হিল ভয়েস, ১১ নভেম্বর ২০২৫, রাজশাহী: গতকাল ১০ নভেম্বর ২০২৫ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বুদ্ধিজীবী চত্বর প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজশাহী মহানগর শাখার উদ্যোগে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী ও স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়।

সভার শুরুতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ এযাবৎকালে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
উক্ত স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর মো. আমিরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উৎস চাকমা, উজ্জ্বল বাবু তঞ্চঙ্গ্যা এবং রুয়েটে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রিমন চাকমা। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রুয়েটে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এই স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
প্রফেসর মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, এম এন লারমা ছিলেন একজন মহান নেতা। যিনি জুম্ম তথা নিপীড়িত, শোষিত ও অধিকারহীন আপামর জনতার জন্য কথা বলতেন। এম এন লারমার কথা বলতে গিয়ে তিনি সাঁওতাল বিদ্রোহের সিধু-কানুর কথা উল্লেখ করেন। তিনি সূর্যসেন, প্রীতিলতার কথা বলেন যারা এম এন লারমার মতো আজোও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার শক্তি হিসেবে মূর্ত হয়ে আছেন।

তিনি আরো বলেন, এম এন লারমা এমন এক নেতা ছিলেন যিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৪ টি জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিলেন। জুম্ম জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে তিনি সমগ্র জাতিগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে তৎকালীন সরকার স্বতন্ত্র জাতির স্বীকৃতি এবং জুম্ম জাতি তথা শোষিত, নির্যাতিত আপামর জনতার অধিকার সংবিধানে স্থান না পাওয়ায় তিনি সংসদ অধিবেশন বর্জন করেন। তিনি শিক্ষক, রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী হিসেবে অবদান রাখেন। জুম্ম জাতিকে তিনি অধিকার ও রাজনৈতিক সচেতন করেন।
বিজয় চাকমা বলেন, এম এন লারমার জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই তিনি ছোটবেলা থেকে অধিকার সচেতন ছিলেন। পারিবারিকভাবে তিনি সেই শিক্ষাটি লাভ করেছিলেন। ফলস্বরূপ আমরা দেখি তখনকার ঘুণে ধরা জুম্মদের সামন্ত নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি ষাট দশকের কাপ্তাই বাঁধ বিরোধিতাস্বরূপ পাহাড়ের আপামর জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে নিজ দায়বদ্ধতায় উদ্যোগ হাতে গ্রহণ করেন। এর পরবর্তীতে আমরা দেখি তিনি পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে একই কাতারে সামিল করার জন্য প্রগতিশীল আদর্শের জুম্ম জাতীয়তাবাদের ধারণার উন্মেষ ঘটান।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে উগ্র বাঙালি জাত্যভিমানকে চ্যালেঞ্জ করে “বাংলাদেশের সকল নাগরিক বাঙালি বলে পরিচিত হইবেন” আব্দুল রাজ্জাক ভূঁইয়ার আনিত বক্তব্য দৃঢ় কন্ঠে বিরোধীতা করে তিনি পার্বত্য অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাশাপাশি বাংলাদেশের মেহনতি আপামর মানুষের কথা গণপরিষদ বিতর্কে ব্যক্ত করেন।

তিনি আরো বলেন, কেবলমাত্র একটি দিনের মধ্যে এম এন লারমার চেতনাকে সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না। পাহাড়ের বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে এম এন লারমার চেতনাকে বুকে ধারণ করার মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলনে নিজেকে সামিল করতে হবে। বর্তমান বাস্তবতা উপলব্ধি করে তরুণ প্রজন্মকে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমা। সভায় স্বাগতিক বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি রাজশাহী মহানগর শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাচুর্য্য চাকমা।
উল্লেখ্য, ১০ই নভেম্বর ১৯৮৩ সালে বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রের বিশ্বাসঘাতকতামূলক অতর্কিত হামলায় মহান নেতা এম এন লারমা আটজন সহযোদ্ধাসহ নিহত হন।
+ There are no comments
Add yours