বান্দরবানের টংকাবতীতে অবাধে বৃক্ষ নিধন ও কাঠ পাচারের অভিযোগ

0
754
ছবিতে কাঠ পাচারে ব্যবহৃত হওয়া হাতি

হিল ভয়েস, ৫ অক্টোবর ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী এলাকায় একটি কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক অবাধে শত বছরের বৃক্ষ নিধন ও বান্দরবানের বাইরে কাঠ পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় নিয়মিত গাছ কেটে দুর্গম বন থেকে হাতি দিয়ে এসব গাছ নিয়ে আসা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বনবিভাগ ও প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

এলাকাবাসীদের সূত্র জানিয়েছে, বহিরাগত প্রভাবশালী একটি কাঠ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক পাহাড়ের বাইরের আবরণটা ঠিক রেখে ভিতরে বনের গাছ কেটে সাবাড় করা হলেও বনবিভাগ অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছে। এসব গাছের কাঠ পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া হয়ে চট্টগ্রামে।

সরেজমিনে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৩০৯নং দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজা, ৩১১নং হরিণঝিরি মৌজা, ৩১২নং পানছড়ি মৌজার বিভিন্ন স্থান থেকে দিনরাত নিয়মিত প্রাকৃতিক বনের কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে আবদুর রহিম কোম্পানি নামে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তারা বন বিভাগের কোন আইন মানে না। তবে ওই কাঠ পাচারকারী চক্রের দাবি, এসব গাছ কোনও বনায়নের নয়। টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানার গাছ কাটছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা রুইঅং কার্বারী জানান, টংকাবতী ও হরিণঝিরি দুটি মৌজা এক সময় প্রাকৃতিক বনে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কিছু মানুষের সহায়তায় বহিরাগত কাঠ পাচারকারী আবদুর রহিম কোম্পানির লোকজন অব্যাহতভাবে প্রাকৃতিক বনের গাছ কর্তন করে নিয়ে যাচ্ছে। এই চোরাকারবারীরা বনের ভেতর কাঠুরিয়া দিয়ে গাছ কেটে পরবর্তী সময়ে ৪টি হাতি দিয়ে গাছগুলো বনের বাইরে নিয়ে আসে। বড় গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ইট ভাটার জন্য কচি কচি চারাগাছও সাবাড় করছে এই চক্রটি।

৩০৯নং দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পাইরিং ম্রো বলেন, তার মৌজায় মাঝে মাঝে কাঠ পরিবহণে কয়েকটি হাতি দেখা যায়। এসব হাতি দ্বারা আবদুর রহিম কোম্পানি নামে লোহাগাড়ার এক ব্যবসায়ী চক্র গাছ নিয়ে যান। জানা গেছে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলে কাঠ চোরা কারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা বনের ভিতরে শ্রমিক পাঠিয়ে পাহাড়ের গাছগুলো কাটে এবং হাতি দ্বারা বড় বড় গাছগুলো বহন করে টংকাবতী এলাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিভিন্ন আকারে করাত দিয়ে কেটে ট্রাকযোগে পাচার করা হয়।

স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শেষে বনের ভিতর থেকে কাঠ পরিবহণের সুবিধার্থে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। আর ডিসেম্বরের মাঝামঝি থেকে পুরো শুষ্ক মৌসুমে ট্রাকে ভরে কাঠগুলো রঙিমুখ-নাফারটিলা-চরম্বা সড়ক হয়ে লোহাগাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টংকাবতী এলাকায় রাস্তার পাশে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন কিছু শ্রমিক। এসময় তাদের সঙ্গে কথা হলে, তারা এই প্রতিবেদককে জানান, তারা লোহাগাড়ার জনৈক আবদুর রহিম কোম্পানির গাছগুলো কেটে ট্রাকে তুলে দেন। আরেকটি গ্রুপ বনের ভিতর থেকে এই গাছগুলো পাঠান। কাঠের বৈধতার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: ফরিদ মিঞা সাংবাদিকদের জানান, আইন অনুযায়ী যেকোনো ভূমি থেকে গাছ কাটতে হলে অনুমোদন নিতে হবে। অন্যথায় তা অবৈধ।

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাইনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন- ‘আমি মাত্র নতুন এই রেঞ্জে যোগদান করেছি, সমতল আর পাহাড়ের বনায়নের আইনকানুন এক নয়। টংকাবতী এলাকায় সরকারি কোন বনায়ন নেই।’ তবে ওইদিকে কাঠ পাচার হয় বলে তিনি শুনেছেন। বিষয়টি প্রয়োজনে সরেজমিন দেখে আসবেন বলে জানান।