হিল ভয়েস, ২০ জুন ২০২৫, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার আলীকদম সেনা জোনের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল বান্দরবান সদরের টংকাবতী ইউনিয়ন সহ লামা ও আলীকদম থেকে মোট ৯ নিরীহ জুম্মকে ধরে নিয়ে গিয়ে আলীকদম সেনা জোনে আটক করে রেখেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটককৃতদের মধ্যে একজন প্রায় সত্তর বয়সী বৃদ্ধ রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
আটককৃতদের মধ্যে টংকাবতী ইউনিয়নের চাকমা পুনর্বাসন পাড়া গ্রাম থেকে ৫ জন এবং লামা ও আলীকদম থেকে ৪ জন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আজ ২০ জুন, ভোর সকালে আলীকদম সেনা জোনের তথাকথিত এক সেনা অভিযানে এই নিরীহ ব্যক্তিদের আটক করা হয়। আটকের পর সেনাবাহিনী উক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রথমে আজ ভোর সকাল ৪:২০টার দিকে আলীকদম সেনা জোনের সেনাবাহিনীর একটি দল টংকাবতী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চাকমা পুনর্বাসন পাড়া ও ত্রিপুরা পুনর্বাসন পাড়া গ্রামে গিয়ে ১৭ জন পুরুষ জুম্ম গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সেনাদলটি ১৭ জনের মধ্যে ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পথিমধ্যে ছেড়ে দেয় এবং বাকী ৫ জনকে আলীকদম সেনা জোনে নিয়ে যায়।
আলীকদম সেনা জোনে আটক ৫ গ্রামবাসী হলেন- (১) কল্প রঞ্জন চাকমা (৪৫), পিতা: ধন চন্দ্র চাকমা; (২) জ্যোতি বিকাশ চাকমা (৩৮), পিতা: ধন চন্দ্র চাকমা; (৩) শান্তি চাকমা (৩৭), পিতা: সুন্দর মনি চাকমা; (৪) তরুণীসেন চাকমা ওরফে সাথোয়াই (৫০), পিতা: কেগেরা চাকমা ও (৫) আনন্দ মোহন চাকমা (৬৭), পিতা: তুক্ষে চাকমা, তিনিই গ্রামের বর্তমান কার্বারি।
উক্ত ৫ জন ছাড়াও সেনাবাহিনী আলীকদম ও লামা থেকে আরও ৪ জন জুম্ম গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে গিয়ে আলীকদম সেনা জোনে আটক রেখেছে বলে জানা গেছে। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উক্ত ৪ ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। বর্তমানে সেনাবাহিনী তাদের সকলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এজন্য সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পুরনো ও অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র সহ আটককৃতদের দিয়ে ক্যামেরায় ছবি তুলেছে বলেও জানা গেছে।
অপরদিকে, হয়রানির পর ছাড়া পাওয়া চাকমা পুনর্বাসন পাড়ার ১২ গ্রামবাসী হলেন- (১) বিজয় হংস চাকমা (৫৬), পিতা-রামধন চাকমা; (২) প্রেম রঞ্জন চাকমা (৪৩), পিতা-সুন্দর মনি চাকমা; (৩) রতন কেতু চাকমা (৪৩), পিতা-উপেন্দ্র চাকমা; (৪) ইমন চাকমা (২২), পিতা-ধনকুমার চাকমা; (৫) রূপায়ন চাকমা (১৫), পিতা-তরুণীসেন চাকমা; (৬) শান্তিময় চাকমা (২৯), পিতা-ফকিরা চাকমা; (৭) বরুণ চাকমা (৩৮), পিতা-দিবাকর চাকমা; (৮) চন্দ্র চাকমা (৪২), পিতা-অক্ষজয় চাকমা; (৯) সিদ্ধার্থ চাকমা (২৮), পিতা-অক্ষজয় চাকমা; (১০) অমরজিত চাকমা (৩৩), পিতা-লাম্বা হুলো চাকমা; (১১) শান্তি ত্রিপুরা (৪০), পিতা-জ্যোতি ত্রিপুরা ও (১২) জয় ত্রিপুরা (২২), পিতা-জহন ত্রিপুরা।
সেনাবাহিনী কেন এইসব নিরীহ গ্রামবাসীদের আটক করেছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে, একটি সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে আলীকদম থেকে কতিপয় বাঙালি ব্যবসায়ী চাকমা পুনর্বাসন পাড়া গ্রামে গিয়ে ব্রিকফিল্ড কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা পেতে চাচ্ছিলেন। এজন্য বাঙালি ব্যবসায়ীরা জুম্ম গ্রামবাসীদের নানাভাবে চাপও দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে অজ্ঞাতনামা কিছু ব্যক্তি ওই বাঙালি ব্যবসায়ীদের ব্রিকফিল্ড স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে।
সূত্রটির অভিমত, ওই বাঙালি ব্যবসায়ীদের উস্কানিতেই সেনাবাহিনী তথাকথিত সেনা অভিযান চালিয়ে উক্ত নিরীহ গ্রামবাসীদের আটক করেছে।