বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

হিল ভয়েস, ২ ডিসেম্বর ২০২৫, রাঙ্গামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলায় আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘২রা ডিসেম্বর উদযাপন কমিটি বাঘাইছড়ির’ উদ্যোগে এক গণসমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাবেক প্রত্যাগত সদস্য ত্রিদীপ চাকমা(দীপ বাবু), পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কার্বারী প্রতিনিধি সমাপ্তি দেওয়ান, চেয়ারম্যান প্রতিনিধি বিল্টু চাকমা, হেডম্যান প্রতিনিধি এন্ড্রো খীসা প্রমুখ।

সভায় জুয়েল চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে আমরা বলতে চাই, জুম্ম জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার উপর যদি প্রতারণা হয়, যে জুম্ম জনগণের ২৪ বছরের রক্ত পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিয়ে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তির উপর যদি আঘাত করা হয়, তাহলে এই জুম্ম জনগণ তার প্রতিশোধ রক্ত দেয়া-নেয়ার মধ্যে দিয়ে তার সমাধান করবে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক যে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, ঠিক তার পরক্ষণে ২০২২ সালে বাংলাদেশ আর্মড পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে একটা নির্দেশনা আসে, যে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে এপিবিএন ক্যাম্প বসবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের একটি পক্ষ চায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ তাঁদের অধিকার না পাক। তারা চায় আমরা এখানে দাস হয়ে থাকি। তারা চায় আমরা এখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়, নয়তো আমরা এই পার্বত্য চট্টগ্রাম, আমাদের এই মাটি-জন্মভূমি ফেলে অন্যত্র চলে যায়। এইটা তারা ভোগ করবে। এজন্য সেই অংশটি এই চুক্তি বাস্তবায়ন চায়না বলে ভিতরে ভিতরে চুক্তি বিরোধী একটি অংশকে সে দাঁড় করিয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা মনে করি পার্টি এখনো পর্যন্ত তার নীতি-আদর্শ এবং তার সঠিক নেতৃত্বের জায়গায় রয়েছে। এবং চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আমরা এখনো পর্যন্ত সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে বৃহত্তর আন্দোলন, সেটা শুরু করার।

ত্রিদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আমাদের আশা ছিল এভাবে দুঃখ বেদনা নিয়ে আর আমাদের মিছিল-সমাবেশ করতে হবে না, কিন্তু আজ চুক্তিটি ১দিন, ২দিন, একমাস, দুই মাস যেতে যেতে এভাবে ২৮ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আজকে ২৮ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এভাবে মিছিল-সমাবেশ করতে হচ্ছে। আমাদের জীবনে এর থেকে দুঃখের আর শোকের আর কিছু হতে পারে না।

তিনি বলেন, আজকে চুক্তি স্বাক্ষরের ২৮ বছরে এসেও আমরা দেখি সরকারগুলো সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাচ্ছে। আজকে চুক্তি বাস্তবায়ন চাইলে আমাদের সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, রাষ্ট্রদ্রোহী ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো সন্ত্রাসী হতে চাই না, আমাদেরকে বানানো হচ্ছে সন্ত্রাসী। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা নবীন, তারা উদ্যোগী হোন। নবীন-প্রবীনের সমাবেশের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করবো।

বিল্টু চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সরকার শুভবুদ্ধি উদয় করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক দশমাংশ অঞ্চল হলেও, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে যখন আগুন লাগবে সেটি বাংলাদেশের জন্য কখনো শুভকর হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আগুন বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, আমরা জুম্ম জনগণ বিশ্বাস করে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা বিশ্বাস করে কোন অপরাধী হইনি, কিন্তু বিশ্বাস যারা ভঙ্গ করে তারাই প্রকৃত অপরাধী। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ এখনো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে লড়াইয়ের জন্য সংগ্রাম ছাড়েনি। সংগ্রাম ত্যাগ করেনি। শু

তিনি আরও বলেন, যদি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হয়, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের পথকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আবারও সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে যা যা করা দরকার তার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এবং এই আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকে থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামের উদীয়মান তরুণ সমাজ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মন্টু বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ২রা ডিসেম্বর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ৩৩ নং মারিশ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপন চাকমা।

গণসমাবেশ ও আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সদস্য জ্যোতিষ্মান চাকমা এবং গণসমাবেশের শুরুতে গণসংগীত পরিবেশনা করেন কাজলং মুরল্যে শিল্পীগোষ্ঠী ও বাঘাইছড়ি সাংস্কৃতিক একাডেমি।

More From Author