বাঘাইছড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক ১০ জুম্মের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং ১ টি ঘরে অগ্নিসংযোগ

হিল ভয়েস, ২১ অক্টোবর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩০ নং সারোয়াতুলি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত বড় মাহিল্যা নামক একটি জুম্ম অধ্যুষিত গ্রামে গতকাল ২০ অক্টোবর ২০২৫ রাত আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকার সময়ে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় সেটেলার বাঙালিরা অন্তত ১০ টি জুম্মের ঘর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অন্য আরেকটি জুম্মের ঘর লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ চালিয়ে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানা যায়।

ছবি: সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর খানেক আগে বাঘাইছড়ি উপজেলা এবং লংগদু উপজেলার সীমান্তবর্তী জায়গা বড় মাহিল্যাতে লংগদুর গুলশাখালি থেকে দুইজন বহিরাগত সেটেলার বাঙালি গোপনে এক জুম্মের কাছ থেকে জায়গা ক্রয় করে।

কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি বড় মাহিল্যাতে জুম্মদের কাছে জানাজানি হওয়ার পর যিনি জায়গাটি বিক্রি করেছেন সেই জুম্মটি পুনরায় টাকাগুলো উক্ত দুই সেটেলারদেরকে বুঝিয়ে দিতে চাইলে তারা টাকাগুলো ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানান।

তবে এর কিছুদিন পর কোন এক অজ্ঞাত কারণে ঐ দুই সেটেলাররা টাকাগুলো ফেরত নিতে সম্মত হন। ফলে জুম্মটি কোন দেরী না করে টাকাগুলো তাদেরকে ফেরত দিয়ে চলে আসেন। এবং ঘটনাটি সেখানেই মীমাংসা হয়ে যায়।

অন্যদিকে এ ঘটনার কয়েকমাস পর আশ্চর্যজনক ভাবে আবারও উক্ত সেটেলাররা দলবল মিলে জুম্মটির বিক্রি করা সেই জায়গাটিতে জঙ্গল পরিস্কার করতে আসলে বড় মাহিল্যার আশেপাশের জুম্মরা সেটি দেখতে পান এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মিলে সেটি বাঁধা দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে, ঘটনাটি দ্রুত জানাজানি হয়ে যায়। পরে উভয়পক্ষের জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী ও বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের লোকজন সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ছবি: সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট

তবে সেদিন উক্ত ঘটনার কোন সুরাহা হয়নি বলে জানা যায়।

পরে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সেদিন সিদ্ধান্ত হয়, জায়গাটি যেহেতু বিতর্কিত, তাই আপাতত ঘটনা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত উক্ত জায়গাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি কেউ কোনপ্রকারের ঘরবাড়ি তুলতে পারবে না বা বাগান সৃজন করতে পারবে না।

কিন্তু গতকাল জায়গার মালিক নিজের বাগান ঘুরতে গিয়ে দেখতে পান ঐ জায়গায় একাধিক সেটেলার বাঙালি অন্যায়ভাবে আগে থেকে ঘর তৈরি করে ফেলেছে এবং তারা বিভিন্ন প্রকারের বাগান সৃজনের জন্য জঙ্গল কেটে ফেলছে।

ছবি: সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট

তাই গতকাল ২০ অক্টোবর ২০২৫ ইং রাত আনুমানিক ৮:০০ ঘটিকার দিকে জুম্মদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে জুম্মদের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করা দুই সেটেলারের বাড়িতে ভাংচুর চালায় এবং বাড়িতে থাকা সেটেলার বাঙালিদের সেদিন হওয়া সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, তাদের ঘরগুলো উক্ত জায়গা থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে নেওয়ার কথা বলে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে আসে।

এরপর ঐ ঘটনার পাল্টা হিসেবে আনুমানিক রাত ১১.৩০ ঘটিকার সময় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সদলবলে সেটেলার বাঙালিরা বড় মাহিল্যার জুম্মদের গ্রামে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। তবে সেসময় জুম্মরা কেউ গ্রামে না থাকলেও তাদের ঘরে থাকা জিনিসপত্র যেমন, ধান-চাল, কাপড়চোপড়, মেশিন ও গবাদিপশু সহ বিভিন্ন প্রকারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লুটপাট করে নিয়ে যায় সেটেলার বাঙালিরা। আর যাওয়ার সময় অনেকের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় ও জগদীশ চাকমা, পিতা: বগরা চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা নামের এক জুম্মের ঘরে অগ্নিসংযোগ চালিয়ে তাঁর ঘরটি সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

ছবি: সেটেলার বাঙালি কর্তৃক জুম্মের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ভাষ্যনুযায়ী সেটেলার বাঙালিদের এই হামলায় জুম্মাদের আনুমানিক ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নিম্নে বড় মাল্যে সেটেলারদের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর নামের তালিকা তুলে ধরা হলো:

১। জগদীশ চাকমা, পিতা: বগরা চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা ।
২ । যুদ্ধমনি চাকমা, পিতা: নীল মোহন চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা ।
৩ । সুমতি রঞ্জন চাকমা, পিতা: বানেশ্বর চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।
৪। বড়পেদা চাকমা, পিতা: চন্দ্র সেন চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।
৫। উষাময় চাকমা, পিতা: বিজয় চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।
৬। সবার বিজয় চাকমা, পিতা: প্রীতি কুমার চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা ।
৭। নীল রতন চাকমা, পিতা: বসু কুমার চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।
৮ । সুশান্ত চাকমা, পিতা: অজানা, সাং: বড় মাহিল্যা।
৯। নিপন চাকমা, পিতা: বিজয় চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।
১০। নিহার বিন্দু চাকমা, পিতা: বৃত্তি কুমার চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।
১১। রিন্টু চাকমা, পিতাঃ বিজয় চাকমা, সাং: বড় মাহিল্যা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours