রাঙ্গামাটিতে শহীদ ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে পিসিপির স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

হিল ভয়েস, ৩ জুন ২০২৫, রাঙ্গামাটি: শহীদ ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)’র উদ্যোগে এক স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন পিসিপির সাবেক সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য কবিতা চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ম্যাগলিন চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক অনন্ত চাকমা, পিসিপি রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক জ্ঞান চাকমা। স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপির কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক রনেল চাকমা।

শহীদ ছাত্রনেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলা সদরে বাজার এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের কারণে ঘটনাস্থলে শহীন হন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রোয়াংছড়ি থানা শাখার সদস্য ছিলেন।

উল্লেখ্য ২০১০ সালের ৩ জুন সকাল ৮.১৫ ঘটিকায় আজকের এই দিনে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলা সদরে ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এর ২০/২৫ জনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ৪/৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে একযোগে বাজারে অবস্থিত জেএসএস, যুব সমিতি ও পিসিপির অফিস, কর্মীদের আবাসস্থল, সরকারি রেস্ট হাউজে ৩৫ মিনিট ব্যাপী গুলিবর্ষণ করে সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় পিছন দিক হতে পিঠে গুলি লেগে সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত পিসিপি নেতা আনন্দ তঞ্চঙ্গ্যা (২২), পীং- গণেশ তঞ্চঙ্গ্যা, সাং- ওয়াগ্গাপাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলা ঘটনাস্থলে নিহত হন। ঐ সময় তিনি বাজারের দোকানে নাস্তা করতে বের হয়েছিলেন। একই সময়ে কর্মীদের আবাসস্থলেও সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তখন সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে রান্নার কাজে ব্যস্ত জেএসএস সদস্য পলাশ চাকমা (৩২), পীং-সুমন চাকমা, সাং-হেডম্যান পাড়া, জীবতলী, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন।

উক্ত ঘটনার আগের দিন ২ জুন ২০১০ রাত আনুমানিক ৮/৯ ঘটিকার সময় সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা রাজস্থলীতে সাংগঠনিক কাজে সফররত জেএসএস ও পিসিপির নেতাকর্মীদের বাড়ি ও অফিসে গিয়ে ব্যাপক তল্লাসী চালায়। জেএসএস ও পিসিপি সদস্যদের কাছ থেকে আপত্তিকর কোনো কিছু না পাওয়ায় তারা চলে যায়। তখন রাতে সেনা ও পুলিশের তল্লাসী ও পরদিন ভোর হওয়ার পরপরই জেএসএস ও পিসিপির নিরস্ত্র সদস্যদের উপর ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবর্ষণ-এই দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এই হামলাস্থলের অত্যন্ত নিকটে রাজস্থলী থানা পুলিশের অবস্থান এবং মাত্র কয়েকগজ দূরত্বে রয়েছে সেনাক্যাম্প। অথচ সেনাবাহিনী বা পুলিশ কোনো সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারও করেনি।

জানা যায়, সেই সময় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলায় নেতৃত্ব দেয় কালাইয়া চাকমা চন্দন ওরফে ডায়মন্ড সাং-বন্দুকভাঙা ইউনিয়ন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, জীবন তঞ্চঙ্গ্যা, সাং- বালাঘাটা, বান্দরবান সদর উপজেলা, সুনীল তঞ্চঙ্গ্যা সাং- খাগড়াছড়ি পাড়া, রাজস্থলী, রতন তঞ্চঙ্গ্যা, সাং- ম্যাগাইন পাড়া, রাজস্থলী, চিনু মারমা, সাং- কাউখালী, ধর্মজয় তঞ্চঙ্গ্যা, সাং- ম্যাগাইন পাড়া, রাজস্থলী এবং রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা, রাজস্থলী প্রমুখ।

পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছাত্রনেতা জিকো চাকমা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours