রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস-২০২৫ উদযাপন

হিল ভয়েস, ১০ আগস্ট ২০২৫, রাজশাহী: গতকাল ৯ আগস্ট ২০২৫ আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংসদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখা এবং আদিবাসী স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এর সম্মিলিত উদ্যোগে “আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ গঠনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বার্থক প্রয়োগ” -প্রতিপাদ্য এর আলোকে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড মো: আমিরুল, ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা, সুভাস চন্দ্র হেমব্রোম, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সুমন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখা, সঞ্জয় কুমার ওরাও, সভাপতি, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, প্রিন্স হেমন্ত টুডু, সাধারণ সম্পাদক, আদিবাসী স্টুডেন্টস্ এ্যাসোসিয়েশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ড. মোঃ আমিরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমার পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের সাথে ছাত্রজীবন থেকেই ভালো একটা সম্পর্ক ছিল, এখনো আছে এবং পরবর্তীতেও থাকবে। তিনি বিভিন্ন দেশের আদিবাসীদের সাথে বাংলাদেশের আদিবাসীদের তুলনা তুলে ধরেন। রাষ্ট্র কর্তৃক দীর্ঘদিন যাবৎ আদিবাসীদের ভূমি দখল, “ভাগ কর, শাসন কর” নীতিতে আদিবাসীদের বিভেদ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের টুরিজম নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, যেখানে টুরিজমের ফলে আদিবাসী জনসমাজের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে না, সেখানে টুরিজম দরকার নেই।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের আদিবাসীদের মাঝে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কার্যকর করতে হবে। আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষার্থে নিজস্ব ভাষায় শিক্ষালাভ, ধর্ম-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে হবে এবং সর্বোপরি আদিবাসী দিবসের শুভকামনা ও প্রত্যাশা রেখে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

ইন্দ্রজিত চন্দ্র বেদ বলেন, আদিবাসী শব্দটিকে আমাদের সবার অন্তরে ধারণ করতে হবে, তবে খুব সহজেই আমরা সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী স্বীকৃতি পাব। এককথায় আমাদের দরকার ঐক্য। রাকসু তফসিলে আদিবাসী বিষয়ক কোন প্রতিনিধি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। আদিবাসী বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাও নিরব ভুমিকা রাখছেন বলে উল্লেখ করেন। সর্বোপরি তিনি ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো: আমিরুল ইসলাম-এর কাছে রাকসু নির্বাচনে আদিবাসীদের থেকে দুজন প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান।

প্রিন্স হেমন্ত টুডু বলেন, আদিবাসী সমমনা সকল সংগঠনের সাথে আদিবাসী দিবস পালন করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটি আসে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্যকে স্মরণ-ধারণ করতে পারি। আমরা যদি প্রত্যেকে ভালো জায়গায় গিয়ে আমাদের পরিবার, সমাজ এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তবে সোনার বাংলাদেশের গর্বিত আদিবাসী হিসেবে নিজেকে গড়তে পারব।

আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জয় কুমার ওরাও তাঁর বক্তব্যে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হয় যে, বাংলাদেশে আমরাই আদিবাসী, অথচ আমাদের আত্মপরিচয়ের জন্য আজো লড়াই করতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এআই এর ভালো-খারাপ প্রভাব রয়েছে৷ মাঝে মধ্যে আমরা এআই এ আদিবাসী বিষয়ক ভুল তথ্য দেখতে পাই। তবে আমরা ভালো দিকগুলোই দেখব। যেমন নিউজিল্যান্ডের মাওরি আদিবাসীরা এআই দ্বারা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় বর্ণ তৈরি করে দিয়েছে। সিপাহি বিদ্রোহ, সাওতাল বিদ্রোহে আদিবাসীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।

সুমন চাকমা বলেন, আদিবাসী পরিচয় দিতে গেলে তারা অধিবাসী শব্দটিকে টেনে নিয়ে আসছে। তারা জানে না, আদিবাসী মানে বাসিন্দা নয়! বরং আদিবাসী বলতে বোঝায় যারা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্রোতের বিপরীতে থেকে মাটি ও প্রকৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা, পোশাক, ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা জানি ১৮০০ শতকের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো স্থায়ী বাঙালি ছিলো না। পাহাড়ি আদিবাসীরা জুমচাষে অভ্যস্ত ছিল, কৃষিকাজ জানতেন না। পরবর্তীতে কিছু পরিমাণ বাঙালিকে সমতল থেকে পাহাড়ে কৃষিকাজ শেখার নিমিত্তে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারাই মূলত পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা।

তিনি বলেন, ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধের ফলে ভারতে লক্ষাধিক মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে কথা বলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেয়া এবং বাঙালি বলে সম্বোধন করা নিয়ে কথা বলেন। ১৯৭৮-৮৩ সাল এবং পরবর্তী সময়ে সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করা। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরে ভাগ কর, শাসন কর নীতির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সংযোগিতায় দল/উপদল সৃষ্টি করা। অন্তরবর্তীকালীন সরকারের নীরব ভূমিকা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীতে ১৭, ১৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে সাম্প্রদায়িক হামলায় জুনান, ধনঞ্জয়, অনিক মৃত্যুবরণ করা।

সুভাস চন্দ্র হেমব্রোম বলেন, সমতল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাকরাম মাঝি, সিধু, কানু এবং এম এন লারমার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। সারা বিশ্বে আদিবাসীদের সাথে বাংলাদেশের চিত্রে ভিন্নতা দেখতে পাই। জানি না বাংলাদেশ কেন ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে মুছে ফেলতে চায় এবং এই স্বাধীন ভূখন্ডে অবস্থানরত আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে চায় না। তিনি নিজস্ব ভাষায় শিক্ষালাভের দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সিনিয়র শিক্ষার্থী তন্ময় তঞ্চঙ্গ্যা।

আলোচনা সভা শেষে আদিবাসীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

More From Author

+ There are no comments

Add yours