বান্দরবানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দখলে শত একরের পাহাড় ভূমি

0
205
ছবি: অবকাশযাপনের জন্য বেনজীর আহমেদের বাগান বাড়ি

হিল ভয়েস, ৩ জুন ২০২৪, বান্দরবান: বান্দরবানের সুয়ালক ও লামার ডুলুছড়িতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে শত একর জমি। স্থানীয়দের কাছে এসপির জায়গা নামে পরিচিত এসব জমিতে রয়েছে মাছের প্রজেক্ট, গরুর খামার, ফলের বাগান ও রেস্টরুমসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি।

অভিযোগ রয়েছে এসব জমিতে একসময় অসহায় পরিবারের বসবাস থাকলেও নামমাত্র মূল্যে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। জানা যায়, এসব জমি কিনতে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা।

ছবি: বান্দরবানে সুয়ালকে বেনজীর আহমেদের গরু খামার

ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে ক্রয় করা সম্পত্তির পাশাপাশি দখল করে নিয়েছেন অনেক দরিদ্র পরিবারের জমিও। এসব জমিতে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বাগান, মাছের ঘের, গরুর খামারসহ আলিশান বাগান বাড়ি।

স্থানীয়রা জানায়, ২০১৬ সালে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগে ও ৩ নম্বর শিটে ২৫ একর জায়গা কিনে নেন বান্দরবান পৌর এলাকার মধ্যমপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে শাহজাহানের কাছ থেকে। তার জমিতে যাতায়াতের জন্য সরকারিভাবে করা হয়েছে রাস্তা এবং পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগও। আর অবকাশ যাপনের জন্য তৈরী করছন একটি দোতলা বাড়িও। এতে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও (এসি)।

শুধু তাই নয়, জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীর কিনেছেন ২৫ একর করে ৪টি প্লটের ১০০ একর লিজ করা পাহাড়ি ভূমি।

ছবি: লামার ডুলুছড়িতে বেনজীর আহমেদের পরিবারের নামে পাহাড় ভূমি

স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া পার্বত্য এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার বিধান না থাকায় শুধুমাত্র নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করেছেন এসব জায়গা। রেজিস্ট্রি না করায় প্রশাসনের কাছে নেই সেসব জায়গার কোনো দলিল। আর নিজে দেখাশোনা করতে না পারায় জমি ক্রয় করার পর মংওয়াইচিং নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় এসব জায়গা দেখাশোনা করার জন্য। তার মাধ্যমে সেখানে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বাগান। স্থানীয়দের অভিযোগ, নামমাত্র মূল্যে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বেনজীর দখলে নিয়েছেন এসব জায়গা।

সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি টংগাঝিরি এলাকার বাসিন্দা অজিত ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা ছোট ছিলাম। অভাবের কারণে বাবা আমাদের ৫ একর জায়গা বেনজীর নামে এক পুলিশ অফিসারের কাছে বিক্রি করে দেয়। শুধু আমাদের পরিবার না, অনেক পরিবারের জায়গা পুলিশ অফিসার নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে নিয়ে নেয়। আবার অনেকেই বাধ্য হয়েছে জায়গা বিক্রি করে দিতে।’

টংগাঝিরি এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, এখানে প্রায় ৬৫-৭০টির মতো ত্রিপুরা পরিবার ছিল। এখন ২৫-৩০ পরিবার আছে। বেনজীর নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে জায়গা দখল করে বাগান করেছেন।

সরই ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীরের জায়গা দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ইব্রাহিম বলেন, ‘এক পুলিশ অফিসারের জায়গা শুনেছি, কিন্তু ওনার সঙ্গে আমার কখনও দেখা বা যোগাযোগ হয় নাই। আমাকে বান্দরবানের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মংওয়াইচিং নিয়োগ দিয়েছেন। উনি আমাকে মাসে মাসে এসে বেতন দিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, কাগজপত্রে ৫৫ একর জায়গা থাকলেও আমি দেখাশোনা করি ২৫ একর।’

কেয়ারটেকার ইব্রাহিমের স্ত্রী বলেন, ‘আমি আগে বাগানে থাকতাম না। কিছুদিন হলো বাগানে এসেছি, এটা কার জায়গা আমি কিছুই জানি না, তবে এখন শুনতেছি বেনজীর নামে এক পুলিশ অফিসারের জায়গা।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক লোকজন আসছে, জায়গা দেখতে। অনেকে এসে ভিডিও করছে। তবে কী কারণে কেন আসছে লোকজন সে বিষয়ে কিছুই জানি না।’

এ বিষয়ে সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় বেনজীরের নামে অনেক সম্পত্তি আছে। আমার ইউনিয়নেও বেনজীরের সম্পত্তি আছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।