মিজোরামে চাকমা কালো দিবস পালিত

হিল ভয়েস, ১৭ আগস্ট ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আজ (১৭ আগস্ট) ভারতের মিজোরাম রাজ্যের চাকমা অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (সিএডিসি) এর সদরদপ্তর কমলানগরে চাকমা কালো দিবস হিসেবে ঐতিহাসিক ১৭ আগস্ট পালিত হয়েছে।

চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (সিএনসিআই), মিজোরাম রাজ্য কমিটি এর উদ্যোগে এবং ইয়াং চাকমা এসোসিয়েশন (ওয়াইসিএ), চাকমা মহিলা সমিতি (সিএমএস) ও মিজোরাম চাকমা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (এমসিএসইউ) এর সহযোগিতায় মিজোরামের চাকমারা সিএডিসি’র সদরদপ্তর কমলানগরে এই দিবসটি পালন করেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন এনজিও কর্মী, সিএসডিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।

দিবসটি উপলক্ষে একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সকলের অংশগ্রহণে সিএনসিআই এর সঙ্গীত ‘আমি চাকমা জাত, জাদর রাগেই মান..’ পরিবেশন করার মধ্য দিয়েই সমাবেশে আলোচনা শুরু হয়। এইদিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সহ কমলানগরের সর্বস্তরের জনগণ কালোব্যাজ ধারণ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিএনসিআই, মিজোরাম রাজ্যের সভাপতি দাঙ্গু রসিক মোহন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক দাঙ্গু রূপায়ন চাকমা, সিএনসিআই, জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দাঙ্গু হেমন্ত লারমা, সিওয়াইসিএ এর সভাপতি দাঙ্গু ড. জ্যোতি বিকাশ চাকমা, এমসিএসইউ এর সভাপতি দাঙ্গু প্রবেশ চাকমা, সিএমএস, মিজোরাম এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দুমতি দেওয়ান, টিএসইউ’র কমলানগর সার্কেলের সভাপতি দাঙ্গু রাকেশ্বর তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ সম্পাদক দাঙ্গু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের রেডক্লিফ এর সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানান, যেখানে কমিশন এবং ভারত স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ এর শর্তের বিপরীতে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগের সময় অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার আইনগত ও শক্তিশালী ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নমনীয়তা অবলম্বন করায় তৎকালীন ভারতীয় নেতাদের দোষারোপ করেন নেতৃবৃন্দ।

নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ এর আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি শাসনবহির্ভূত এলাকা হয়েও পার্বত্য চট্টগ্রামকে কিভাবে বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের আওতার বাইরে রাখা হয়, সুতরাং এটা বাংলার অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। এই কারণেই বেঙ্গল আইনসভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। বক্তারা বলেন, বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তর বেআইনি এবং তাই আন্তর্জাতিক আদালতে এটা খুবই চ্যালেঞ্জযোগ্য।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৪ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কারণে চাকমাদের ঐতিহাসিক উচ্ছেদো কথা স্মরণ করেন, যখন হাজার হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি ডুবিয়ে দেয়া হয়, হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহীন হয়ে পড়ে। নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় ১৪,৮৮৮ চাকমা কয়েক বছর যন্ত্রণা ভোগের পর অরুণাচল প্রদেশে পুনর্বাসিত হন যারা বর্তমানে ৪০ হাজারের অধিক জনসংখ্যায় পরিণত হয়েছে, তারা এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং তাদের পূর্ণ অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে। আজও চাকমা জনগোষ্ঠী ধারাবাহিক অবিচার, হয়রানির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে এবং তাদের নিজেদের পিতৃপুরুষের ভূমিতে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সিএনসিআই, মিজোরাম রাজ্য কমিটি কর্তৃক প্রচারিত একটি প্রচারপত্রে বলা হয়, ভারতের চাকমারা তাদের সর্বোচ্চ সংগঠন সিএনসিআই এর মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ আগস্টকে তাদের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ২০১৬ সালে আসামের গৌহাটিতে মিজোরাম, ত্রিপুরা, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের চাকমাদের কর্তৃক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সিএনসিআই’র জাতীয় সম্মেলনে এই দিনটিকে পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, ভারতের চাকমারা এই দিনটিকে চাকমা জাতির ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ এবং কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। কেননা ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশের অধীনে ভারত বিভাগের সময় চাকমা সহ অন্যান্য আদিবাসী জাতি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তরের কথা ঘোষণা করা হয়। যেহেতু ভারত ভাগের মূলনীতি ছিল- মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ নিয়ে ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠিত হবে, অপরদিকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জাতিগোষ্ঠীসমূহ নিয়ে ভারত রাষ্ট্র হবে। তাই সেই সময় চাকমারা মনে করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতে অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামকে শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি সেই সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে ১৫ আগস্ট হতে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন যাবৎ ভারতের পতাকা উড্ডীন রাখেন। পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘোষণায় তারা হতাশ হন।

More From Author

+ There are no comments

Add yours