লংগদুতে জমি বিরোধের জেরে সেটেলারদের হুমকির মুখে জুম্মরা

0
1499

হিল ভয়েস, ৩০ জুন ২০২০, রাঙ্গামাটিরাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন লংগদু উপজেলার ভাসন্যা আদাম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী এলাকায় ভূমি বিরোধের জের ধরে স্থানীয়মুসলিম সেটেলাররা জুম্ম গ্রামবাসীদের জবাই করাসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে এবং প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিরোধপূর্ণ এলাকায় চারারোপণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে জুম্ম গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, চাইল্যাতলী এলাকার জাল বাজ্যমাছড়া নামক স্থানে স্থানীয় জুম্ম ও মুসলিম সেটেলারদের মধ্যে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষকে উক্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় কোন কাজ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু মুসলিম সেটেলাররা সম্প্রতি সেই জায়গাটিতে বেদখল নিশ্চিত করতে জঙ্গল পরিষ্কার করাসহ চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

গত ২১ জুন ২০২০ রবিবার ভাসন্যা আদাম ইউনিয়নের অন্তর্গত ৫নং চাইল্যাতলী মৌজার হেডম্যান বিন্দুময় চাকমা বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক উক্ত বিরোধপূর্ণ জায়গা জবরদখল এবং এর ফলে সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা করে লংগদুর সহকারি কমিশনার (ভূমি)-এর বরাবরে একটি পত্র পেশ করেছেন।

উক্ত পত্রে হেডম্যান বিন্দুময় চাকমা উক্ত বিরোধপূর্ণ জায়গাটি চাইল্যাতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: রফিক এর নেতৃত্বে পশ্চিম চাইল্যাতলী সেটেলার এলাকার (১) মোঃ শাহ আলম, পীং-নরুল ইসলাম, (২) মোঃ বাবুল মিয়া, পীং-মো: কাশেম মাঝি, (৩)মোঃ ইউসুফ, পীং-মো: কাশেম মাঝি, (৪) মোঃ নুর আলম, পীং- নরুল ইসলাম প্রমুখ ব্যক্তিগণ জবরদখল করছে বলে অভিযোগ করেন।

হেডম্যান বিন্দুময় চাকমা উক্ত দরখাস্তে আরও উল্লেখ করেন, উল্লিখিত এলাকাটিতে উভয়ের দাবিদাওয়া রয়েছে। এমতাবস্থায় বসতিকারী মুসলিমরা যদি নিষেধাজ্ঞা লংঘন করে বসতিস্থাপন কিংবা জোর জবরদখল করতে চায়, ভবিষ্যতে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক হামলা হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে জুম্মরা ভাসন্যা আদাম ইউনিয়নের অন্তর্গত ৫নং চাল্যাতুলি মৌজাধীন উক্ত জায়গা ভোগদখলকরে আসছিল। সেখানে কোন বাঙালি বসতি ছিল না। কিন্তু ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লংগদু এলাকায়ও বাংলাদেশের সমতল অঞ্চল থেকে এনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মুসলিম সেটেলারদের বসতি প্রদান করে।

এসময় স্থানীয় জুম্মরা নিজেদের রেকর্ডিয় ও ভোগদখলীয় এলাকা হতে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরও জুম্মরা ঐ এলাকায় জুমচাষ ও ভোগদখল করে আসছে। পরে মুসলিম সেটেলাররা চাল্যাতুলি এলাকার জুম্মদের রেকর্ডীয় ও ভোগদখলীয় ঐ জায়গা তাদের দাবি করেবে দখল করতে চাইলে জুম্ম ও মুসলিম সেটেলারদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়।

তারই সূত্র ধরে, গত ৬ জানুয়ারি ২০০৫ লংগদু উপজেলার ভূমি অফিসের কানুনগো উক্ত বিরোধের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ঘটনাস্থল সরেজমিন তদন্ত করেন। এসময় সংশ্লিষ্ট জুম্ম ও বাঙালি সেটেলাররাসহ উপজেলার প্রশাসনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঐদিনই পরে উভয়পক্ষকে নিয়ে এক সভায় বিরোধপূর্ণ জায়গা চিহ্নিত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কেউ উক্ত জায়গায় আবাদ করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু উক্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত মার্চ ২০২০ মাসে মুসলিম সেটেলাররা উক্ত বিরোধপূর্ণ স্থানে আবাদের কাজ শুরু করে।তাৎক্ষলিকভাবে বিষয়টি স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প কম্যান্ডারকে জানানো হলে, গত ২৫ মার্চ ২০২০ বিজিবি ক্যাম্প কম্যান্ডারের উপস্থিতিতে আবারও সিদ্ধান্ত হয় যে, যেহেতু জায়গাটি বিরোধপূর্ণ এবং নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেহেতু কোন পক্ষ উক্ত জায়গায় কোন কার্যক্রম করতে পারবে না।

কিন্তু এরপরও বাঙালি সেটেলাররা নানাভাবে উক্ত জায়গাটি জবরদখলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইতোমধ্যে তারা উক্ত জায়গায় কিছু দেশীয় আমের চারাও রোপণ করে। এমতাবস্থায় গত ১৮ জুন ২০২০ রোপণকৃত উক্ত দেশীয় আমের চারাগুলো কে বা কারা তুলে নিয়ে যায় বা উপুরে ফেলে দেয়।

তারপর দিনই সেটেলার বাঙালিরা কোন ধরনের প্রমাণ ছাড়া আমের চারাগুলো পাহাড়িরা নিয়ে গেছে বলে এলাকার মধ্যে গুজব ছড়ায়। পাশাপাশি তারা পাহাড়িদেরকে একতরফাভাবে দোষারোপ করে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করে। এমনকি সেটেলার বাঙালিরা একটি আম চারার বদলে একজন পাহাড়ি জবাই করবে, পাহাড়িদের বাজারে আসতে দেবে না বলেও হুমকি প্রদান করে।

ফলে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক যে কোন মুহূর্তে সাম্প্রদায়িক হামলা হতে পারে বলে পাহাড়িদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। জুম্মদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী ও ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ ইসমাইলকে অবহিত করা হয়। এমতাবস্থায় গত ২১ জুন ২০২০ ৫নং চাইল্যাতলী মৌজার হেডম্যান বিন্দুময় চাকমা উক্ত বিরোধের প্রতিকার চেয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট লিখিত আবেদন পেশ করেন।