বান্দরবানে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটককৃত ২ পিসিপি নেতাকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করা হল

0
478
ছবি: বামে টি এম প্রু মারমা ও ডানে থুইনুমং মারমা

হিল ভয়েস, ২৫ মে ২০২২, বান্দরবান: সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের চেমিডলু পাড়া এলাকা থেকে আটককৃত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর দুই নেতাকে অবশেষে মিথ্যা মামলায় জড়িত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনী ও পুলিশ উক্ত ছাত্রনেতাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ও মিথ্যাভাবে প্রায় ৪ মাস পূর্বে সংঘটিত এক সশস্ত্র সংঘাতে এক সেনা কর্মকর্তার নিহত হওয়ার ঘটনার মামলায় সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত আসামী হিসেবে জড়িত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী দুই ছাত্রনেতা হলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থুইমং প্রু মারমা (টি এম প্রু মারমা) ও কেন্দ্রীয় সদস্য থুইনুমং মারমা। টি এম প্রু মারমার বাড়ি থানচি’র হেডম্যান পাড়া এবং থুইনুমং মারমার বাড়ি রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে বলে জানা গেছে।

গত ২১ মে ২০২২ বান্দরবানের রুমা থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এনামুল হক ভূঁইয়া সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় জড়িত করে উক্ত ছাত্রনেতাদের জেল হাজতে আটক রাখার জন্য বান্দরবানের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন জানান। বর্তমানে ছাত্রনেতাদ্বয় বান্দরবান জেলে আটক রয়েছেন বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য যে, সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলার এজাহারে উক্ত ছাত্রনেতাদের নাম না থাকলেও পুলিশের উক্ত আবেদনে ছাত্রনেতাদের ‘সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত আসামী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, পুলিশের ঐ আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ‘আসামীদ্বয়ের স্বভাব চরিত্র ভাল নয়’ এবং ‘আসামীদ্বয় দীর্ঘদিন যাবৎ বান্দরবান জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অবস্থান করে পাহাড়ী সন্ত্রাসী জেএসএস (মূল) এর সাথে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত আছে মর্মে তথ্যাদি পাওয়া যাচ্ছে।’

উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের একাধিক অধিকারকর্মী জানান, সেনাবাহিনী ও পুলিশের এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। বস্তুত সেনাবাহিনী তাদের দ্বারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লালন-পালন এবং স্থানীয় জুম্মদের ভূমি বেদখল, দমন-পীড়নসহ মানবাধিকার লংঘনের কর্মকান্ডকে আড়াল করার চেষ্টার অংশ হিসেবে এসব নাটক সাজিয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রের এক আত্মীয় বলেন, ‘ছাত্ররা পিসিপিতে কাজ করছে, এটাতো অন্যায় ও অবৈধ কিছু নয়। বরং সেনাবাহিনী যে নিরপরাধ ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলায় জড়িত করেছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং নিন্দনীয় কাজ।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা যদি সন্ত্রাসী হত এবং মামলার আসামী হত তারা কখনো সেনা ক্যাম্পের সামনে দিয়ে প্রকাশ্যে এভাবে রাঙ্গামাটিতে যেতেন না।’

উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ২০২২, দুপুর আনুমানিক ২:০০ টার দিকে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে বান্দরবান সদরের সুয়ালক ইউনিয়ন এলাকার চেমিডলু পাড়া সেনাক্যাম্পের সামনে থেকে সেনাসদস্যরা উক্ত দুই ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করে। ছাত্রনেতারা এসময় রাঙ্গামাটি শহরে অনুষ্ঠিতব্য পিসিপি’র ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২৬তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মোটর সাইকেল যোগে রাঙ্গামাটিতে যাচ্ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ দিবাগত রাত ১০:৩০ টার দিকে রুমা উপজেলার বথি ত্রিপুরা পাড়া এলাকায় কথিত সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। ঐ ঘটনায় রাইংখিয়াং লেক সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান ও প্রতিপক্ষের ২ জন নিহত হন বলে জানা যায়। এছাড়াও একজন সেনা সদস্য গুরুতরভাবে আহত হন।

উক্ত ঘটনার পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাইংখিয়াং লেক সেনা ক্যাম্পের ল্যান্স কর্পোরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন রুমা থানায় জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ ২২ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার নং ০৩, তারিখ ১০/০২/২০২২, পেনাল কোডের ১৮৬/ ৩৩২/ ৩৩৩/ ৩৫৩/ ৩০৭/ ৩০২/ ১০৯/ ৩৪ ধারা। উক্ত মামলার জিআর নম্বর হচ্ছে ৪৬/২০২২।