রোয়াংছড়িতে বিজিবি ও এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের নামে জুম্মদের ধান্যজমি বেদখলের পাঁয়তারা

0
693
ছবি: প্রতীকী

হিল ভয়েস, ১৪ মে ২০২২, বান্দরবান: সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ক্যাম্প স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণের নামে স্থানীয় আদিবাসী জুম্মদের প্রায় ৬০ একর পরিমাণ ধান্যজমি বেদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এইসব জমি হারালে ভুক্তভোগী স্থানীয় জুম্মরা স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়বে এবং জীবিকার চরম সংকটে পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জুম্মরা। তারা বিজিবি ও এপিবিএন কর্তৃক ক্যাম্প স্থাপনের নামে জুম্মদের ভূমি বেদখলের চেষ্টাকে জুম্ম বিদ্বেষী এবং জুম্মদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিহিত করছেন।

ইতোপূর্বেও রোয়াংছড়ি সদরে অনেক জুম্ম অধিবাসীর বহু ধান্যজমি সরকারের বিভিন্ন কার্যালয় স্থাপনের নামে দখলে নেয়া হয়েছে জানানা তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রোয়াংছড়ি উপজেলা সদরের দুটি পাশাপাশি এলাকা তাইম্রংছড়া এলাকায় একটি বিজিবি ক্যাম্প ও পাগলাছড়া ঝিরি এলাকায় একটি এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের নামে জুম্মদের ৬০ একর পরিমাণ ধান্যজমি দখলের চেষ্টা চলছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে।

এই জমিগুলো দখল হয়ে গেলে জমির মালিকদের জীবনধারণ করার মতো কোনো জমি থাকবে না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এতে অন্তত ২১টি জুম্ম পরিবার তাদের ধান্যজমি হারাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, এই ২১ জনের কেউই তাদের জীবিকার অবলম্বন এইসব জমি হাতছাড়া করতে ইচ্ছুক নয়। এছাড়া তাদের জীবনধারণ করার মতো আর জমি নেই বলেও জানান তারা। এইসব জমিতে তারা বছরে ২/৩ মৌসুম চাষাবাদ করে থাকেন।

ক্ষতির সম্মুখীন জমির মালিকরা হলেন- (১) আনন্দসেন তঞ্চঙ্গ্যা, (২) খনক্যা তঞ্চঙ্গ্যা, (৩) লক্ষ্মীকুমার তঞ্চঙ্গ্যা, (৪) চন্দ্রলাল তঞ্চঙ্গ্যা, (৫) বানস্যা তঞ্চঙ্গ্যা, (৬) মাঝি তঞ্চঙ্গ্যা, (৭) শৈনু মারমা, (৮) রফিদন তঞ্চঙ্গ্যা, (৯) কালাবিষা তঞ্চঙ্গ্যা, (১০) না কোওয়ে মারমা, (১১) চথোয়াইপ্রু মারমা, (১২) মংচউ মারমা, (১৩) হ্লাচিংমং মারমা, (১৪) নাই সাং উ মারমা, (১৫) প্রুসিংঅং মারমা, (১৬) আপ্রুসে মারমা, (১৭) প্রুমংথুই মারমা, (১৮) পুপ্রু মারমা, (১৯) মংঞোয়াইচিং মারমা, (২০) মংশৈথোয়াই মারমা, (২১) পুথুইঅং মারমা।

স্থানীয় জুম্মরা জানান, দখলের প্রক্রিয়ায় থাকা জমির পাশে পুরনো রোয়াংছড়ি থানার জায়গা রয়েছে। যে জায়গাটি এখনো থানা কর্তৃপক্ষ অব্যবহৃতভাবে দখলে রেখেছে। জায়গাটি নিয়ে রোয়াংছড়ি মৌজার হেডম্যানের সাথে মামলামোকদ্দমা চলেছিল বলে জানা গেছে।

তারা জানান, সরকার ও প্রশাসন আদিবাসীদের ধান্য ও অন্যান্য ফসলি জমি অধিগ্রহণ করার দিকে বেশি বেশি নজর দিচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন চাচ্ছে, যাতে আদিবাসীরা অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, রোয়াংছড়ি সদর এলাকায় আদিবাসীদের মধ্যে তিন বা দুই ফসলি চাষযোগ্য জমি অত্যন্ত অল্প। সরকার ও প্রশাসন অতীত থেকে চাষযোগ্য জমিকে নিশানা করে সরকারি প্রয়োজনের অজুহাতে জুম্মদের এসব জমি দখল করে নিয়ে চলেছে। এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা প্রশাসনের অফিস স্থাপনের জন্য সরকার কর্তৃক জুম্মদের দুই-তিন ফসলি চাষযোগ্য অনেক জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন সেই অধিগ্রহণকৃত অনেক জমি বাৎসরিক বা ত্রিবার্ষিক বর্গা দিয়ে কৃষকদের দ্বারা চাষাবাদ করে আসছে। তাছাড়া সদর এলাকার ওয়াগই পাড়ার পাশে রোয়াংছড়ি থানা স্থাপনের কথা বলেও জুম্মদের বহু পরিমাণ ধান্য জমি অধিগ্রহণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ভুক্তভোগী জুম্ম গ্রামবাসী বিজিবি ও এপিবিএন কর্তৃক এই অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাবে বলে জানা গেছে।