘লংগদু গণহত্যা’ নামে পরিচিতি পায়। এরপর ২০১১ সালেও আরেকবার হামলা চালানো হয়। এতেও জুম্মদের বেশ কিছু ঘর পুড়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনার কোনটিরই আজও বিচার হয়নি।

এভাবে বিচারহীনতার কারণে জুম্ম জনগণের উপর একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।