বাঘাইছড়িতে মহান এম এন লারমা’র ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ১০ নভেম্বর ২০২৫, বাঘাইছড়ি: আজ ১০ নভেম্বর ২০২৫ সকাল ৯.০০ ঘটিকায় বাঘাইছড়ির সারোয়াতুলি ইউনিয়নের শিজক কলেজ সংলগ্ন নব নির্মিত এম এন লারমার ভাষ্কর্য পাদদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাঘাইছড়ি থানা কমিটির উদ্যোগে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, এম এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য
চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সভাপতি মিসেস লক্ষীমালা চাকমা এবং ৩০ নং সারোয়াতুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভূপতি রঞ্জন চাকমা প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।

স্মরণসভায় ৮.৩০ ঘটিকায় কালো ব্যাচ ধারণ, পুষ্পমাল্য অর্পণ ৯.০০ ঘটিকায় এবং শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপি শিজক কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক জগৎ আলো চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন শিজক কলেজ শাখার সদস্য সুমনা চাকমা।

সভায় উষাতন তালুকদার বলেন, এম এন লারমাকে যারা হত্যা করেছিল তারা ছিল সংগ্রামবিমুখ, তারা বসে বসে খেতে চেয়েছিল, আন্দোলনের ফসল ভোগ করতে চেয়েছিল, অন্যদেশ থেকে আমাদেরকে সহযোগিতা করে অধিকার ফিরিয়ে এনে দেবে এমন পরনির্ভরশীল চিন্তাভাবনা ছিল তাদের। তাই সেই মোহে, লোভে এম এন লারমাকে তারা হত্যা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। প্রতি পদে পদে তাদের সেই কর্মের নির্মম ফল ভোগ করতে হয়েছে, এখনো তাদের উত্তরসূরি প্রজন্মকে সেই ফল ভোগ করতে হচ্ছে।

তিনি ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, এম এন লারমার পরবর্তী বংশধর, ভবিষ্যৎ আপনারা। আমরা যারা বয়জ্যোষ্ঠ হয়েছি, গতানুগতিক নিয়মের ধারায় আমরা চলে যাবো। থাকবেন আপনারা। এখানে বাস করবেন আপনারা। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতায় ‘কি করতে হবে’ সেটা আপনাদেরকে ভাবতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই পার্টি আপনার, এই সংগ্রাম আপনার, এই আন্দোলন যেটা বাকী রয়েছে সেটাকে সম্পন্ন করা দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের। শুধু যে এ বছর আমরা বেঁচে থাকলে দেখে যাবো সেটা নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত অধিকার অর্জিত না হবে, এই নতুন প্রজন্ম তারাই লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে নিয়ে যাবে। যতক্ষণ না আমাদের অধিকার অর্জিত না হয়।

বিজয় কেতন চাকমা বলেন, আজকের এই স্মরণ সভায় ছাত্র ও যুব সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ এইটা প্রমাণ করে যে ছাত্র ও যুব সমাজ তথা জুম্ম জনগণ আমাদের প্রিয় নেতা, জাতীয় নেতার প্রতি, জনসংহতি সমিতির প্রতি এখনো অগাধ ভালোবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা রেখেছে। আপনাদের এই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস আমাদের জুম্ম জাতিকে একদিন অধিকার ফিরিয়ে এনে দেবে, মুক্তি এনে দেবে।

তিনি বলেন,আজ নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকার হারা, সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিকামী মানুষের শক্তি সঞ্চয় করার দিন। নির্ভয় হবার দিন। আমৃত্যু জাতীয় মুক্তির লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প নেয়ার দিন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসের বইয়ের বাইরে যদি আমরা বই না পড়ি তাহলে আমাদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে না। এম এন লারমা ছোটকাল থেকে শুধুমাত্র বইয়ের মধ্যেই ডুবে থাকতেন। তোমাদেরও সেভাবে ডুবে থাকতে হবে। ক্লাসের বই শুধুমাত্র ক্লাসটা পাড় করে দিবে। আইএ, বিএ পাশ করে দিবে। বড় ডিগ্রীধারী বানাবে। একজন বিসিএস কর্মকর্তা, সরকারী বড় আমলা বানাবে। কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞানী, এম এন লারমা করে দিবে না। এম এন লারমার মত চিন্তাভাবনা করার শিক্ষা দেবে না।

লক্ষীমালা চাকমা বলেন, বাংলাদেশের লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে এম এন লারমাই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি আমাদের জুম্ম জাতি নিয়ে ভেবেছিলেন,চিন্তা করেছিলেন, জুম্ম জাতির মুক্তির কথা, অধিকারের কথা ভেবেছিলেন।

ভূপতি রঞ্জন চাকমা বলেন, মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা যদি না জন্মাতেন তাহলে এই জুম্ম জাতি পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকতেন কিনা আমি সন্দেহ প্রকাশ করি। আজকে তিনি জন্মেছেন বলে জুম্ম জাত এখনো মাথা উচু করে পৃথিবীর বুক টিকে আছে। টিকে থাকার স্বপ্ন দেখে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি চিবরন চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী পুলক জ্যোতি চাকমা।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা শাখার সদস্য শ্রী জ্যোতিষ্মান চাকমা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours