বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলায় অ্যামনেস্টির উদ্বেগ প্রকাশ

0
472

হিল ভয়েস, ২০ অক্টোবর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গত ১৮ অক্টোবর ২০২১ সোমবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হিন্দু উৎসব দুর্গাপূজার সময় এবং পরে হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবার ও মন্দিরগুলিতে আক্রমণের জবাবে এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেছেন:
“দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম উৎসব চলাকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের, তাদের বাড়িঘর, মন্দির এবং পূজা প্যান্ডেলের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার খবর দেশে সংখ্যালঘু বিরোধী ক্রমবর্ধমান মনোভাবের লক্ষণ। হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই ধরনের বারবার হামলা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, এবং কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয় ধ্বংস করা করা ইত্যাদি প্রমাণ করেযে, রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।”

সাদ হাম্মাদি বলেন, “ধর্মীয় স্পর্শকাতরতাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন। সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানে সরকারের অবিলম্বে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।”

সাদ হাম্মাদি আরো বলেন, “আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচার এবং ভুক্তভোগীদের জন্য কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং স্বচ্ছভাবে ঘটনার তদন্ত করতে হবে এবং যারা সহিংসতা এবং ভাঙচুরের জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের বিচারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

অপরদিকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন সরকার। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন, “ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার।” “বিশ্বব্যাপী প্রত্যেক ব্যক্তির, তাদের ধর্মীয় পরিচিতি বা বিশ্বাস নির্বিশেষে, গুরুত্বপূর্ণ উৎসবগুলো উদযাপনের জন্য নিরাপত্তা পাওয়া এবং সমর্থন লাভ করা জরুরী।”

সোমবার, শত শত মানুষ ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে, সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, রয়টার্স জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ধারণ করে যাতে পুলিশকে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। “দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে,” একটি ব্যানারে বলা হয়েছে।

রবিবার, জনতা দেশের রংপুর জেলার তিনটি গ্রামে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের কমপক্ষে ২৫ টি বাড়ি এবং দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ অন্তত ৪২ জনকে আটক করেছে।

উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর হঠাৎ করে কুমিল্লা শহরের নানুয়ারদীঘি এলাকার একটি পূজামণ্ডপের প্রতিমায় পবিত্র কোরআন রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে কুমিল্লা, বান্দরবান, হবিগঞ্জ, খুলনা, চাঁদপুর, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর প্রভৃতি জেলায় পূজা মন্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর, হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় ৩ জন হিন্দুসহ ৬ জন লোক নিহত হয়।