ভাইবোনছড়ায় সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক ত্রিপুরা আদিবাসী শিক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার, থানায় মামলা দায়ের

হিল ভয়েস, ১৭ জুলাই ২০২৫, খাগড়াছড়ি: গত ২৭ জুন ২০২৫ রোজ: শুক্রবার খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোনছড়া এলাকায় এক ত্রিপুরা (১৪) আদিবাসী শিক্ষার্থী রথ যাত্রা পূজা পালন শেষে গভীর রাত হওয়াতে তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে গেলে ৬ জন সেটেলার বাঙালি যুবক ভুক্তভোগীকে অনুসরণ করে রাত আনুমানিক ৯.৩০টার দিকে জোরপূর্বক ঐ বাড়িতে প্রবেশ করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণকারীদের পরিচয়: ১) মোঃ মনির ইসলাম (৩৫), পিতা-লাল মিয়া, ২) মোঃ আরমান ইসলাম (৩২), পিতা-মৃত মোঃ আব্দুল, ৩) মোঃ সাদ্দাম হোসেন (২৯), পিতা-মৃত মোখলেছুর রহমান, ৪) মোঃ সোহেল ইসলাম (২৩), পিতা- নবীন মিস্ত্রী, ৫) মোঃ ইমাম ইসলাম (২৫), পিতা-মোঃ আলম ইসলাম ৬) এনায়েদ হোসেন (২৫), পিতা- রুহুল আমিন, সর্বসাং-ভাইবোনছড়া বাজার এলাকায়, থানা-খাগড়াছড়ি সদর, জেলা-খাগড়াছড়ি।

উক্ত ঘটনায় ভিক্তিমের পিতা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ১৫৪ অনুসারে, মামলা নম্বর: ৪, ৯(৩) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০; তৎসহ 342 / 323 / 506 The Penal Code, 1860; অপরাধের শিরোনাম: গণধর্ষণ সংক্রান্ত এক মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগীর পিতা উল্লেখ করেন, গত ২৭/০৬/২০২৫ ইং তারিখ দুপুর অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় আমার মেয়ে (১৪) রথযাত্রা পূজা উৎসব পালন করার জন্য খাগড়াছড়ি সদর থানাধীন ভাইবোনছড়া বাজার সংলগ্ন জগন্নাথ মন্দিরে যায়। পূজা অনুষ্ঠান শেষে আমার মেয়ে জগন্নাথ মন্দির হইতে বাহির হইয়া তাহার চাচা অর্থাৎ আমার ছোট চাচাত ভাই সহ খাগড়াছড়ি সদর থানাধীন ভাইবোনছড়া উন্নয়ন বোর্ড বাসভবন এর পাশে ভাড়া বাসায় যাওয়ার পথে আসামীরা আমার মেয়েকে অনুসরণ করে। পরবর্তীতে ২৭/০৬/২০১৫ ইং তারিখ রাত অনুমানিক ০৯.৩০ ঘটিকার সময় ধর্ষকরা আমার চাচাত ভাইয়ের ভাড়া বাসায় জোর পূর্বক প্রবেশ করে আমার মেয়ে ও চাচাত ভাইকে প্রাণে হত্যা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। অতঃপর আমার চাচাত ভাইকে এক রুমে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখে এবং আমার মেয়েকে অপর একটি রুমে নিয়া যায়। ধর্ষকরা পার্শ্ববর্তী রুমের ভাড়াটিয়াদের রুমের দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে দেয়, যাহাতে কোন লোক রুমের ভিতর হইতে বাহির হতে না পারে। একপর্যায়ে ধর্ষকরা আমার মেয়েকে প্রাণ নাশের হুমকী দিয়ে জোর পূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে গুরুতর আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। এতে আমার মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে পরের দিন অর্থাৎ গত ২৮/০৬/২০২৫ইং তারিখ সকাল অনুমানিক ০৭.৩০ ঘটিকার সময় ভুক্তভোগীর জ্ঞান ফিরে আসলে সে নিজ বাড়ীতে চলে যায়। একপর্যায়ে উক্ত ঘটনায় সে দারুন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বিগত ১২/০৭/২০২৫খ্রিঃ তারিখ সন্ধ্যা সময়ে নিজেকে প্রাণে শেষ করার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য খাগাড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে ভুক্তভোগী এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী এই ঘটনার সত্যতা তার পরিবারের কাছে জানান।

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ঘটনায় তাদের মেয়ে লজ্জায় এবং ধর্ষকদের হুমকির ভয়ে কাউকে বিষয়টি বলতে পারে নি। পরে এই ঘটনায় সে মানসিক ভাবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে নিজেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

এই ঘটনায় পুলিশ চার জন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে জানা যায়। গ্রেপ্তাররা হলেন: ১) মোঃ আরমান ইসলাম (৩২), ২) ইমন হোসেন (২৫) ৩) এনায়েদ হোসেন (৩৫) ৪) মো: সাদ্দাম হোসেন (৩২)। ধর্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রদলের রাজনীতি সাথে জড়িত।

More From Author

+ There are no comments

Add yours