রুমায় কেএনএফ ও সেনাবাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ, ২ জন সেনা নিহত, ৩ জন আহত

0
277

হিল ভয়েস, ১৭ মে ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবানের রুমার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নে ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় সেনাবাহিনী ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। উক্ত ঘটনায় সেনাবাহিনীর ২ জন সদস্য নিহত এবং আরো ৩ জন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে। অন্যদিকে কেএনএফের কয়েকজন সদস্যও হতাহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুর ১:৪৫ ঘটিকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গতকাল ১৬ মে ২০২৩ বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জারুলছড়ি গ্রাম এবং রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড়স্থ থিংদলতে পাড়ায় বমপার্টি খ্যাত কেএনএফের বিরুদ্ধে রুমা জোন, আলিকদম জোন ও বান্দরবান জোনের সেনা সদস্যরা যৌথ অপারেশনে বের হয়।

অভিযানের একপর্যায়ে দুপুর ১:৪৫ ঘটিকায় রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড়স্থ থিংদলতে পাড়া এবং বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জারুলছড়ি (ম্রো পাড়া) সীমান্ত এলাকায় রুমা জোনের ২৮ বীরের সেনাবাহিনী ও কেএনএফের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে।

এই বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের গুলিতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন সেনা সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়। তন্মধ্যে ২ জন সৈনিক ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে এবং একজন ক্যাপ্টেন ও একজন মেজরসহ আরো ৩ জন সৈনিক আহত হয়েছে বলে জানা যায়। নিহত দুইজন সৈনিকের নাম হচ্ছে মো: আলতাফ আহম্মদ ও মো: তোহিদ। আহতদের মধ্যে দুইজন অফিসারের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন রুমা জোনের অফিসার ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক আহম্মদ শওকত ও মেজর মনোয়ার। আহতদেরকে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল হেলিকপ্টার যোগে উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে বমপাটি খ্যাত কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যও হতাহত হয় বলে জানা গেছে। তবে কেএনএফের সংখ্যা ও নাম সঠিকভাবে এখনো জানা যায়নি।

এ ঘটনায় এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। জুম্ম গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। আজ বুধবার ভারতের মিজোরাম প্রদেশের লংতলাই জেলার মংবুহ পাড়ায় রুমা ও বিলাইছড়ি থেকে ৩০ জনের মত বম জনজোষ্ঠীর লোক আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়। সেই দলের মধ্যে সাবেক কেএনএফ-এর সদস্য বমনুন বমও আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে নভেম্বর থেকে রুমা ও রোয়াংছড়ি থেকে এযাবৎ বম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫ শতাধিক লোক মিজোরামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে তথা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন ও জনগণের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ চালানোর জন্য সেনাবাহিনী একের পর এক সশস্ত্র সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গঠন করে আসছে এবং সেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে ব্যবহার করে আসছে।

এধরনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে সর্বশেষ গোষ্ঠী হলো বমপার্টি নামে খ্যাত কেএনএফ। ২০০৮ সালে তৎকালীন বান্দরবান ব্রিগেড কম্যান্ডারের উদ্যোগে নাথান বম ও ভাঙচুংলিয়ান বমের নেতৃত্বে প্রথমে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে গঠন করা হয়। পরে ২০১৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) রাখা হয় এবং এই সংগঠনকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতায় লেলিয়ে দেয়া হয়।

এরপর ২০২১ সালে বমপার্টি অর্থের বিনিময়ে রুমার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের সিলৌপি পাড়া সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে স্থাপিত তাদের কেটিসি ক্যাম্পে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া নামক একটি ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা শুরু করে। তখন সেনাবাহিনী দেখেও না দেখার ভান করে ইসলামী জঙ্গীদের আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণের ঘটনা একপ্রকার মদদ দেয়।

পরে ঘটনাটি গণমাধ্যমে উঠে আসলে সেনাবাহিনী তথা সরকার উক্ত ইসলামী জঙ্গী সংগঠন ও জঙ্গীদের আশ্রয়প্রদানকারী কেএনএফের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে অক্টোবর থেকে কম্বিং অপারেশন শুরু করতে বাধ্য হয়। কম্বিং অপারেশনের প্রারম্ভিক অবস্থায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রোয়াংছড়ির সিপ্পি পাহাড়ের আস্তানায় সেনাবাহিনী কেএনএফ ও ইসলামী জঙ্গী ঘিরে রাখলেও সেখান থেকে কেএনএফ ও ইসলামী জঙ্গীদের পালিয়ে যেতে কৌশলে সুযোগ করে দিয়েছিল।

অপারেশনের একপর্যায়ে ১২ অক্টোবর ২০২২ বড়থলির সাইজাম পাড়ায় বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপর সশস্ত্র হামলা করে। উক্ত ঘটনায় সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য নিহত ও ৭ জন আহত হয়। এছাড়া সেনাবাহিনী একটি এলএমজি ও একটি সিআর হারায় এবং এ্যামুনিশন বক্স থেকে প্রায় কয়েক হাজার এ্যামুনিশন গায়েব হয়। অপরপক্ষে এ ঘটনায় বমপার্টির দুইজন সদস্য নিহত হয়।

এভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গঠিত কেএনএফ আজ সেনাবাহিনী ও তথা বাংলাদেশ সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে।