হিল ভয়েস, ২৮ আগস্ট ২০২৫, রাঙ্গামাটি: আজ (২৮ আগস্ট) ভোর আনুমানিক ৪ ঘটিকার সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন কেঙ্গেরাছড়ি ইউনিয়নের হিজেছড়ি নামক গ্রামে এক জুম্ম গ্রামবাসীকে গুলি করে আহত অবস্থায় আটক এবং তার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আহত ব্যক্তির ভাইকেও বেদম প্রহার করে জখম করা হয়েছে।
গুলিতে আহত ব্যক্তির নাম অন্তর চাকমা (৩২), পীং-নিগিরা কুমার চাকমা, মাতা-রেনু মুখী চাকমা। অন্তর চাকমার হাতে ও পায়ে গুলি করা হয়। অন্তর চাকমা পেশায় একজন মাছচাষী বলে গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ আনুমানিক ভোর ৪ ঘটিকার সময়ে রাঙ্গামাটির জীবতলি সেনা ক্যাম্প (১৭-বিআইআর) এর একটি সেনাদল অন্তর চাকমার বাসায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ঘর তল্লাশি নামে বাড়ির বেড়া ভাঙচুর, শোকেস, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, খাট, সোলার প্যানেল, ব্যাটারি ইত্যাদি গৃহস্থালি সামগ্রী ভাঙচুর করতে থাকে। এক পর্যায়ে অন্তর চাকমা প্রতিবাদ ও বাধা প্রদান করলে, সেনা সদস্যরা তাকে হাতে ও পায়ে গুলি করে। সেই সাথে কয়েকজন সেনা সদস্য অন্তর চাকমার স্ত্রীকে গলা টিপে ধরে এবং শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায়, এমনকি তাকে খাটেও শোয়ানো হয় এবং ধর্ষণের প্রচেষ্টা চালানো হয়।
পরে অন্তর চাকমার স্ত্রী উর্মি চাকমা চিৎকার করতে চাইলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গণধর্ষণের হুমকি এবং তাদের ৫ বছরের মেয়েকেও ধর্ষণ করার হুমকি প্রদান করে। উর্মি চাকমা তিন বছর আগে কিডনির পাথর অপারেশন করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঐ ক্ষত স্থানে জোরপূর্বক আঘাত করে বলেও জানা যায়।
পরে সেনাবাহিনীর দলটি অন্তর চাকমার বাড়ির পাশ্ববর্তী তার বাবার বাড়িতে গিয়েও তল্লাশি করে এবং তার ছোট ভাই রিটন চাকমা (১৮), রতন চাকমা এবং রতন চাকমার ছোট ভাইকেও মারধর করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা রিটন চাকমাকে বুট দিয়ে মুখে লাঠি মারে বলেও জানা যায়।
সেনাবাহিনী অন্তর চাকমাকে আহত অবস্থায় প্রথমে হাজাছড়া সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে গাছকাটা ছড়া সেনা ক্যাম্পে চিকিৎসা দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় প্রেরণ করা হয় বলে খবর পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি এবং বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু হয়। এসব অভিযানে পার্বত্য চুক্তির পূর্বের সময়ের মতই সেনাবাহিনী জুম্মদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ, বাড়িঘর তল্লাসি, মারধর, আটক, মিথ্যা মামলা দায়ের, হুমকি-ধামকি নানা ধরনের দমনমূলক কার্যক্রম জোরদার করার খবর পাওয়া যায়। গত ২৬ আগস্ট সেনাবাহিনী অভিযানের সময় জুরাছড়ি উপজেলায় ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে নির্যাতন চালায়।