হিল ভয়েস, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদন: আজ রাঙ্গামাটি জেলা শহর এলাকায় দীঘিনালা ও খাগড়াছড়িতে জুম্মদের উপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মিছিলকারী জুম্ম ছাত্র-যুবকদের উপর সেটেলার বাঙালিদের কর্তৃক সাম্প্রদায়িক হামলা এবং অতঃপর অনিক চাকমাকে নৃশংসভাবে হত্যা, আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় সহ জুম্মদের বিভিন্ন বসতি, স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বৌদ্ধ বিহারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো।
উক্ত হামলার ঘটনায় অনিক চাকমাকে হত্যা ছাড়াও অন্তত শতাধিক জুম্ম আহত হন এবং জুম্মদের ২৪টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, একটি ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ বিহারে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। এতে অন্তত ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় ও বিশ্রামাগারে হামলা চালিয়ে সেটেলার বাঙালিরা আঞ্চলিক পরিষদের ১টি পিকআপ, ৫টি পাজেরো, ব্যক্তিগত ২টি গাড়ি, ৫টি মোটর সাইকেল এবং উন্নয়ন বোর্ডের ১টি পাজেরো ও ১টি পিকআপে অগ্নিসংযোগ করে। এতে অন্তত ৩-৪ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেদিন সেটেলার বাঙালিরা নিউমার্কেট সংলগ্ন কালিন্দীপুর সড়কে ইট ও লাঠিসোটা দিয়ে মাথা ও শরীরে আঘাত করতে করতে কাপ্তাইয়ের কর্নফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষের ছাত্র অনিক চাকমাকে পাশবিক কায়দায় হত্যা করে। উক্ত হত্যার ঘটনাটির ভিডিও চিত্র তৎকালীন সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে দেখা যায়। হামলাকারী অনেককে স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়।
উক্ত হামলার ঘটনায় অন্তত ৩টি মামলা দায়ের করার কথা জানা যায়। এর মধ্যে প্রথম মামলাটি করেন হত্যার শিকার অনিক চাকমার পিতা আদর সেন চাকমা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে, যেটা রাঙ্গামাটির কোতয়ালী থানার মামলা নং-৭; পুলিশ কর্তৃক দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে, যেটা কোতয়ালী থানায় মামলা নং-৮ এবং আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষে তৃতীয় মামলা করেন মুজিবুর রহমান ২ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে, যেটা রাঙ্গামাটির কোতয়ালী থানার মামলা নং-১। এছাড়া অনিক চাকমার মা তারা সুন্দরী চাকমাও একটি মামলা করেছিলেন বলে জানা যায়।
উক্ত ঘটনার পর দৈনিক সমকাল পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী দুই দফায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে কোনো আলামত না পাওয়ায় এদের মধ্যে অনেক আগে দুইজন জামিন পেয়ে মুক্ত হন বলে জানা যায়।
সর্বশেষ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- অনিক চাকমা হত্যা মামলার আসামী মোঃ রুবেল (২৩), মোঃ জালাল (২৭) ও আরবার (১৭) এবং অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মামলার আসামী রাকিব (২৭) ও আরিফুল (১৭)। অনিক চাকমা হত্যা মামলার তিন আসামীর মধ্যে একজন মোঃ রুবেল ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হত্যা মামলার আসামী আরবার (১৭) এবং অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মামলার আসামী রাকিব (১৭) দুইজনকে নাবালক হিসেবে অনেক আগে কারাগার থেকে স্থানান্তর করে জাতীয় কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহেদ উদ্দিন একাধিক গণমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন যে, এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।
তবে একটি সূত্র বলেছে, একজন ব্যতীত বাকীরা সবাই জামিনে ছাড়া পেয়েছে।
মামলাসমূহে হামলাকারী অপরাধী হিসেবে ২০০০ হতে ৩০০০ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানা গেছে। তাছাড়া প্রকৃত অপরাধীদের অধিকাংশই শাস্তির আওতার বাইরে রয়ে গেছে। পুলিশ তাদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা ও খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটেলার বাঙালিদের কর্তৃক জুম্মদের উপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাঙ্গামাটি জেলা সদরে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আদিবাসী জুম্ম ছাত্র-যুবকরা একটি মিছিল বের করলে এক পর্যায়ে সেটেলার বাঙালিদের সাথে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে সেটেলার বাঙালিরা বনরূপা এলাকা হতে হ্যাপি মোড়, দক্ষিণ কালিন্দীপুর, আঞ্চলিক পরিষদ ভবন ও বিশ্রামাগার, বিজন সরণী এলাকাব্যাপী জুম্মদের উপর, বসতিতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
+ There are no comments
Add yours