হিল ভয়েস, ২১ অক্টোবর ২০২৫, চবি: আজ ২১ অক্টোবর ২০২৫ (মঙ্গলবার), রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করে বান্দরবানে সার্কেল চীফের সার্টিফিকেটের প্রাধান্যতা শিথিলকরণ, সেটেলার বাঙালিদের অযৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুর্নবাসন এবং আভ্যন্তরীণ উদ্ভাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুর্নবাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের নির্ধারিত সভা স্থগিতকরণের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশটি আজ সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে শুরু হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা সঞ্চালনায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপুল চাকমা, পালি বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন তঞ্চঙ্গ্যা ও প্রেনঙি ম্রো প্রমুখ।
রিপুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জুম্মদের ওপর নিপীড়নের ইতিহাসে সাধারণ জুম্মদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, লুটপাট ও ভাঙচুর নতুন বিষয় নয়। প্রতিটা সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পাহাড়িদেরকে হরেক রকমের আশার বাণী শোনায় কিন্তু বাস্তবে আমরা সেগুলোর কোন প্রতিফলন দেখা তো দূরে কথা উল্টো জুম্মদের জাতিগত নির্মূলীকরণের নানা ষড়যন্ত্র দেখতে পাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যাকে স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন অতি জরুরি। এজন্য সবার এই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
নয়ন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আশির দশকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশাল সংখ্যায় সমতল থেকে বাঙালি সেটলমেন্ট করা হয়। এই সেটেলার বাঙালিদের শাসকগোষ্ঠী জুম্মদের ওপর নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সরকার এক মুখোমুখি অবস্থায় ফেলে দিয়েছে যা কোন অবস্থাতেই কাম্য ছিল না। পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে আশির দশকের পূর্বে অনেক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি বজায় ছিল। কিন্তু জুম্মদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ, ধর্মান্তরকরণ, সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে জাতিগত নির্মূলীকরণের ষড়যন্ত্র চলছে দীর্ঘকাল ধরে। আমাদের সচেতন তরুণ প্রজন্মকে শাসকগোষ্ঠীর এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
প্রেনঙি ম্রো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের ওপর শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের ইতিহাস বলে দেয় গতকালকের যে সাম্প্রদায়িক ঘটনা সেটা মোটেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ভূমি কমিশনের সভার আগে সেটেলার বাঙালিদের অযৌক্তিক প্রতিবাদের ফলে সেটা স্থগিত হয়। জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। পার্বত্য চুক্তির পরবর্তীতে গঠিত ভূমি কমিশন, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবিরোধী গোষ্ঠীর কারণে কার্যকর হতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকেও এসব নিয়ে নির্লিপ্ততা আমাদের মনে প্রশ্ন উদয় করে দেয় চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের কতটা সদিচ্ছা আছে!
অবশেষে সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে।