হিল ভয়েস, ১৬ জুলাই ২০২৫, রাঙ্গামাটি: গতকাল (১৫ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নে বাঙ্গালহালিয়া বাজার প্রাঙ্গণে মগপার্টির সদস্য ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডা ও পরে সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে মগ পার্টির সদস্যদের হাতে মার খেয়ে সেনাবাহিনীর দুই সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আহত সেনাসদস্যরা হলেন- (১) মোঃ নাসির উদ্দিন, পদবী: সিপাহী, ৫ ই বেঙ্গল, বান্দরবান সদর জোন ও (২) মোঃ আজমত হোসেন, জিটুআই সহকারী কর্মকর্তা (ওয়ারেন্ট অফিসার পদমর্যাদা)।
বাঙ্গালহালিয়া বাজার প্রাঙ্গণে মগ পার্টির চাঁদা কালেকশন পয়েন্টে মগ পার্টির সদস্য ও সেনা সদস্যদের মধ্যে এই মারামারি হয় বলে জানা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদা সংগ্রহ ও চাঁদা ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এই ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালের দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৯নং বান্দরবান ব্রিগেড কার্যালয় থেকে ওয়ারেন্ট অফিসার মো: আজমত হোসেন এবং বান্দরবান সদর সেনা জোন ৫ ই বেঙ্গল থেকে সিপাহী মো: নাসির উদ্দিন এক তদন্তের কাজে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়াতে যান। এক পর্যায়ে তারা সকাল ১১টার দিকে বাঙ্গালহালিয়া বাজার প্রাঙ্গণে মগ পার্টির চাঁদা কালেকশন পয়েন্টে গিয়ে উপস্থিত হন।
এক পর্যায়ে মগ পার্টির চাঁদা কালেকশন পয়েন্টে অবস্থান করা মগ পার্টির কয়েকজন কর্মীর সাথে উক্ত সেনা সদস্যরা তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সেখানে মারামারি লেগে যায়। এতে মগপার্টির সদস্যরা দুই সেনাসদস্যকে মারধর করলে সিপাহী মো: নাসির উদ্দিন আহত অবস্থায় পালিয়ে যান এবং পরে হাসপাতালে ভর্তি হন। অন্যদিকে ওয়ারেন্ট অফিসার মো: আজমত হোসেনকে মগপার্টির সদস্যরা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং পরে সেখান থেকে বাঙ্গালহালিয়ার সেনাক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে দুই সেনাসদস্যকে মারধরের খবর পেয়ে বান্দরবান সেনা জোন থেকে মেজর সাব্বির এর নেতৃত্বে চারটি গাড়ি যোগে সেনাবাহিনীর একটি দল বাঙ্গালহালিয়াতে যায়। এক পর্যায়ে বান্দরবান থেকে সেনাদল আসার খবর পেয়ে মগপার্টির সদস্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এর পরের ঘটনা আর জানা যায়নি।
বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় মগ পার্টির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সেটেলার বাঙালি যুবক প্রান্ত ঘোষ রনি এবং বান্দরবান ব্রিগেড এর জিটুআই মেজর মোঃ পারভেজ এর মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়।
এর পূর্বে (গত ১ এপ্রিল) হিল ভয়েসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্থলীতে শফিকুল ইসলাম, সাইদুল, বেলাল, প্রান্ত ঘোষ রনিসহ অন্তত ১২ হতে ১৫ জন চিহ্নিত সেটেলার বাঙালি বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে মগ পার্টির প্রতিনিধি ও চাঁদা সংগ্রাহক হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা সংগ্রহ ও বিভিন্ন ব্যক্তিকে মারধর করছে এবং অনেককে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং জনসংহতি সমিতিকে আঘাত করার জন্য মগ পার্টিকে জন্ম দিয়েছিল তৎকালীন সরকারি দলের নেতা বান্দরবান ৩০০ আসনের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা এবং রাঙ্গামাটি আসনের এমপি দীপংকর তালুকদার ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। তখন থেকে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট নিয়ে চাঁদাবাজি এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যসহ সাধারণ জনগণকে হত্যা ও হুমকিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে মগ পার্টি।