ভূমি কমিশনের সভা: সরকার এখনও বিধিমালা চূড়ান্ত করেনি

0
777

হিল ভয়েস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, রাঙ্গামাটি:  পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সকাল ১১টায় রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় বিগত সভার সিদ্ধান্ত অনুমোদন, কমিশনের কাজের অগ্রগতি, আভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু ব্যক্তিগণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। বস্তুত এই পর্যন্ত ভূমি কমিশনের কাজে কোন অগ্রগতি হয়নি। কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন, স্টাফ নিয়োগ, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় দুটি সাব-অফিস স্থাপন, কমিশনের জন্য তহবিল বরাদ্দ ইত্যাদি বিষয়সমূহ পূর্বের মতই অসম্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উপদেষ্টা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সাথে গত ১৫ মে ২০১৯ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার নেতৃত্ব এক প্রতিনিধিদলের এবং গত ৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও আইন বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক গৌতম কুমার চাকমার নেতৃত্বে আরেক প্রতিনিধিদলের অনুষ্ঠিত সভা অন্যতম। বিশেষ করে ১৫ মে অনুষ্ঠিত সভায় ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন; চুক্তির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগ চলমান মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা; চুক্তিকে লঙ্ঘন করে ১৯৯৬ সালের কার্যবিধিমালা অনুসারে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের এসআরও নম্বর গ্রহণ ও ভেটিং গ্রহণ বাধ্যবাধকতা আরোপ না করা; আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণয়ন ও গেজেট নোটিফিকেশনের প্রক্রিয়া যথাযথ বাস্তবায়ন করা; চুক্তি মোতাবেক প্রণীত আইন অনুসারে পুলিশ (স্থানীয়) এবং আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সকল অফিস, জনবল ও আর্থিক বিষয় পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা; নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অফিস ও প্রতিষ্ঠানসহ সকল বিষয় ও কার্যাবলী পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা; বিদ্যমান আইন অনুসারে পার্বত্য জেলার সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা; ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় সংস্থা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলার সকল বিষয় পার্বত্য মন্ত্রণালয় ইহার কার্যপ্রণালী বিধি মোতাবেক সমন্বয় করবে মর্মে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা ইত্যাদি ৮টি বিষয়ের উপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু তার পরেও এসব বিষয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর আজ ২২ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আজ দীর্ঘ ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির উপরে উল্লেখিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে কোন দৃশ্যমান ও সদিচ্ছাপূর্ণ উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সময় বিশেষে সভা অনুষ্ঠিত হলেও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তবলী বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরী। তাই আর বিলম্ব না করে দেশের সামগ্রিক স্বার্থে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ পূর্বক রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও সদিচ্ছাপূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে সরকারকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।