হিল ভয়েস, ১৬ মে ২০২৫, বান্দরবান: সম্প্রতি বান্দরবান জেলার বান্দরবান উপজেলা সদর এলাকায় সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন মগ পার্টি খ্যাত মারমা ন্যাশনাল পার্টির সশস্ত্র সদস্যদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মগ পার্টির সদস্যদের তৎপরতায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকালও (১৫ মে) বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ও রাজভিলা এলাকায় মাহিন্দ্র ও মোটর সাইকেল যোগে প্রকাশ্য দিবালোকে মগ পার্টির সশস্ত্র সদস্যদের আনাগোনা ও টহল দিতে দেখা যায়। এসময় রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীরকে বান্দরবান সদরের কুহালং ইউনিয়নের ডলুপাড়া সেনা ক্যাম্পে যাতায়াত করতে দেখা যায়। রাজস্থলীতে আওয়ামীলীগের নেতা জাহাঙ্গীর মগ পার্টির অন্যতম পৃষ্টপোষক বলে জানা যায়। সেনাবাহিনী ও মগ পার্টির মধ্যে এই জাহাঙ্গীর মধ্যস্থতা করে থাকেন বলেও জানা যায়।
একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বান্দরবানে সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরের কিছু ব্যক্তি বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারই ফলশ্রুতিতে সম্প্রতি মগ পার্টির সশস্ত্র তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া আরও জানা যায়, গত ৫ মে, সকাল ৯টার দিকে উদালবনিয়া রমতিয়া সড়কে কাজ করা উথোয়াই মারমা (৫৫) নামে এক মারমা শ্রমিককে ধরে নিয়ে যায় মগ পার্টির সদস্যরা। পরে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই শ্রমিককে ছেড়ে দেয় মগ পার্টির সদস্যরা। উক্ত ঘটনার ৩দিন পর ৮ মে, মগ পার্টির ১২ জনের একটি সশস্ত্র দল বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলায় টহল দিতে দেখা যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেনাবাহিনীর মদদ ও নির্দেশনা রয়েছে বলেই সেনা অভিযানের মধ্যেও মগ পার্টির সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় এভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়।
মগ পার্টির সদস্যদের এই সশস্ত্র তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বান্দরবান এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ২০২৪, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজস্থলীর বাঙ্গাল হালিয়া এলাকায় মগ পার্টির সশস্ত্র আস্তানা গুড়িয়ে দেয় স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি জনতা। এরপর জনতার ধাওয়া খেয়ে অস্ত্রসহ পালিয়ে যায় মগ পার্টির সদস্যরা। তাদের মধ্যে কিছু বাঙ্গাল হালিয়া সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় এবং কিছু সদস্য ডংনালা এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও হঠাৎ জানা যায় বাঙ্গাল হালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমাকে অপহরণ করে এবং এক পর্যায়ে ৭০ লক্ষ টাকায় ছেড়ে দেয়া হয় আদোমং চেয়ারম্যানকে।
এ পর্যন্ত বৌদ্ধ ভিক্ষু, জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকদের হত্যা সহ অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ তাদের সন্ত্রাসের শিকার হয়। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, মগ পার্টির বহু অন্যায় কার্যকলাপের বিরোধীতা করলে এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে উল্টো অত্যাচারের শিকার হতে হয়।
দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং জনসংহতি সমিতিকে আঘাত করার জন্য মগ পার্টিকে সংগঠিত করে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা বান্দরবান ৩০০ আসনের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা এবং রাঙ্গামাটি আসনের এমপি দীপংকর তালুকদার ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। তখন থেকে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট নিয়ে চাঁদাবাজি এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যদের হত্যা ও হুমকিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে মগ পার্টি।