মানবাধিকার দিবসে কাপেং ফাউন্ডেশনের বিবৃতি: পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি

0
781

হিল ভয়েস, ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ঢাকা: আজ ১০ ডিসেম্বর ২০২০ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন।

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বিশ্বের সকল মানবাধিকার কর্মীদের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এই দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলা হয়, মানবাধিকার দিবস মানবিক ও সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে এবং বৈশ্বিক সংহতি, বিশ্ববাসীর মধ্যে আন্তঃসংযোগ ও বিশ্বে মানবিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এবছর এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা দৃশ্যপট দেখতে পেয়েছি। বিশ্বের আদিবাসীদের ন্যায় বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতিও সুখকর নয়। পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের জায়গা-জমি জোরপূর্বক বেদখলের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে আদিবাসী নারীরা বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে আদিবাসী নারীরা পোশাক কারখানা ও বিউটি পার্লারসহ নানা পেশা থেকে কর্মচ্যুত হয়েছেন। মহামারির ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত আদিবাসী খাদ্য সমস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার সাজেকে হামের প্রাদুর্ভাব এসময় ঐ এলাকার আদিবাসীদের জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এছাড়াও খাগড়াছড়ি সদরে এক আদিবাসী প্রতিবন্ধী নারীকে নিজ বাসায় দিবাগত রাতে ৮-৯ জন দুর্বত্ত কর্তৃক গণধর্ষণের ঘটনা থেকে আদিবাসী নারীদের বাস্তব চিত্রগুলো ফুটে ওঠে।’

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চিম্বুক-থানচি সড়কে ম্রো অধ্যুষিত কাপ্রু পাড়া, দলা পাড়া ও শোং নাম হুং এলাকায় বিতর্কিত সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেডের সাথে যৌথ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ‘ম্যারিয়ট হোটেলস এন্ড রিসোর্টস’ নামে একটি পাঁচ তারকা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগের ফলশ্রুতি হিসেবে এ স্থাপনার প্রয়োজনে পাহাড় কাটা শুরু হলে এবং ৮০০-১০০০ একর জমির এই বিশাল এলাকাজুড়ে এই পাঁচতারা হোটেল ও অ্যামিউজমেন্ট পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিলে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। পূর্বেও একই জেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ম্রো জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার একর জমি রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক জবরদখল করে ঐ জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের জায়গা-জমি বিভিন্ন কোম্পানী, রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আমলা ও ভূমিদস্যু কর্তৃক নামে-বেনামে বেদখল করা হচ্ছে। এটা স্পষ্টতই চরম মানবাধিকার লংঘন।’

বিবৃতিতে সমতলের আদিবাসীতের অবস্থা তুলে ধরে বলা হয়, ‘প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, উত্তরবঙ্গের সাহেবগঞ্জের বাগদা ফার্মের ঘটনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের উপর চরম মানবাধিকার লংঘনের বিচার রাষ্ট্র এখনো করতে পারে নি। পাশাপাশি, মধুপুর বনে ঘোষিত রিজার্ভ ফরেস্ট গেজেট বাতিলসহ ঐ এলাকার আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করা যায়নি। সিলেটে খাসিয়া পুঞ্জিতে ভূমিদস্যুদের হামলা ও মিথ্যামামলা থামানো যায়নি। এছাড়া আদিবাসী মানবাধিকার কর্মীদের উপর হামলা, ঘর-বাড়ী তল্লাসী, হুমকী, মিথ্যা মামলা, হয়রানি, নির্যাতন ইত্যাদি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা চলমান রয়েছে যা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বেমানান ও নিন্দনীয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়, আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সমুন্নত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে ভূমি কমিশন গঠন ও আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন এখন সময়ের দাবি। আর, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও অর্থবহ সমাধানের জন্য অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একান্তই জরুরী। আমরা আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’